<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তা কাটিয়ে উঠতে সব রাষ্ট্র হিমশিম খাচ্ছে; যাতে শুরু হয়েছে নানামুখী অর্থনৈতিক সংকট, যা বিশ্বকে অবাক করে নতুন সংকটে ফেলে দিয়েছে, যা থেকে রেহাই পায়নি পরাশক্তির দেশগুলো। আমাদের দেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, যার জন্য বিভিন্ন জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাচ্ছে দিন দিন। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে অনেক গুণ, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি মানুষকে কঠিন বিপদে ফেলছে। গরিব মানুষ খুবই নাজেহাল অবস্থায় তাদের জীবন অতিবাহিত করছে। শুধু গরিব নয়, মধ্যবিত্তরাও এই সংকটে রয়েছে। পারে না বলতে, কিন্তু সহ্য করতে হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাজারে গেলেও মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা যায়। কারণ সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বগতিতে দরিদ্র দেশগুলোতে গত কয়েক মাসে কয়েক কোটি মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে, যদিও প্রতিটি দেশের সরকার কয়েক বছর ধরে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার পরও অনেক মানুষের উপার্জন ক্ষমতা কমে গেছে। দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। শ্রমের বিনিময়ে যে পরিমাণ আয় বেড়েছে, তার চেয়ে খরচ বেড়েছে বেশি। তাই মানুষ বিপদে পড়ছে। সংবাদপত্রে দেখতে পায় একজন মানুষ মাসে ৪০ বা ৫০ হাজার টাকা আয় করেও মাসের ব্যয় বহন করতে পারছে না। সাধারণ এবং গরিব মানুষের অস্বস্তির জীবন পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে মানুষ যখন দিশাহারা, তখনই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসছে নতুন করে এই বাড়তি ভ্যাটের বোঝা, যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে না। বাস্তবে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ পড়বে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপে ওষুধ, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টিসহ ৬৫ বা তার বেশি পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ওষুধের ওপর ভ্যাট বাড়ালে মানুষ কী খেয়ে তাদের চিকিৎসা করাবে? অতীতে ওষুধের দাম বেড়েছে। এখন যদি আবার বাড়ে, তাহলে গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের কী অবস্থা হবে? একবার ভেবে দেখছেন কি? যদি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে হয়, তাহলে অন্য উপায় খুঁজে বের করা জরুরি। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভ্যাট না বাড়িয়ে কর আদায় করতে হবে বেশি করে, যাতে কেউ কর ফাঁকি না দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাড়তি ভ্যাট কার্যকর করা সাধারণ মানুষের জন্য অনেকটা মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘি ঢালার মতো হবে। মূল্যস্ফীতি নির্ধারণে প্রায় ৭০০ নিত্যপণ্যের একটি বাস্কেট আছে। এই বাস্কেটে যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলো ওঠানামা করলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ সম্প্রতি যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাট আরোপ করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ, তাতে অবশ্যই ওই বাস্কেটের পণ্যও রয়েছে। তাই সংজ্ঞা অনুসারে বর্ধিত ভ্যাটের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি বলাই যেতে পারে, যার খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সেটি এখন আরো বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূরক শুল্ক আরো ৩ শতাংশ বাড়ালে, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সব মিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬.৩ টাকা। ফলে এখন গ্রাহক ১০০ টাকায় ব্যবহার করতে পারবেন মূলত মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা। এভাবে অন্য জিনিসের দাম বাড়বে, যা আমাদের ক্রেতাদের দিতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="ভোক্তার ওপর পড়বে বাড়তি ভ্যাটের চাপ" height="240" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11. january/14-01-2025/Untitled-1.jpg" style="float:left" width="321" />ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাট হার নিয়ে আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কারণ ভ্যাটমুক্ত টার্নওভারের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লাখ থেকে কমিয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। ফলে ৩০ লাখ টাকার বেশি বার্ষিক টার্নওভারের ব্যবসাগুলো এখন ভ্যাট-করের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ তাদের খরচ বাড়বে, সেই খরচ স্বাভাবিকভাবে ক্রেতাদের ওপর পড়বে। কারণ মালিকরা সাধারণত এই অতিরিক্ত খরচ তাঁদের নিজেদের ঘাড়ে না নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তাই আমাদের এই খরচ বহন করতে হবে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভ্যাট খরচের ওপর ভিত্তি করে দাম সমন্বয় করা হবে। তবে এই দাম বাড়ার ফলে ভোক্তাদের, বিশেষ করে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট অবশ্যই বাড়বে। কারণ ঘুরেফিরে এর চাপ এসে ভোক্তার ওপরই পড়বে। তাই এই দাম বাড়ানো কতটুকু যৌক্তিক, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা চলছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের জীবনে নেমে আসছে অন্ধকার সময়। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জ্বালানি সংকট সাধারণ মানুষের জীবনে এক কালো মেঘ হিসেবে হানা দিয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অনেক দিন ধরে চলছে। আমাদের আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। বিদেশি ফল ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করা বন্ধ করতে হবে। দেশীয় ফল খাওয়ার বিষয়ে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববাজারে দাম কমলে আমাদের দেশে বাজারে আগের দামে জিনিসপত্র বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু অন্যান্য দ্রব্যের বাড়তি দাম বহনে পিষ্ট হচ্ছে প্রান্তিক, শ্রমজীবী ও সীমিত আয়ের মানুষ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য এক অশনিসংকেত। এই মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ভবিষ্যতে আরো বড় বিপদ হতে পারে। সে জন্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সঠিকভাবে অর্থ বাজার মনিটর করতে হবে। মূল্যস্ফীতিতে সীমিত আয়ের মানুষের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা ও লবণের দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকে, সেই ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.৮৭ শতাংশ হয়েছে। খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে চাল ও সবজির দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ, যা সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলছে। তাই মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করে কিভাবে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সরকারকে দেশের হতদরিদ্র মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতে ভর্তুকি আরো বাড়াতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকার অনেক পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে সেই অনুসারে বিক্রি হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারকে বাজারে তদারকি বাড়াতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ বাজারে কঠোর তদারকির মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, সেই অনুসারে মানুষের আয় বা মজুরি বাড়েনি। তাই ভোগান্তি বেশি হচ্ছে সাধারণ বা নিম্ন আয়ের মানুষের। এই ভোগান্তি কমাতে না পারলে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভ্যাট বৃদ্ধি করায় তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সমগ্র বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে। মানুষ এখন সব কিছুতে সংকোচননীতি অবলম্বন করছে। পোশাক কেনাও কমিয়ে দিয়েছে। দিন দিন পোশাকের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। শ্রমিকের বেতন বাড়ছে, কিন্তু ক্রেতারা এক পয়সাও দাম বাড়াচ্ছে না। ফলে উদ্যোক্তাদের চাপ বাড়ছে। অর্থাৎ এই পোশাক খাতকে রক্ষায় সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেকেই মনে করছে, নানামুখী আন্তর্জাতিক সংকট এবং যুদ্ধের বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চাকরিজীবীরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর গরিব মানুষ যে কিভাবে জীবন অতিবাহিত করছে, তা বলার প্রয়োজন রাখে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে গরিবের মুখে হাসি ফোটানো কঠিন হয়ে পড়বে। যেভাবে হোক সরকারকে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এবং রাজস্ব আয় বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে গরিবের মুখে হাসি ফোটাতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ</span></span></span></span></p>