<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৯ সালে যখন ব্রিকস গড়ে তোলা হয়, তখনই দেশগুলোর অন্যতম লক্ষ্য ছিল ডলারের বিকল্প একটি মুদ্রাব্যবস্থা তৈরি করা। দিনে দিনে সেই ধারণা পোক্ত হয়েছে, ব্রিকসে যুক্ত হওয়া দেশের সংখ্যাও বাড়ছে; যারা ডলারের বিকল্প স্থানীয় মুদ্রায় এরই মধ্যে লেনদেন শুরু করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি রাশিয়ার কাজানে শেষ হওয়া ব্রিকস সম্মেলনে ১০ সদস্য দেশসহ মোট ৩৫টি দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। এতে ডলারের আধিপত্য কমাতে ব্রিকসের সদস্যদের মধ্যে নতুন একটি ব্রিকস মুদ্রা তৈরির কথাবার্তা হয়েছে। সেই সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন বাড়ানো এবং শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সম্মেলনে ডলারের বিকল্প একটি ব্লকচেইনভিত্তিক লেনদেন মাধ্যম গড়ে তোলারও কথা বলা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার বিকল্প তৈরির আহবান জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার মতে, বিকল্প অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা চালু হলে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ডলারকে ব্যবহার করার সুযোগ পাবে না যুক্তরাষ্ট্র। পুতিন জানান, ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যারা এটি করে ভুল করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাশিয়া ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক লেনদেনের ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রুবল ও ইউয়ান ব্যবহৃত হয় বলে জানান তিনি। বেলজিয়ামভিত্তিক সুইফট পেমেন্ট সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে লেনদেনের আলাদা অবকাঠামো তৈরিতে কাজ করছে রাশিয়া। ডলারে লেনদেনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করা ওই সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে যেকোনো আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ ও ঋণের ক্ষেত্রে মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাংক নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার মূল মুদ্রাও মার্কিন ডলার। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের জন্য যেকোনো দেশকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। এসব নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, ইরান ও চীন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্লেষক ক্রিস ওয়েফার বার্তা সংস্থা বিবিসিকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু ডলারের জন্য বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর বিশাল প্রভাব বিস্তার করতে পারে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। কারণ ডলার দিয়েই হয় সব বাণিজ্য। ডলারের এই আধিপত্য ভাঙতে চায় রাশিয়া। ব্রিকস দেশগুলোকে নিয়ে একটি বিকল্প বাণিজ্যব্যবস্থা তৈরি করতে চায় তারা, যেখানে ডলার, ইউরো বা জি৭ দেশগুলোর মুদ্রার প্রয়োজন পড়বে না। তখন আর (পশ্চিমা) নিষেধাজ্ঞা খুব একটা কাজে আসবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোটের জিডিপি সম্প্রতি পশ্চিমা জোট জি৭কে ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। রুশ সংবাদ সংস্থা তাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিকস বিজনেস ফোরামের বৈঠকে পুতিন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯২ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির ৪৫.৫ শতাংশ ছিল জি৭-এর দখলে, ব্রিকস রাষ্ট্রগুলোর দখলে ছিল মাত্র ১৬.৭ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালে আমাদের জোটের (ব্রিকস) ভাগ এসে দাঁড়ায় ৩৭.৪ শতাংশে আর তাদের ২৯.৩ শতাংশে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এই ব্যবধান সামনে আরো বাড়বে বলে ঘোষণা দেন পুতিন। বিবিসির মতে, ব্রিকস দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩৫০ কোটি, যা বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ। অর্থনীতিতে ব্রিকসের এই শক্তিশালী অবস্থান ক্রমেই বাড়বে, যা বিকল্প মুদ্রার ব্যবহারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বে আগে জ্বালানি তেল বাণিজ্যের প্রায় শতভাগ হতো ডলারে, কিন্তু রাশিয়ার উদ্যোগের কারণেই ২০২৩ সালে তেল বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশ হয়েছে স্থানীয় মুদ্রায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির কারণে আগামী দিনগুলোতে ডলারের দাম আরো বাড়তে পারে। এর বিপরীতে পড়বে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মুদ্রার মান। ফলে দেশগুলো নিজস্ব মুদ্রার মান ধরে রাখার স্বার্থেই ডলারের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন বাড়াবে। বর্তমানে চীনের ইউয়ান, রাশিয়ার রুবল, ব্রাজিলের রিয়েল এবং ভারতের রুপিতে বৈশ্বিক লেনদেন বাড়ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে ব্রিকস দেশগুলোর বিকল্প মুদ্রা আনার এই উদ্যোগকে সহজভাবে নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিকস সদস্য দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ডলারের বিকল্প অন্য কোনো মুদ্রা প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করা হলে সেই দেশগুলো ১০০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়বে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব দেশের কাছ থেকে আমরা একটি প্রতিশ্রুতি চাই যে তারা নতুন একটি ব্রিকস মুদ্রা তৈরি করবে না বা তারা এমন আর কোনো মুদ্রাকে সমর্থন দেবে না, যা শক্তিমান মার্কিন ডলারকে প্রতিস্থাপিত করবে। এই প্রতিশ্রুতি না দেওয়া হলে তাদের ১০০ শতাংশ শুল্কের মোকাবেলা করতে হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো লিখেছেন, ব্রিকস দেশগুলো তার কথা না মানলে তাদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চমৎকার অর্থনীতির যুক্তরাষ্ট্রে তাদের (পণ্য) বিক্রিকে বিদায় বলার জন্য</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রত্যাশা করতে হবে। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুষে নেওয়ার জন্য তারা আরেকটি দেশকে খুঁজে দেখতে পারে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর জানান, ভারত কখনো ডি-ডলারাইজেশনের পক্ষে ছিল না এবং বর্তমানে ব্রিকস মুদ্রা চালুর কোনো প্রস্তাব নেই। দোহা ফোরামে এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারত সব সময় বাস্তবসম্মত নীতিতে বিশ্বাস করে এবং ডি-ডলারাইজেশন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক দেশেই রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে আবেদন হারাচ্ছে ডলার। এই প্রবণতা ক্রমেই গতি পাচ্ছে। অনেক দেশই এখন তাদের বাণিজ্য ও লেনদেনে ডলারের পরিবর্তে স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ওয়াশিংটন যদি দেশগুলোকে ডলার ব্যবহারে বাধ্য করতে চায়, তবে এটি ব্যাকফায়ার করবে। ক্রমেই ডলার রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে তার অবস্থান হারাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সূত্র : রয়টার্স, টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া, সিবিএস নিউজ</span></span></span></span></p>