<p>প্রভুত্ব, প্রতিপালন ও ইবাদতের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ অনন্য ও একচ্ছত্র। সুরা নাসে অত্যন্ত সুন্দর, সাবলীল ও সংক্ষিপ্তভাবে প্রসঙ্গটি ফুটে উঠেছে ‘রাব্বিন নাস (মানুষের পালনকর্তা), মালিকিন নাস (মানুষের অধিপতি), ইলাহিন নাস (মানুষের মাবুদ)’।</p> <p>এ জন্যই ইসলাম মানবকল্যাণ, বিশ্বশান্তির সব তত্ত্ব ও পদক্ষেপকে কোরআন-সুন্নাহর মানদণ্ডে মূল্যায়ন ও অনুমোদন দেয় অথবা নিষিদ্ধ ও প্রত্যাখ্যান করে। এ দৃষ্টিভঙ্গিতেই ইসলামে বৃহত্তর মানবিক বিষয় এবং তত্ত্ব ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে।যেমন—</p> <p><strong>দারিদ্র্য বিমোচন</strong></p> <p>বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ইসলাম সুদবিহীন ও জাকাতভিত্তিক অর্থনীতির দিকনির্দেশনা দেয়। অন্যদিকে বৈরী পরিবেশ, দারিদ্র্য, বেকারত্ব মানুষের কাম্যস্থিতি ও উন্নয়নের পথে অন্যতম অন্তরায়। জাকাত ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো, সমাজের অনগ্রসর মানুষের সামর্থ্যকে ‘take off level’ -এ পৌঁছে দেওয়া, যাতে তার ন্যূনতম মৌলিক মানবিক প্রয়োজন পূরণ হয়। পবিত্র কোরআনে জাকাতকে ‘বঞ্চিত ও মুখাপেক্ষীর অধিকার’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।</p> <p>হাদিসের ভাষায়—‘এটা হচ্ছে ধনীদের কাছ থেকে গ্রহণ করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা।’ যথাযথ জাকাত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। জাকাত ব্যবস্থায় দরিদ্রজনকে (ফকির, মিসকিন, নওমুসলিম, মুসাফির, জাকাত আদায়কারী কর্মচারী, ঋণগ্রস্ত, ক্রীতদাস, মুজাহিদ) সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতের আলোকে আটটি সূচকে শনাক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচনের পথ দেখানো হয়েছে। জাকাত একটি ‘সামাজিক বীমা’ এবং শোষণ-দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের বাহন। ২.৫ শতাংশ জাকাত দানে ৫ শতাংশ হারে দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব।</p> <p><strong>বেকারত্ব দূরীকরণ</strong></p> <p>বেকারত্ব নিরসনে ইসলাম আত্মকর্মসংস্থানের শিক্ষা দেয়। ‘নবীর শিক্ষা’ ভিক্ষুকের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তর করা। আত্মকর্মসংস্থান ও বেকারত্ব নিরসনে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা—‘নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) সন্ধান করো।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)</p> <p>সমাজ থেকে বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে  রাসুল (সা.) বলেন, ‘দারিদ্র্য কখনো কখনো কুফরে পৌঁছে দেয়।’ (বায়হাকি)</p> <p>রাসুল (সা.) দারিদ্র্য থেকে পানাহ চেয়ে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দারিদ্র্য, অভাব ও লাঞ্ছনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ)</p> <p><strong>দূষণমুক্ত পরিবেশ</strong></p> <p>সব প্রাণী ও বৃক্ষ-তরুলতার জন্য বিশুদ্ধ ও নির্মল বায়ুর বিকল্প নেই। দূষণমুক্ত বায়ু মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও নিদর্শন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে... বাতাসের পরিবর্তনে ও আসমান-জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে নিয়োজিত মেঘমালায় রয়েছে বিবেকবান সম্প্রদায়ের জন্য বিপুল নিদর্শন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৬৪)</p> <p>বিশ্বায়নের এ যুগে কার্বন নিঃসরণ গুরুতর মানবিক বিপর্যয়ের  হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। অথচ প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘...ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের অন্যতম শাখা।’ (মুসলিম)</p> <p>হাদিসটি পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পথঘাটের বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন, গাড়ির কালো ধোঁয়া, সিগারেটের অবশিষ্টাংশের কারণে সহজেই বায়ুদূষণ ঘটে। মানুষকে ক্ষতিকর বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে প্রিয় নবীর (সা.) মোনাজাত, ‘হে আল্লাহ, এই বাতাসের মধ্যে যা কিছু কল্যাণকর, এতে যে মঙ্গল নিহিত আছে এবং যতটুকু কল্যাণ করার জন্য সে আদিষ্ট হয়েছে, ততটুকু কল্যাণ ও মঙ্গল আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করি। আর এই বাতাসের মধ্যে যা কিছু অনিষ্টকর, তাতে যে অমঙ্গল লুক্কায়িত আছে এবং যতটুকু অনিষ্ট সাধনের জন্য সে আদিষ্ট হয়েছে, তা থেকে আমরা তোমার কাছে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)</p> <p>কিছু স্থূল বিশ্বাসে মৃত মানবদেহ পুড়িয়ে ফেলায় পানি ও বায়ু নষ্ট হয়, জ্বালানির অপচয় ঘটে এবং বৃহত্তর পরিবেশচক্র বিপন্ন-বিপর্যস্ততায় গড়ায়। ইসলামে সৃষ্টির সেরা মানুষের শেষ বিদায়টি হয় অত্যন্ত পবিত্র, নমণীয় ও সম্মানজনক সামষ্টিক ইবাদতের আদর্শে। তাওহিদবাদী চেতনায় শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক জানাজা, কবর-দাফন।</p> <p>বস্তুত তাওহিদ বা একত্ববাদে মহান আল্লাহকে তাঁর সুমহান জাত (সত্তা) সর্বসৌন্দর্যমণ্ডিত নাম ও সিফাতে (গুণাবলি, বৈশিষ্ট্যে) এবং তাঁর অধিকার, কর্ম ও কর্তৃত্বে এক, অদ্বিতীয় ও একক ঘোষণা করা এবং এসব ক্ষেত্রে নিজের কথা, কাজ ও আন্তরিক বিশ্বাসের মাধ্যমে মহান আল্লাহর একত্ব সমুন্নত রাখার শিক্ষা আছে। মানবকল্যাণে তাওহিদবাদীর বিকল্প নেই।</p>