<p style="text-align:justify">সদ্য প্রয়াত কবি হেলাল হাফিজ ও কবি এরশাদ মজুমদারের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, ‘কবিরা দার্শনিক। তারা অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে ভবিষ্যৎ দেখতে পান, যা লেখনীতে ফুটিয়ে তোলেন। তারা মানব জাতিকে পথ নির্দেশনা দেন। কবিতায় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। কবিরা ভালোবাসা দিতে ও নিতে জানেন। তাই কবিরা বেঁচে থাকেন তাদের সৃষ্টিতে, মানুষের ভালোবাসায়।’</p> <p style="text-align:justify">আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবিষ্কার প্রকাশনী আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ।</p> <p style="text-align:justify">এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার নামটা হেলাল হাফিজের দেওয়া। হেলাল হাফিজের মৃত্যু আমার অঙ্গহানির সমান। তিনি কিংবদন্তিতুল্য। আমি মনে করি, কথাসাহিত্যের জগতে হুমায়ূন আহমেদ ও তিনি এভারেস্ট সমান। কবি শামসুর রাহমানের হাত ধরে আমার সংবাদিকতায় প্রবেশ। আমি উনাকে বড় ভাইয়ের চেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করি। আমার প্রথম কবিতার নামও তার উক্তি দিয়ে। হেলাল হাফিজের কবিতা সংগ্রহ চলছে। তাকে নিয়ে যারা লিখছেন তাদের কবিতা নিয়ে একটা বই হবে। হেলাল হাফিজ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন চিরকাল।’</p> <p style="text-align:justify">জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান বলেন, “কবি হেলাল হাফিজ একটি কবিতার মাত্র দুটি পঙক্তির জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন। যা এখনো বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। ওই দুটি পঙক্তি স্লোগানে পরিণত হয়েছে। যা সেই ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদের সামরিক শাসন এবং স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছে। নতুন প্রজন্মকে মিছিলে যাওয়ার, যুদ্ধে যাওয়ার, জীবন দেওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে।”</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘হেলাল হাফিজের কবিতায় জীবনের প্রতিধ্বনি হয়েছে, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, যৌবন ও প্রতিবাদের কথা ফুটে উঠেছে। তার কবিতা আমাদের জীবনে বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আমাদের পথ দেখিয়েছে, সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।’</p> <p style="text-align:justify">কবি দিলারা হাফিজ বলেন, ‘কবিতা ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলে। গান, নাটক, সিনেমা আমাদের বিনোদন। আর কবিতা উচ্চতর বিনোদন। আর তাই কবিতা সাধারণের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। হয়ে ওঠে সর্বজনীন। কবিরা বেঁচে থাকেন কাগজে, পাঠকের হৃদয়ে। কবি হেলাল হাফিজের কবিতা শুধু মানবজীবন নয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে আলোড়িত করেছে। এটাই তার স্বার্থকতা।’</p> <p style="text-align:justify">কবি ও সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘হেলাল হাফিজের সার্থকতা হলো তার সময়কার তারুণ্যকে সঠিক নির্দেশনা নিয়ে মানুষের মনের দাগ কেটেছেন। কবিরা শুধু শব্দের ওপর দখল রাখেন না। তারা চিত্তলোকে থাকেন। তাদের মনোজগৎ বিশাল। কবিরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে সমাজের ক্রান্তিকাল দূর করতে পারে। যদি তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক থাকে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘কবি এরশাদ মজুমদার নিজেকে সুফি হিসেবে পরিচয় দিতেন। সাংবাদিকতায় নিচ থেকে ওপরে কিভাবে ওঠা যায়, তার অনন্য উদাহরণ তিনি। সাংবাদিকতার প্রতি অনেক নিষ্ঠাবান ছিলেন।’</p> <p style="text-align:justify">সাংবাদিক ও কবি সোহরাব হাসান বলেন, ‘আমাদের আজ আয়োজন ছোট, কিন্তু আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ। হেলাল হাফিজ আমাদের সমস্ত সত্তাজুড়ে। উনার জীবনটা বিস্ময়কর। কিন্ত তিনি গল্পে-কবিতায় থাকবেন। আমরা যারা তার সংস্পর্শ পেয়েছি। তিনি আমাদের পুরোটা জুড়ে থাকবেন।’</p> <p style="text-align:justify">কবি এরশাদ মজুমদারের ছেলে প্রকৌশলী ড. আসাদ জামিল বলেন, ‘সন্তান হিসেবে আমরা সব সময় উন্মুক্ত স্বাধীনতা ভোগ করেছি। বাবা আমাদের যেভাবে স্নেহ করতেন, ঠিক তেমনিভাবে তার চারপাশের মানুষদের ভালোবাসতেন। গ্রামের মানুষের প্রতিও তার প্রগাঢ় ভালোবাসা ছিল।’</p> <p style="text-align:justify">সভায় বক্তারা বলেন, ‘কবি হেলাল হাফিজ ১৯৬৯ সালেই তরুণদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে লিখেছেন, এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। হেলাল হাফিজ কবিতা লেখার পাশাপাশি পাঠ করতেন। পড়ার সময় আমরা অন্য হেলাল হাফিজকে দেখতাম। কী গুরু গম্ভীর! কেউ তাকে বলতে পারবে না কোনো গোষ্ঠী, কিংবা দলের। বা অন্য নির্দিষ্ট কোনো চিন্তার।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো বলেন, ‘হেলাল হাফিজ অনন্য এক মানুষ ছিলেন। তার চিন্তার প্রখরতা দূরদর্শিতা ছিল অতুলনীয়। এ রকম মানুষ পাওয়া এ যুগে দুর্লভ। তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তিনি বেঁচে থাকবেন তার গল্প-কবিতায়।’</p>