প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি

  • মাসুম মাহমুদ
শেয়ার
প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি
অলংকরণ : নাহিদা নিশা

পাহাড়, তার পাদদেশে বেড়ে ওঠা গাছ, অরণ্য, সমুদ্র আর আকাশ আড্ডায় বসল। কাছাকাছি কোনো নদী না থাকায় নদীর প্রতিনিধি হয়ে একটি পাখি এসে যোগ দিল আড্ডায়। পাখিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে পাহাড় জানতে চাইল, ‘আসতে পথে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?’

পাখি বলল, ‘না। চাঁদের আলোতে আসার পথটি সুগম ছিল।

‘বেশ। এবার শুনি নদী কী বলল?’

‘বলেছে অনেক কথা। প্রথমেই তোমাকে জানাতে বলল পাহাড়-পর্বতের পাথরখণ্ড ফেটে নদীর সূচনা। তাই সে তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ।

‘কেমন আছে নদী?’

‘ভালো নেই। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।’

‘এমা কেন! নদীর কিসের অত চিন্তা যে শুকিয়ে যাচ্ছে?’

‘চিন্তায় নয় গো! নদীর ওপর মানুষের শোষণ এবং দূষণের কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে। নদী বাঁচলে যে মানুষ বাঁচে, সেটি মানুষ ভুলে যাচ্ছে।

তারা নদী থেকে বালু তুলে, মাটি কেটে পানি দূষিত করছে। নদীর দুই পাশের অংশ দখল করে বাড়ি, দোকানপাট বানাচ্ছে। দখলে-দূষণে নদী ক্লান্ত। এই কথাগুলোই তোমাদের বলতে বলল।’

সমুদ্র মন দিয়ে শুনছিল ওদের কথা।

শেষে বলল, ‘নদীদূষণের শেষ পরিণতি হলো সমুদ্রদূষণ। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি শহর কোনো না কোনো নদীর তীরে অবস্থিত। যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল ও ব্যাগের বড় একটি অংশ প্রথমে আশপাশের নর্দমায় যায়, তারপর সেগুলো নর্দমার পানিতে ভাসতে ভাসতে নদী-নালা হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। মাছ ধরার নৌকা আর জাহাজ থেকেও সমুদ্রে প্লাস্টিক ফেলা হয়। এভাবে প্রতিবছর আনুমানিক ১৪ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে আসে। অথচ সমুদ্রের রয়েছে বিশাল সম্পদ, নিজেদের প্রয়োজনেই ওই সম্পদ মানুষের রক্ষা করা দরকার। কেন যে বোঝে না!’

সমুদ্রের কথা শুনে গাছ বলল, ‘বুঝলে তো গাছেরও ক্ষতি করত না মানুষ। পৃথিবীতে প্রতিদিন কত গাছ কাটা হচ্ছে জানো? প্রায় ৪২ মিলিয়ন। প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক রাখতে গাছপালার ভূমিকা অনেক। পৃথিবীতে গাছ না থাকলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, অক্সিজেন, ওষুধ মানুষ কোথা থেকে পেত? প্রাণিজগতের জীবন বাঁচাতেও গাছের দরকার। আর মানুষ কিনা সেই গাছ কেটে বিনাশ করে ফেলছে।’

অরণ্য চোখ বুজে শুনছিল। সবাই ভেবেছে বুঝি ঘুমাচ্ছে। কিন্তু না! আচমকা চোখ মেলে বলল, ‘জ্বালানি কাঠ, কাঠ, কাঠের সজ্জা, মধু, ঔষধি গাছ, ভেষজ, জৈবসারসহ আরো কত কিছু মানুষ অরণ্য থেকে পায়। সেই অরণ্যও ধ্বংস করছে তারা। মানুষ যদি এখনই অরণ্য বাঁচানোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির ক্ষয়, বায়ুদূষণ, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন অনেক ক্ষতির কারণ হবে অরণ্য।’

এবার বিরতি। বিরতিতে খানাদানা আর গান-বাজনা হলো। পাহাড় আবৃত্তি করে শোনাল। গান-বাজনার মতো আবৃত্তিটাও ভারি সুন্দর ছিল। বিরতি শেষে পাহাড় ফের শুরু করল, ‘মানুষ অরণ্য আর গাছপালার সর্বনাশ করছে বলে তো পাহাড়ও ধসে যাচ্ছে। অথচ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়ের গুরুত্ব অনেক মানুষ সেটা জানে, বুঝেও; তবু তারা পাহাড় কেটে বসতি বানাচ্ছে।’

এত অভিযোগ শুনে শুনেও আকাশের বুকে চাঁদ হাসছে। আকাশ চুপ করে আছে দেখে পাখি বলল, ‘তুমি দেখি কিছুই বলছ না, আকাশ! নদী নষ্ট, গাছ কাটা, সমুদ্রদূষণ, অরণ্য ধ্বংস, পাহাড় ধস নিয়ে মানুষের প্রতি ওদের কত অভিযোগ, অভিমান। তুমিও কিছু বলো।’

আকাশ বলল, ‘ওদের প্রতি মানুষের অনাদর, অবহেলা দেখে দূর থেকে আমিও কষ্ট পাই ঠিক, তবে আমার নিজের জন্য তেমন কোনো কষ্ট নেই। পাহাড়, নদী, অরণ্যরা মানুষের কাছে আছে। তাই মানুষ ওদের কষ্ট দিতে পারে। আমি থাকি অনেক দূরে। মানুষ না পারে আমায় ছুঁতে, না পারে কষ্ট দিতে। ঠিক কি না, পাখি?’

চাঁদের পানে এক ঝলক তাকিয়ে পাখি বলল, ‘যদিও এখানে আমি নদীর প্রতিনিধি, অতিথি; তবু বলতে চাই, মানুষ মহান, সৃষ্টির সেরা। এমন মানুষের সান্নিধ্যে তোমরা আছ, একি কম কথা! তোমাদের অভিযোগ অল্প কিছু বেকুব মানুষের প্রতি। বেশির ভাগ সচেতন মানুষ তোমাদের যত্ন নেয়, ভালোবাসে। নইলে কবে তোমরা বিলুপ্ত হয়ে যেতে! সেই সচেতন মানুষদের দেখে দেখে অন্যরাও একদিন তোমাদের মানে অরণ্যের যত্ন নিয়ে, পাহাড়ের যত্ন নিয়ে, নদী, সমুদ্র, গাছের যত্ন নিয়ে প্রকৃতির সাথে মিতালি গড়ে তুলবে।’

পাখির কথা শুনে সবাই ভাবল, মানুষ তো পাখিকেও জ্বালায়, কষ্ট দেয় আবার মেরেও ফেলে! সেই পাখির মুখেই কিনা মানুষের জয়জয়কার! ভেবে ওরা আপ্লুত, উচ্ছ্বসিত, উৎসাহিত। তৎক্ষণাৎ নদীর ওপর খুশি হয়ে সমুদ্র নিজের থেকে একপেশে জল দিয়ে পাখিকে বলল, ‘নদীকে দিয়ো, বোলো এই জল তোমাকে পাঠানোর জন্য তাকে আমার উপহার।’

আকাশ, গাছ আর অরণ্যও মানুষের প্রশংসা করার জন্য পাখিকে উপহার দিল। উপহারের ছড়াছড়ি দেখে চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙে উছলে পড়ে আলো।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বাধীনতার কথা

    বেণীমাধব সরকার
শেয়ার
স্বাধীনতার কথা
অলংকরণ : তানভীর মালেক

ভিনদেশিরা লুটের আশায় এলো আমার দেশে,

লুটতরাজ আর খুনের নেশায় মাতল দানোর বেশে।

 

সবুজ শ্যামল গ্রাম জনপদ রক্তে হলো লাল,

সেই লহুতে ভাসল দেশের হাওর নদী খাল।

 

অধিকারের ন্যায্য কথা আনলে কেউ মুখে

অমনি তারে সোজাসুজি করত গুলি বুকে।

 

ভরত নিয়ে অন্ধকারের বন্ধ কারাগারে;

এমনতর যন্ত্রণা কেউ সইতে কি আর পারে?

 

জাগল তখন দেশের মানুষজাগল মায়ের ছেলে,

মুক্তির নেশায় ঝাঁপিয়ে পড়ে রণের মশাল জ্বেলে।

 

মার খেয়ে সব পাক সেনারা মানল পরাজয়,

লাল সবুজের বিজয় নিশান উড়ল আকাশময়।

 

মুক্তিপাগল বীর বাঙালি আনন্দ উল্লাসে

স্বাধীনতার সাগরজলে দৃপ্ত সুখে ভাসে।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জমিদার ভূত

    রেবেকা ইসলাম
শেয়ার
জমিদার ভূত
অলংকরণ : তানভীর মালেক

রাত্রিবেলা সেনমহলে

হাঁটে নাকি ভূত

জরির জামা গায়ে যেন

ঝলমলে বিদ্যুৎ!

বসন-ভূষণ নিয়ে তাহার

ভীষণই খুঁতখুঁত
নানা রকম টালবাহানা
নানা রকম ছুঁত।
ক্ষণে ক্ষণে একই কথা

ভাল্লাগে না ধুত!

আগের জন্মে ছিল নাকি

জমিদারের পুত।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

তোমাদের আঁকা

শেয়ার
তোমাদের আঁকা

ইনতিসার হক, প্রথম শ্রেণি

চারুপাঠ হাতেখড়ি স্কুল, ঢাকা


তোমাদের আঁকা

রুদ্রদীপ পাল, প্রথম শ্রেণি

টংগিবাড়ি সানরাইজ কিন্ডারগার্টেন, মুন্সীগঞ্জ


তোমাদের আঁকা

শারমীনা ফাহমিদা বর্ণ, তৃতীয় শ্রেণি

প্রতিভা মডেল স্কুল, ময়মনসিংহ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
[ যে বই তুমি পড়বে ]

সহজ ছন্দে প্রিয় দেশ

শেয়ার
সহজ ছন্দে  প্রিয় দেশ

মোবাইলের জন্য বায়না ধরেছে খোকন সোনা। কিনে দেয়নি বলে গাল ফুলিয়ে আছে। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বাবা বলছেন :

‘খোকন সোনা রাগ করে না

ফোলায় নাতো গাল,

মোবাইল ফোন কিনে দেবসহজ ছন্দে  প্রিয় দেশ

ঠিক আগামীকাল।’

এই ছড়ার শেষ স্তবকে বাবা আবার বলছেন :

‘বুঝবে তুমি হলে বড়

আজ নয়তো কাল,

জ্ঞান ও চিন্তায় যে-এগিয়ে

সে-ইতো ডিজিটাল।

‘ডিজিটাল শৈশব’ নামের ছড়াটিতে লেখক আসলে সহজ কথায় জীবনের পাঠ দিয়েছেন। ‘নিধিরামের বিধি বাম’ শিরোনামের আরেকটি ছড়া এমন :

‘নিধিরামের বিধি বাম

অসুখ হলো সর্দি-হাম,

বদ্যি এলো ভোলারাম

রোগী দেখে জিজ্ঞেস করে

বল দেখি তোর বাপের নাম?’

এমন ৩৮টি মজার এবং শিক্ষণীয় ছড়া নিয়ে মিহির মুসাকীর বই ‘ভালোবাসি প্রিয় দেশ’। ছড়ায় তিনি পড়িয়েছেন সহজ ছন্দের মালা। কথায়-ছন্দে মাতৃভূমি, বাংলার প্রকৃতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের গল্প তুলে ধরেছেন।

ছড়ায় উঠে এসেছে গ্রামীণ জীবনের সরলতা, নদী-মাঠ-ঘাটের সৌন্দর্য এবং মানুষের সংগ্রাম ও স্বপ্নের কথাও। শুধু তা-ই নয়, জনবহুল ঢাকার রোজকার চিত্র জ্যাম, রিকশা, সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি আর হর্নের হালহকিকতের বর্ণনা আছে। লেখনশৈলী সহজ-সরল, কিন্তু গভীর অর্থবোধক। ছড়াগুলো তোমাদের তো বটেই, ভালো লাগবে বড়দেরও।

অলকানন্দা রায়

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ