ভাষাশহীদ স্মরণে উন্মোচন করা হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বাংলা ভাষাভিত্তিক তিনটি সফটওয়্যার বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ‘উচ্চারণ’, বাংলা স্পিচ টু টেক্সট ‘কথা’ এবং বাংলা ওসিআর ‘বর্ণ’সহ নতুন একটি বাংলা ফন্ট ‘পূর্ণ’। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) মিলনায়তনে এসব উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একই সঙ্গে ভাষাশহীদদের স্মরণে বিটিসিএলের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ‘জিপন’-এর বিশেষ সাশ্রয়ী প্যাকেজ এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ই-সিমের উদ্বোধনও করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন লোকসানী সব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক পর্যায়ে নিতে চাই।
’ বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ‘উচ্চারণ’ হলো একটি টিটিএস সফটওয়্যার। ডকুমেন্ট, ওয়েবসাইট, স্ক্রিনের উইন্ডোতে থাকা টেক্সট পড়ে শোনাতে পারে এটি। একই সঙ্গে তা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য উপযোগী হয়ে পড়ে শোনাতে পারে। read.bangla.gov.bd ঠিকানা থেকে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে ‘কথা’ বাংলা ভয়েস টাইপিং সফটওয়্যার। মুখের কথার মাধ্যমে কম্পিউটারে লেখার প্রযুক্তি হলো ভয়েস টাইপিং বা স্পিচ টু টেক্সট। এটি প্রমিত স্পষ্ট ও নীরব পরিবেশে উচ্চারিত বাংলা কথাকে লেখায় রূপান্তর করতে পারে। ব্রাউজার থেকে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে voice.bangla.gov.bd ঠিকানা লিখে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া তৈরি করা কিউবোর্ড অ্যানড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমেও এই ভয়েস টাইপিং সার্ভিস ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলা ওসিআরের নাম হলো ‘বর্ণ’। ওসিআরের সাহায্যে কম্পিউটারের অপরিবর্তনযোগ্য ডকুমেন্টের লেখাকে সম্পাদনাযোগ্য টেক্সটে রূপান্তর করা যায়। বর্ণ ওসিআরের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি কম্পিউটার কম্পোজ ডকুমেন্ট, বিশেষ করে সরকারি পত্র, বিজ্ঞপ্তি ওসিআর করতে পারে।
এর মাধ্যমে টেবিল, কমন ইংরেজি শব্দ ও প্রতিষ্ঠানের নাম, সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোগো শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া পুরনো টাইপরাইটার ডকুমেন্ট ও লেটারপ্রেস বইও ওসিআর করতে পারে অ্যাপ্লিকেশনটি। ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে যেকোনো ব্রাউজার থেকে ocr.bangla.gov.bd ঠিকানা লিখে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা যায়।
‘পূর্ণ’ ফন্ট একটি বাংলা ইউনিকোড ফন্ট, যা ফন্টসংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার পর ডিজাইন ও ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা প্রকাশনায় প্রয়োজনীয় সব টাইপোগ্রাফিক ফিচার। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার ছাড়াও এই ফন্ট মুদ্রণকাজে এবং ওয়েবে ব্যবহার উপযোগী। ফন্টে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, বিরামচিহ্ন, ইংরেজি বর্ণ, গাণিতিক চিহ্ন, অসমিয়া স্বতন্ত্র সেট, ইন্ডিক-বাংলা সমর্থনকারী গ্লিফ, হোমোগ্রাফ, জনপ্রিয় আইকন/লোগোসহ প্রয়োজনীয় সব গ্লিফ রয়েছে। ফন্টটি https://bangla.gov.bd/fonts/ ঠিকানা থেকে ডাউনলোড করা যাবে। এই ফন্ট ও সফটওয়্যারগুলো তৈরি করেছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার বলেন, ‘বাংলা ভাষা যেন অন্য কোনো ভাষার আগ্রাসনে হারিয়ে না যায় সে জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশের ৪০টি নৃগোষ্ঠীর ভাষা নিয়েও কাজ করছে বিসিসি।’