কুয়াচ্ছন্ন সকালের কারণে আয়োজনে সময় মানার ক্ষেত্রে কিছুটা ছেদ পড়ে। তবে ঋণ নিতে আসা নারীরা প্রকৃতির বৈরী ভাবকে উপেক্ষা করেই উপস্থিত হন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে। দুপুরে তাদের মাঝে অতিথিরা ঋণের টাকা তুলে দেন। ৪৪৩ জনের মাঝে মোট ৮০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়।

এই ঋণ শুধু নারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। যা দিয়ে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল এবং শাক-সবজি চাষসহ ৩২ ধরনের কাজে বিনিয়োগ করে খুবই উপকার পাচ্ছে। এই ঋণের পরিধি শুরুতে শুধু বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা পার্শ্ববর্তী উপজেলা হোমনা ও নবীনগরে বিস্তার লাভ করেছে।

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিইও এম নাসিমুল হাই (এফসিএস), ডিজিএম মাইমুন কবির, বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. চাঁন মিয়া সরকার, সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ প্রকল্পের ইনচার্জ মো. মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র অফিসার আমির হোসেন আনোয়ার, জুনিয়র অফিসার শাহজাহান, আল মামুন, মোহাম্মদ বাছিরসহ বিশিষ্টজনেরা এ আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

ঋণ নিতে আসা মধ্যনগর গ্রামের সাহিদা (২৯) বলেন, ‘আমার স্বামীর পাশাপাশি আমিও কিছু কাজ করমু। বসুন্ধরার টেহা দিয়া হাঁস-মুরগি পাইল্লা অনেকে লাভবান হইছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি বসুন্ধরার মালিকরা যেন ভালো থাকে।’

আসাদনগর গ্রামের বিলকিস বেগম (৪০) জানালেন, এই ঋণ নিয়ে তিনি কৃষিকাজ করবেন।

বাঞ্ছারামপুর সদরের মাকসুদা খাতুন (৩২) বলেন, ‘আগেও ঋণ নিয়া হাঁস-মুরগি পাইল্লা লাববান অইছি। অহন আবার নিয়া কাজে লাগামু। বসুন্ধরা আছে দেইক্কা অহন আর আমার সংসার চালানোর চিন্তা নাই।’

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিইও এম নাসিমুল হাই জানান, এর আগে আরো ৭৪ বার সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। এ সহযোগিতা চালু হওয়ার পর থেকে মোট ২৮ হাজার ১২৯ জন দরিদ্র নারীর হাতে ২৭ কোটি ১০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়, যা স্বল্পহারে সাপ্তাহিক কিস্তিতে আদায় করা হয়। তিন মাস পরপর নারীদের হাতে এ ধরণের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথমবারে ১১৩ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয়বারে ৬৯ জনকে ১৫ হাজার টাকা করে আট লাখ ৮৫ হাজার এবং তৃতীয়বারে ২৭১ জনকে ২০ হাজার টাকা করে ৫৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

নাসিমুল হাই বলেন, ‘হতদরিদ্র মানুষকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার জন্য সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ চালু করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। অসহায় ও অসচ্ছল মানুষরা যেন নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ২০০৫ সালে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রকল্প শুরুর পর থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপ ধারাবাহিকভাবে মানুষের কল্যাণে ঋণ বিতরণ করে চলেছে। নদীবিধৌত এলাকা বাঞ্ছারামপুরের মানুষ ঋণ নিয়ে যেভাবে বিনিয়োগ করছে, তারা বেশি দিন আর অসচ্ছল থাকবে না। তাদের সচ্ছল করে তোলাই বসুন্ধরা গ্রুপের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’

এলাকার এক বাসিন্দা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকের ঈদ সত্যিই মিষ্টিময়!’

আয়োজকরা জানান, আমাদের ছোট এই প্রয়াস যদি কারো মুখে হাসি ফোটায়, সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।

ব্যবসায়ী ড্রিম ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিপাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেস ক্লাব সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন, সাধারণ সম্পাদক মো. বাহারুল ইসলাম মোল্লা, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আল আমীন শাহীন, সাধারন সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান লিমন, ইসলামপুর টাইটেল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি সাঈদ আল মামুন, সাংবাদিল আ ফ ম কাউছার এমরান, ইব্রাহিম খান সাদাত, মোজাম্মেল হোসেন, আজিজুর রহমান পায়েল, মো. শাহাদাৎ হোসেন, শুভসংঘের সদস্য শাহাদাৎ হোসেন, চয়ন বিশ্বাস প্রমুখ। 

কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি বিশ্বজিৎ পাল বাবুর পরিকল্পনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতিল আজিজ মুন্না।

অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বারী সোহেল, কুলাউড়া উপজেলা জিসাসের সভাপতি আলী হাসান সোহেল, উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বশির আল ফেরদাউস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শেখ বদরুল হোসেন রানা, রিয়াদ মাহমুদ, সাংবাদিক ইব্রাহিম আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঈদ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের আয়োজকরা জানান, ‘ঈদের আনন্দ সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিলে তবেই এর প্রকৃত মাহাত্ম্য পাওয়া যায়। আমাদের এই প্রয়াস যেন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে।

খাদ্যসামগ্রী পেয়ে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর সদস্যরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বসুন্ধরা শুভসংঘ ও সৌল জাংশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বলেন, ‘এই সাহায্য আমাদের জন্য অনেক উপকারে এসেছে। এবার আমরা একটু ভালোভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারব।’