<p>এই মুহূর্তে সিনেমাপ্রেমীদের মুখে মুখে একটাই নাম, ‘লাকি ভাস্কর।’ দুলকার সালমান অভিনীত অর্থনৈতিক অপরাধভিত্তিক চলচ্চিত্র। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ভেঙ্কি আটলুরি। ৩১ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এটি। সিনেমাটি একটি মধ্যবিত্ত ব্যাংক কর্মচারী ভাস্করের (দুলকার সালমান) জীবন নিয়ে, যিনি তার পরিবারের আর্থিক সমস্যার সমাধানে অবৈধ পথে পা বাড়ান। তার বুদ্ধি এবং চাতুর্যের মাধ্যমে যদিও তিনি সংকট কাটানোর চেষ্টা করেন, তবে অতিরিক্ত লোভ তাকে গভীর ফাঁদে ফেলে দেয়। তিনি কি সক্ষম হয়েছিলেন এই ফাঁদ থেকে বের হতে? জানতে হলে দেখতে হবে বছরের অন্যতম ‘হিট’ লাকি ভাস্কর।</p> <p>গল্পের প্রেক্ষাপট ১৯৯০-এর দশকের মুম্বাইকে ঘিরে। নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠা এই গল্পটি ব্যাংক এবং শেয়ার বাজারের প্রতারণা ও অর্থ পাচারের ঘটনাগুলো ফুটিয়ে তুলেছে। এই গল্পে হর্ষদ মেহতাও বেশ ভূমিকা নিয়ে জড়িয়ে আছেন। আশির দশকে শুরু হওয়া গল্প ১৯৯ পর্যন্ত সময়কালে এসে ভিন্নদিকে মোড় নেয়, কারণ ওই বছরই ভারতের স্টক মার্কেটের ‘বিগ বুল’খ্যাত হর্ষদ মেহতার হাজার কোটি টাকার স্ক্যাম সামনে আসে। হর্ষদ এই স্ক্যামে ব্যাংক আর স্টকমার্কেটকে যেভাবে নিজের হাতের খেলনা বানিয়ে খেলেছেন, সেই ঘটনাই উঠে এসেছে এই গল্পে। তবে গল্পটা হর্ষদ মেহতার নয়, বরং তার স্ক্যামের অন্তর্ভুক্ত একটি ব্যাংকের একজন এজিএমের। যার নাম ভাস্কর। এই সিনেমার হিরো ভাস্কর। বিগ বুল হর্ষদ মেহতার বরাতে যারা যারা লাভবান হয়েছিলেন, শত শত কোটি টাকার কোটির মালিক হয়েছিলেন, তাদেরই একজন ভাস্কর।</p> <figure class="image"><img alt="5" height="338" src="https://www.m9.news/wp-content/uploads/2024/11/lucky-baskhar.jpg" width="450" /> <figcaption><sub><em>দুলকার সালমান</em></sub></figcaption> </figure> <p>সিনেমার প্রথমার্ধে ভাস্করের সংগ্রামী জীবন এবং তার অবৈধ কর্মকাণ্ডের সূচনা দেখানো হয়। তবে দ্বিতীয়ার্ধে গল্পের গতি কিছুটা কমে যায়। তবে দর্শককে পর্দায় বেধে রাখবে। একজন পুরুষ মানুষ তার পরিবারের সুখের জন্য কতটুকু রিস্ক নিতে পারে এই সিনেমা তারই উদাহরণ। ‘লাকি ভাস্কর’ আপানাকে দেখাবে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, বড় বড় দুর্নীতিবাজের ছত্রচ্ছায়ায় দুর্নীতিতে জড়ানো, লোভ, টাকার গরম, সাধারণ পরিবারের সম্মান হারানোর ভয় এবং সর্বশেষে দেখা যাবে লোভকে কোথায় থামাতে হবে! গল্পের টপ টু বটম খুবই সুন্দরভাবে সাজানো। প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট রানটাইমের সিনেমা অথচ দেখতে বসলে নিমিষেই সময় চলে যাবে। </p> <p>অভিনয়ের কথা বলতে হলে দুলকার সালমান তার অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রটি প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। এককথায় মাস্টারস্ট্রোক খেলেছেন চরিত্রটি দিয়ে। দুলকারের ক্যারিয়ারের আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এই চরিত্র। তার পাশাপাশি মীনাক্ষী চৌধুরী এবং অন্য সহ-অভিনেতাদের অভিনয়ও উল্লেখযোগ্য। প্রত্যেকেই নিজেদের চরিত্র প্রাণবন্ত করেছেন পর্দায়।</p> <p>নির্মাণ ও প্রযুক্তিগত দিক থেকেও লাকি ভাস্কর প্রশংসার সর্বোচ্চ দাবিদার। সিনেমার প্রডাকশন ডিজাইন, বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকের মুম্বাই শহরের পুনর্নির্মাণ ছিল দারুণ। যদিও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কিছুটা দুর্বল লেগেছে কিছু জায়গায়। আরো গল্পনির্ভর মিউজিক করা যেত। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কিছু স্ট্রোক বেশ দারুণভাবে কাজ করেছে যা দর্শকদের ভালো লাগবে।</p> <p>ইতোমধ্যে লাকি ভাস্কর সিনেমাহলের দর্শকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। সমালোচকদের কাছ থেকেও পেয়েছে প্রশংসা। আর ওটিটিতে প্রকাশ হওয়া মাত্র রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ওটিটি দর্শকদের মাঝে। দুলকার সালমানের ভক্তরা এটি অবশ্যই উপভোগ করবেন। তবে যারা ‘স্ক্যাম ১৯৯২’-এর মতো শো দেখেছেন, তারা হয়তো কিছুটা মিল খুঁজে পাবেন। এটি একটি মাঝারি মানের থ্রিলার যা আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়ে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করবে। তবে ইমোশন, ফ্যামিলি ড্রামা আর প্রতারণার মাঝেও সততার এক ধরনের লুকোচুরি খেলা দর্শকদের মাতিয়ে রাখবে পর্দায়। সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন এই মুহূর্তের আলোচিত চলচ্চিত্র ‘লাকি ভাস্কর।’</p>