<article> <p style="text-align: justify;">সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলার ভোট অংশগ্রহণমূলক ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সরকারের কৌশল কাজে আসেনি বলে মনে করছে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও কেন্দ্রে ভোটার টানতে পারেননি। ভোটের প্রথম ধাপেই জনগণ ‘অনাস্থা’ দেখিয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন হচ্ছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া, পেশিশক্তির ব্যবহার, ভোট কিনতে টাকা বিলানো ও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের প্রভাব বিস্তার ছিল। গত সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনেও ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। ফলে দিন শেষে ভোটের হার বাড়াতে সংসদ নির্বাচনের মতোই ‘কারচুপি ও অপকৌশলের’ আশ্রয় নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। </p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়নি। তবে স্বাভাবিকভাবেই কয়েকজন সদস্য বিষয়টি আলোচনায় তুলেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, এই ভোটে ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের ছায়া দেখা গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশল এবং ভোটের হার বাড়াতে নির্বাচন কমিশনের তোড়জোড় একই রকম ছিল।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে পরের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। কমিটির নেতারা নির্বাচনের অনিয়ম ও জালিয়াতির চিত্র সংগ্রহ করার পরামর্শ দেন।</p> <p style="text-align: justify;">গণমাধ্যমের খবরে ভোটারশূন্য কেন্দ্রের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকে ভোটারের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন প্রার্থীরা। কেন্দ্রগুলো দিনভর প্রায় ফাঁকা ছিল। তার পরও কিভাবে ৩৬.১৮ শতাংশ ভোট পড়তে পারে?</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সরকার যে কৌশল নিয়েছে তা ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ আবারও বিএনপির ডাকে ভোট বর্জন করেছে।’</p> <p style="text-align: justify;">গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রকৃত ভোট পড়ার হার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মতোই ছিল। একদলীয় উপজেলা ভোটেও অনিয়ম, কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে।’ </p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">আগের উপজেলা নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ২০১৯ সালে ভোট পড়েছে ৪০.২২ শতাংশ। এবার তা আরো কমেছে। এবার বিএনপি, জামায়াত, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ দলগুলো ভোট বর্জন করেছে। সব দলের অংশগ্রহণে ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১ শতাংশের মতো। সে বছর ছয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন হয়।</p> <p style="text-align: justify;">দেড় দশক আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তৃতীয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮.৩২ শতাংশ। অর্থাৎ গত দুই নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমেছে। এই তথ্যগুলো উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।</p> <p style="text-align: justify;"><b>বিএনপির প্রার্থীদের জন্য বার্তা</b></p> <p style="text-align: justify;">প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অন্তত ২৮ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮০ জন বিএনপি নেতা অংশ নিয়েছেন। তাঁদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু ভোটের ফলাফলে দেখা গেছে, বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে মাত্র সাত-আটজন বিজয়ী হয়েছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো দলের সমর্থন ছাড়া মাঠে টিকে থাকাটাই কঠিন।</p> <p style="text-align: justify;">দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ২৯ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান অন্তত ৬৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। দলের সব ধরনের পদ থেকে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনই পরবর্তী ধাপের প্রার্থীদের জন্য বার্তা। তাঁরা ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে এখনো দলে ফেরার সুযোগ আছে। নইলে প্রার্থী হয়েও হারবেন, দলের পদও হারাবেন।   </p> <p style="text-align: justify;"><b>স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আলোচনা</b></p> <p style="text-align: justify;">বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারত থেকে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা ৫২৭টি খাদ্যদ্রব্যে ‘ক্যান্সারের বিষ’ পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। জনস্বাস্থ্যসম্পৃক্ত এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখিতভাবে একটি বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে মতামত আসে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।</p> </article>