পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কাজলের শরীরে যক্ষ্মা ধরা পড়েছে গেল জানুয়ারিতে। কাজল যখন যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়, তখন তার পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বেশির ভাগ সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি ও তাঁর পরিবার পড়েছে বিপদে।
চিকিৎসা না হলে টিবি মারাত্মক হতে পারে।
কিন্তু রোগটি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরের মতো এলাকায়, যেখানে বস্তিতে থাকে ১৭ বছর বয়সী কাজল।
মা, ছোট ভাইসহ তিন সদস্যের পরিবারে কাজলই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পোশাক কারখানায় কাজ করে সে যা আয় করে তাই দিয়ে চলে পরিবারের সবাই।
জানুয়ারিতে যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ হতে পারত। সেই সময় সহায়তার হাত বাড়িয়েছিলেন দীপা হালদার, যিনি গত তিন বছর ধরে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে আসছিলেন এবং বিনামূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।
এই উদ্যোগটি পরিচালিত হয় স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা নারী মৈত্রীর মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে তহবিল বন্ধের চিঠি পাওয়ার আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটিতে অর্থায়ন করেছিল ইউএসএআইডি।
এ পরিস্থিতিতে কাজলের চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায়।
সে বলে, ‘এখন নিজের ওষুধ আনতে আমাকে যেতে হবে। আমি অনেক কষ্ট করছি।’
উল্লেখ্য, চিকিৎসার মাঝখানে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে যক্ষ্মার ওষুধ-প্রতিরোধী হওয়ার শঙ্কা থাকে। আর তাতে রোগটির বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং রোগীর গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পারফরম্যান্স রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউএসএআইডির সহায়তায় বাংলাদেশে আড়াই লাখেরও বেশি নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। একই বছর ইউএসএআইডির সহায়তায় নতুন বা পুনরায় সংক্রমিত দুই লাখ ৯৬ হাজার ৪৮৭ জন নিরাময় হয়েছে বা তাদের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে।
যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাটিকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।
বাংলাদেশে ইউএসএআইডির একটি প্রকল্পের একজন পরিচালক বলেন, ‘আপনি রাস্তায় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করবেন, তাঁরা বলবে হ্যাঁ, এটি (যক্ষ্মা) যুক্তরাষ্ট্রই নিয়ন্ত্রণে রাখছে।’
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘এশিয়ায় ইউএসএআইডির সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল বাংলাদেশ। প্রভাবের দিক থেকে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় এর ব্যাপক প্রভাব হয়েছে। বিশেষত টিকাদান, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু কমাতে ইউএসএআইডি এ দেশে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।’
ইউএসএআইডি বাংলাদেশ কার্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত ১১৩টি কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেছে।
এটি বাংলাদেশের জন্য কঠিন বাস্তবতা। এখানকার সরকার গত বছর উত্খাত হয়েছে এবং অর্থনীতি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি এবং তরুণরা কর্মসংস্থান সংকটের মধ্যে রয়েছে।
পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তা সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। রয়েছে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।
একদিকে তাদের দেশে ফেরার সুযোগ নেই, অন্যদিকে ক্যাম্পের বাইরে কাজ করারও উপায় নেই। সেই কারণে জীবিকার জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মোট সহায়তার প্রায় অর্ধেকই দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘের একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে দুটি বড় বস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রেহানা বেগম। তিনি বলেন, ভেতরে ছয় লিটার রান্নার তেল এবং ১৩ কেজি চাল রয়েছে। আরো রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন এবং শুকনা মরিচের মতো নিত্যপণ্য। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) তাকে যে রেশন দিয়েছে, তা দিয়ে রেহানা ও তাঁর পরিবারকে এক মাস চলতে হবে। ৪৭ বছর বয়সী রেহানা বলেন, ‘এত অল্প জিনিস নিয়ে আমরা কেমন করে বাঁচব? এখনই (বর্তমান রেশনেই) সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়।’ স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে রেহানাকে এক ঘরে থাকতে হয়।
ডব্লিউএফপি বলছে, তহবিল সংকটের কারণে জরুরি সাড়াদান কার্যক্রমে ব্যাপক কাটছাঁট করতে তারা বাধ্য হয়েছে।