সুরা কাহফ
সুরা কাহফের গোড়ার দিকে কোরআন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এতে কোনো বক্রতা নেই। কোরআন এসেছে মানুষকে সুসংবাদ দেওয়া ও সতর্ক করার জন্য। এর পরই পৃথিবীর বিভিন্ন সৌন্দর্য ও আশ্চর্য ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো মহান আল্লাহর মহাশক্তির প্রমাণ বহন করে। এই সুরায় প্রধানত তিনটি অতি বিস্ময়কর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।
তাহলো—এক. আসহাবে কাহফ বা গুহা অধিবাসীদের ঘটনা, দুই. মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা, তিন. জুলকারনাইনের ঘটনা। এই তিনটি ঘটনার পাশাপাশি আরো কয়েকটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে এই সুরায়। ঘটনাগুলো বর্ণনার পাশাপাশি এর শিক্ষণীয় দিকগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। বিপদ ও দুর্দশার সময় করণীয় সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. সাপ, বিচ্ছু ও হিংস্র প্রাণীও পৃথিবীর জন্য সৌন্দর্যস্বরূপ। কারণ সমাগ্রিক বিচারে এগুলোও কল্যাণকর। (আয়াত : ৭)
২. হিদায়াত বৃদ্ধির অর্থ হলো, ঈমানের ওপর অটল থাকা, নেক আমলের তাওফিক দেওয়া, আল্লাহর জন্য পার্থিব মোহ ও সম্পর্ক ত্যাগ করা। (আয়াত : ১৩)
৩. কোরআনের ঘটনা বর্ণনার পদ্ধতি হলো, এর শব্দ-বাক্য হবে সংক্ষিপ্ত, মর্ম হবে বিস্তৃত।
(আয়াত : ১৩)
৪. সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্যের মাপকাঠি নয়। কেননা কখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভুলের ওপর এবং স্বল্পসংখ্যক মানুষ সত্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। (আয়াত : ১৬)
৫. মানুষ যখন দ্বিধা কাটিয়ে আল্লাহর পথে চলে তখন আল্লাহর রহমত তার সঙ্গী হয়। (আয়াত : ১৬)
৬. শিকার ও সম্পদ পাহারার মতো প্রয়োজন ছাড়া ইসলামে কুকুর পালন নিষিদ্ধ। (আয়াত : ১৮)
৭. ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন কাজে উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া জায়েজ আছে।
(আয়াত : ১৯)
৮. শরিকানার ভিত্তিতে কাজ করা বৈধ। (আয়াত : ১৯)
৯. মুমিন অপরিচিত স্থানে খাবার গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করবে। সে হালাল, পরিচ্ছন্ন ও উপাদেয় খাবার গ্রহণ করবে। (আয়াত : ১৯)
১০. ঈমান ও ইসলাম রক্ষা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের পরিচয় গোপন করা বৈধ। (আয়াত : ১৯)
১১. শরিয়তে কবরে সৌধ নির্মাণ করা, এমনকি তা পাকা করা বৈধ নয়। (আয়াত : ২১)
১২. মানুষের স্মরণে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ। (আয়াত : ২১)
১৩. বৈধ কোনো কথা ও কাজের ইচ্ছা করলে বা অঙ্গীকার করলে ইনশাআল্লাহ বলা মুস্তাহাব। গুনাহের কাজে ইনশাআল্লাহ বলা নিষিদ্ধ। (আয়াত : ২৩)
১৪. পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় ও সব ধরনের স্বর্ণের অলংকার নিষিদ্ধ। (আয়াত : ৩১)
১৫. মুমিন ধনীর সামনে অবনত হয়ে যাবে না, বরং তাদেরকে ঈমান, ইসলাম ও নৈতিকতার পথে আহ্বান জানাবে। (আয়াত : ৩৭)
১৬. ঘরে প্রবেশের সময় এই দোয়া পড়া উচিত—মাশাআল্লাহ লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ। (আয়াত : ৩৯)
১৭. সত্যবিমুখতা নিজের প্রতি সবচেয়ে বড় জুলুম। (আয়াত : ৫৭)
১৮. সফরসঙ্গী ও সেবক হিসেবে যুবক ও সামর্থ্যবান লোক নিয়োগ দেওয়া উত্তম। (আয়াত : ৬০)
১৯. ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে শিক্ষার্থীর দৃঢ় সংকল্প আবশ্যক। যেন দীর্ঘ সফর ও তার কষ্ট সহ্য করতে পারে। (আয়াত : ৬০)
২০. নিজের দৃঢ় ইচ্ছা ও পরিকল্পনা থাকার পরও মুমিন নিজের কাজ আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করে। (আয়াত : ৬৯)
২১. বড়রাও ভুল স্বীকার ও অক্ষমতা প্রকাশ করতে পারে। এতে মর্যাদার হানি হয় না। (আয়াত : ৭৩)
২২. শরিয়তে তিনটি অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড : ক. নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, খ. ঈমান আনার পর কুফরি করা, গ. বিয়ের পর ব্যভিচার করা। (আয়াত : ৭৪)
২৩. চলাচলের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। (আয়াত : ৮২)
২৪. শাসকের দায়িত্ব হলো দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন করা।
(আয়াত : ৮৭)
২৫. আল্লাহর ওলি তারাই, যারা তাঁর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার পথ অনুসরণ করে এবং যারা তাঁর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির পথ পরিহার করে। (আয়াত : ১০২)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান