ছয় দাবি নিয়ে সচিবালয়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ছয় দাবি নিয়ে সচিবালয়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা
কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তি এবং চাকরি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনরত তৎকালীন বিডিআর সদস্যরা গতকাল সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হলে শিক্ষা ভবনের সামনে বাধা দেয় পুলিশ। ছবি : মোহাম্মদ আসাদ

চাকরি ফেরতসহ ছয় দফা দাবিতে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে স্মারকলিপি জমা দিতে এবং কথা বলতে সচিবালয়ে যায় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টার দিকে তাঁরা সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। প্রতিনিধিদলে থাকা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা হলেন ফখরুদ্দিন আহমেদ, মো. দেলোয়ার, মাহবুব, মো. মনির ও রোকসাল আল প্রধান রিয়াল।

এর আগে বিডিআর সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং দুপুরে সচিবালয় অভিমুখে রওনা হয়। তাদের মিছিলটি শিক্ষা ভবন মোড়েই পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। ব্যারিকেড ভেঙে তারা সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ জলকামান দিয়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তবে বিডিআর সদস্যরা তাঁদের অবস্থান ধরে রাখেন এবং এক পর্যায়ে সড়কে বসে পড়েন।

এ অবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে শিক্ষা ভবন মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল।

এ সময় বিক্ষুব্ধ বিডিআর সদস্যদের দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, তুমি কে আমি কে, বিডিআর বিডিআর, দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেব রক্ত, রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়, আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

বিডিআর সদস্যরা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ছয় দফা দাবি মানা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলমান থাকবে। চাকরি পুনর্বহালের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সড়কেই সবাই অবস্থান করবে।

আমাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সচিবালয়ে আমরা ন্যায়সংগত অধিকার আদায় করতে এসেছি।

দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে ঘটনাস্থলে আসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। বিডিআরের চাকরিচ্যুত সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহালসহ ছয় দফা দাবিতে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দেন তিনি। হাসনাত চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

গত মঙ্গলবার সকাল থেকে ছয় দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তাঁদের দাবিগুলো হচ্ছে ১. পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসব বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁদের ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ২. এরই মধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিস্ফোরক মামলা বাতিল করতে হবে। ৩. গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ব্যতীত শব্দ এবং কার্যপরিধি ২-এর (ঙ) নম্বর ধারা বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাধীন তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৪. পিলখানায় শহীদ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ সর্বমোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কারাগারে মারা যাওয়া সব বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করতে হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৫. স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনতে হবে। ৬. পিলখানার হত্যাকাণ্ডে সব শহীদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে শহীদদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জুলাই মঞ্চ

গুম-খুনে জড়িত সদস্যদের তালিকা প্রকাশের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গুম-খুনে জড়িত সদস্যদের তালিকা প্রকাশের দাবি

রাজধানীর উত্তরার কুর্মিটোলায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে একদল লোক। তারা জুলাই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত।

জুলাই মঞ্চের এই কর্মসূচিতে অংশ নেন গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেল সাড়ে ৩টায় তাঁরা ট্রাকসহ মিছিল নিয়ে র‌্যাব সদর দপ্তরের বাইরে মূল সড়কে এসে পৌঁছান।

সেখানে নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের আটকে দিলে সড়কেই অবস্থান নেন। বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট পার করেন। এরপর তাঁরা র‌্যাব সদর দপ্তর অভিমুখে রওনা দেন।

এ সময় সদর দপ্তরের মূল ফটকে র‌্যাব সদস্যদের বাড়তি নিরাপত্তা দেখা যায়।

তাঁরা সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভকারীদের আটকে দেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে জুলাই মঞ্চের বক্তারা বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁদের কর্মসূচি শেষ করেন। কর্মসূচি শেষে তাঁদের দাবিদাওয়া ও আলটিমেটামের বিষয়টি র‌্যাব মহাপরিচালকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

কর্মসূচিতে ব্যানার প্রদর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্লোগানের মধ্যে ছিল বিচার বিচার বিচার চাই, গণহত্যার বিচার চাই।

আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে। গুমকারীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না। আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ।

কর্মসূচি চলাকালে সেখানে একটি ভ্যান থেকে একজন ক্ষিপ্ত কিশোর নেমে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের ট্রাইপড ও মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেয়।

এ সময় জুলাই মঞ্চের লোকজনের সঙ্গে ওই যুবকদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে হামলাকারী ওই কিশোর পিকআপ ভ্যানে চড়ে চলে যান।

কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা বলেন, তৎকালীন বিএনপি সরকার সন্ত্রাসী বাহিনী দমনের জন্য র‌্যাব গঠন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে এই বাহিনীকে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কাজে ব্যবহার করে। একটি বিশেষ দলে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, গুম, খুনসহ অবৈধ নির্বাচন পরিচালনায় তাদের ব্যবহার করে। র‌্যাবের যেসব সদস্য এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, দ্রুত তাঁদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। তাঁরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত র‌্যাব সদস্যদের তালিকা প্রকাশে এক মাসের সময় বেঁধে দেন। অন্যথায় জুলাই আন্দোলনের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডসহ ১৭ বছরে গুম খুনের সঙ্গে জড়িত র‌্যাব সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা না হলে জুলাই মঞ্চ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি দাবি করেন, ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে যারা ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে ১ নম্বরে রয়েছে র‌্যাব। জনগণের টাকায় কেনা বুলেট শিক্ষার্থীদের বুকে ছুড়েছে।

বর্তমান সরকারের সাত মাস পার হলেও তাঁদের বিচার করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, বরং অনেকে প্রমোশন পেয়েছে। গণহত্যার বিচার না হলে কিসের সংস্কার, কার জন্য সংস্কার? এসব সংস্কারের আগে প্রয়োজন গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা। দ্রুত এই বিচার করা না হলে আমরা আবারও জুলাই অভ্যুত্থানের মতো কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।

এ সময় জাবি শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, র‌্যাবের ডিজি স্বীকার করেছেন, গত ১৬ বছরে এই বাহিনীর মাধ্যমে গুম-খুন হয়েছে। গুম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭৩টি গুম র‌্যাবের মাধ্যমেই হয়েছে। আমরা দেখতে চাই কারা এই গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত। তাঁদের তালিকা চাই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনীতে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে জনগণ আবারও রাস্তায় নেমে আসবে।

এই ঘটনার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে দোষারোপ করেছেন জুলাই মঞ্চের নেতাকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, কর্মসূচিকে পণ্ড করতে পরিকল্পিতভাবে আজকের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে এখনো ফ্যাসিবাদের অনেক দোসর রয়ে গেছে। যাঁরা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া। দ্রুত তাঁদের তালিকা তৈরিতে দেশপ্রেমিক র‌্যাব সদস্যদের প্রতিও আহ্বান জানান তাঁরা।

 

 

মন্তব্য
ঈদ যাত্রা

দুই ঘণ্টায় ট্রেনের ৮৫% টিকিট শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দুই ঘণ্টায় ট্রেনের ৮৫% টিকিট শেষ

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য অনলাইনে ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ১৫ হাজার ৭৭৩টি ট্রেনের টিকিটের বিপরীতে ২০ লাখ হিট পড়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন। তিনি জানান, অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর দুই ঘণ্টার মধ্যেই ৮৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।

সকালে পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রির পর দুপুর ২টা থেকে পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট ইস্যু শুরু হয়।

বিকেলেও অগ্রিম টিকিট বিক্রির জন্য মানুষ অনলাইনে চেষ্টা চালিয়েছে। এই কার্যক্রম চলবে টানা সাত দিন।

জানা যায়, ১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর হবে ধরে নিয়ে টিকিট বিক্রির সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল ২৪ মার্চের টিকিট, আজ ২৫ মার্চের টিকিট, আগামীকাল ২৬ মার্চের টিকিট, ১৭ মার্চ ২৭ মার্চের টিকিট, ১৮ মার্চ ২৮ মার্চের টিকিট, ১৯ মার্চ ২৯ মার্চের টিকিট এবং ২০ মার্চ ৩০ মার্চের টিকিট বিক্রি হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, এবার শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় কাউন্টারে কোনো টিকিট পাওয়া যাবে না। টানা সাত দিন এই প্রক্রিয়া চলবে।

গত ৬ মার্চ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন জানান, যাত্রীদের সুবিধার্থে পাঁচ জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আরো বিশেষ ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

রেলওয়ে আরো জানায়, গত বছর ঈদুল ফিতরে ঢাকা থেকে আন্ত নগর ট্রেনের কমবেশি ৩০ হাজার আসনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। এবার আসনসংখ্যা ৩৫ হাজারের বেশি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ট্রেনে বাড়তি কামরা যোগ করা হবে। উত্তরবঙ্গের পথে লাইনের সক্ষমতা না থাকায় বিশেষ ট্রেন চালানো কঠিন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ওই দিকে নতুন ট্রেনও চালু হয়নি।

তাই উত্তরের ট্রেনগুলোতে বাড়তি কামরা যোগ করে আসনসংখ্যা বাড়ানো হবে।

 

বাসের অগ্রিম টিকিট

ঈদ যাত্রায় মূল ভরসা বেসরকারি পরিবহন। এখন সরকার আর বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির তারিখ নির্ধারণ করে না। তবে বাস মালিকদের সংগঠনগুলো জানিয়েছে, গতকাল থেকে কিছু কম্পানি বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। ছোট কম্পানি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক বাসের মালিক অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেন না। এতে যেসব দিনের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকে, সেসব টিকিট বাড়তি দামে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ঈদ উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বাসের অগ্রিম টিকিটের ক্ষেত্রে যাত্রীদের চাহিদা বেশি দেখা গেছে চার দিনের টিকিটের জন্য। বেশির ভাগ যাত্রী ২৫ মার্চ বিকেল থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত টিকিট করছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর কল্যাণপুরের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

দেখা যায়, বেশির ভাগ বাসের ক্ষেত্রেই টিকিটের অর্ধেক কাউন্টার এবং অর্ধেক অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার পুরো টিকিট ব্যবস্থাই অনলাইন করে দিয়েছেন। ফলে কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিট কিনতে আসা যাত্রীদের চাপ তুলনামূলক কম। এসআর ট্রাভেলস কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ৫০ শতাংশ টিকিট অনলাইনে দেওয়া হয়েছে।

টিকিট কাটতে আসা যাত্রী আশফিয়া আক্তার বলেন, ২৭ তারিখ রাতের টিকিটের দরকার ছিল, কিন্তু পেলাম না। টিকিট নাকি শেষ হয়ে গেছে।

হানিফ পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিটা রুটে শিডিউল অনুযায়ী যেসব গাড়ি চলে, তার বাইরেও চার-পাঁচটা অতিরিক্ত গাড়ি চালানো হবে। টিকিট মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। তবে যাত্রীদের চাপ বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে ২৫, ২৭ ও ২৮ তারিখের টিকিটের জন্য।

 

মন্তব্য

বসুন্ধরা সিটিতে ঈদের কেনাকাটার ধুম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বসুন্ধরা সিটিতে ঈদের কেনাকাটার ধুম
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

আর দুই সপ্তাহ পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। বাঙালি মুসলমানের সবচেয়ে বড় উৎসব। এ উৎসবকে আরো রঙিন ও আনন্দঘন করে তোলে নতুন পোশাক। তাই পবিত্র রমজান মাসের মাঝামাঝিতে এসে বিপণন কেন্দ্রগুলোতে এখন ভিড় জমেছে।

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে কেনাকাটার ধুম পড়েছে। ঈদের জন্য পছন্দের পোশাকটি কিনতে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকে ভিড় জমিয়েছিল ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, কেনাকাটার এই ধারা অব্যাহত থাকবে চাঁদরাত পর্যন্ত।  

বিকেলে পান্থপথের বসুন্ধরা শপিং মলে ঢুকছিলেন আরমান রেজা।

ঈদের কেনাকাটা করতে উত্তরা থেকে সপরিবারে এসেছেন। কালের কণ্ঠকে জানান, জুমার নামাজ পড়েই বিকেল ৩টার মেট্রো রেল ধরেছেন। নেমেছেন শপিং মলের অদূরে কারওয়ান বাজার মেট্রোস্টেশনে। ইচ্ছা আছে সবার জন্য কেনাকাটা করে ইফতারের আগে আবার ফিরতি মেট্রো ধরার।
স্ত্রী নাবিলা রেজা বললেন, কেনাকাটা শেষ না হলে বসুন্ধরাতেই ইফতার করবেন। স্বামী ও পুত্রের জন্য পাঞ্জাবি ও শার্ট-প্যান্ট কিনবেন। নিজের জন্য শাড়ি কেনার ইচ্ছা রয়েছে জানালেন।

এই পরিবারটির সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন কেনাকাটা করে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন রাহা ও তাহা নামের দুই বোন। রাজধানীর আজিমপুর থেকে এসেছেন তাঁরা।

দুজনই দুটি হালকা রঙের লং স্লিভলেস গাউন কিনেছেন। এ ছাড়া কয়েকটি ওয়ান পিস কিনেছেন তাঁরা। বললেন, প্রতিবারই বসুন্ধরায় কেনাকাটা করতে আসেন। একসঙ্গে সব নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক কেনা যায় এখানে। একই ব্র্যান্ডের রয়েছে একাধিক শোরুম। একটিতে পছন্দ না হলে আরেকটিতে কেনার সুযোগ আছে। পোশাক কেনা দিয়ে ঈদের উৎসবের আমেজ শুরু হয়। তাঁরাও তাই রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই কেনাকাটা শুরু করেন। আরো কয়েক দিন কেনাকাটা করতে আসতে হবে বলেও জানান এই দুই বোন। 

বসুন্ধরা শপিং মলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সকাল থেকেই কেনাকাটা করতে প্রচুর মানুষ আসে। অনেকে বিকেলে কেনাকাটা করতে এসে এখানেই ইফতার সেরে ফেলে। ইফতারের পর শুরু হয় তুমুল ব্যস্ততা। গতকাল শুক্রবার সারা দিনই ছিল ক্রেতাদের ভিড়। সন্ধ্যার পর ছিল কেনাকাটার ধুম। বিসিডিএলের ডিএমডি ক্যাপ্টেন (অব.) শেখ এহসান রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, সকালবেলা ভিড় কিছুটা কম থাকলেও বিকেল থেকে তা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যায় প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করেন। ইফতারের সময় প্রতিটা ফ্লোরে মেট বিছিয়ে দিতে হয় ক্রেতাদের ইফতারের জন্য। উৎসবের আমেজে মানুষ কেনাকাটা করতে আসছেন। তিনি জানান, সকাল ১১টায় কেনাকাটার জন্য শপিং মলের ফটক খুলে দেওয়া হচ্ছে।

বসুন্ধরার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে ইজি ফ্যাশন, আর্টিসান, টুয়েলভ, জেন্টল পার্ক, ইনফিনিটি, রিচম্যান, লুবনান, দর্জিবাড়ি, ইল্লিয়্যিন, ক্যাটস আই, এমব্রেলা, ফিট এলিগ্যান্স, রাইজ, রনেশন, প্ল্যাস পয়েন্ট, আড়ং, স্টাইল ইকো প্রভৃতি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের একাধিক শোরুম। লেভেল ফোরে রয়েছে জ্যোতি, জামদানি হাউস, নীল আঁচল শাড়িজ, কালাঞ্জলী শাড়িজ, ঢাকা জামদানি কুটির, শাড়িবাজার, শালিমার, অর্চিসহ অনেক অভিজাত শাড়ির দোকান। লেভেল ফাইভে লা রিভ, রেড এবং লেভেল সিক্সে বাটা, এপেক্স, ওরিয়ন, বে ইত্যাদির শোরুমে গতকাল বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করেছে।

শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে, এবারও মেয়েদের ঈদ পোশাকে রয়েছে সালোয়ার-কামিজের একচ্ছত্র আধিপত্য। লম্বা ও খাটো দুই ধরনের কামিজই ভালো বিক্রি হচ্ছে। চলতি ধারার নকশা আর আরামদায়ক কাপড়ের পোশাকে তরুণীদের চোখ। অন্যদিকে হালকা কাজের পাঞ্জাবি রয়েছে তরুণদের চাহিদার শীর্ষে। এবারের ঈদ গরমে পড়ছে বলে প্রধানত সুতির কাপড়ের চাহিদা বেশি। শিশুদের মাল্টিকালার ও উজ্জ্বল রঙের পোশাক আকর্ষণ করছে বেশি।

 

 

মন্তব্য
বিদেশি সহায়তায় কোপ

বেঁচে থাকার লড়াই কাজলদের

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বেঁচে থাকার লড়াই কাজলদের
কাজল

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কাজলের শরীরে যক্ষ্মা ধরা পড়েছে গেল জানুয়ারিতে। কাজল যখন যক্ষ্মা আক্রান্ত হয়, তখন তার পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি। তবে ট্রাম্প প্রশাসন বেশির ভাগ সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর তিনি ও তাঁর পরিবার পড়েছে বিপদে।

চিকিৎসা না হলে টিবি মারাত্মক হতে পারে।

কিন্তু রোগটি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরের মতো এলাকায়, যেখানে বস্তিতে থাকে ১৭ বছর বয়সী কাজল।

মা, ছোট ভাইসহ তিন সদস্যের পরিবারে কাজলই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পোশাক কারখানায় কাজ করে সে যা আয় করে তাই দিয়ে চলে পরিবারের সবাই।

জানুয়ারিতে যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ হতে পারত। সেই সময় সহায়তার হাত বাড়িয়েছিলেন দীপা হালদার, যিনি গত তিন বছর ধরে মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে আসছিলেন এবং বিনামূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।

এই উদ্যোগটি পরিচালিত হয় স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা নারী মৈত্রীর মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে তহবিল বন্ধের চিঠি পাওয়ার আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটিতে অর্থায়ন করেছিল ইউএসএআইডি।

এ পরিস্থিতিতে কাজলের চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যায়।

সে বলে, এখন নিজের ওষুধ আনতে আমাকে যেতে হবে। আমি অনেক কষ্ট করছি।

উল্লেখ্য, চিকিৎসার মাঝখানে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে যক্ষ্মার ওষুধ-প্রতিরোধী হওয়ার শঙ্কা থাকে। আর তাতে রোগটির বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং রোগীর গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পারফরম্যান্স রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইউএসএআইডির সহায়তায় বাংলাদেশে আড়াই লাখেরও বেশি নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। একই বছর ইউএসএআইডির সহায়তায় নতুন বা পুনরায় সংক্রমিত দুই লাখ ৯৬ হাজার ৪৮৭ জন নিরাময় হয়েছে বা তাদের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে।

যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাটিকে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।

বাংলাদেশে ইউএসএআইডির একটি প্রকল্পের একজন পরিচালক বলেন, আপনি রাস্তায় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করবেন, তাঁরা বলবে হ্যাঁ, এটি (যক্ষ্মা) যুক্তরাষ্ট্রই নিয়ন্ত্রণে রাখছে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, এশিয়ায় ইউএসএআইডির সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ছিল বাংলাদেশ। প্রভাবের দিক থেকে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় এর ব্যাপক প্রভাব হয়েছে। বিশেষত টিকাদান, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু কমাতে ইউএসএআইডি এ দেশে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

ইউএসএআইডি বাংলাদেশ কার্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত ১১৩টি কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেছে।

এটি বাংলাদেশের জন্য কঠিন বাস্তবতা। এখানকার সরকার গত বছর উত্খাত হয়েছে এবং অর্থনীতি নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি এবং তরুণরা কর্মসংস্থান সংকটের মধ্যে রয়েছে।

পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ তা সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প রয়েছে। রয়েছে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

একদিকে তাদের দেশে ফেরার সুযোগ নেই, অন্যদিকে ক্যাম্পের বাইরে কাজ করারও উপায় নেই। সেই কারণে জীবিকার জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মোট সহায়তার প্রায় অর্ধেকই দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে দুটি বড় বস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রেহানা বেগম। তিনি বলেন, ভেতরে ছয় লিটার রান্নার তেল এবং ১৩ কেজি চাল রয়েছে। আরো রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন এবং শুকনা মরিচের মতো নিত্যপণ্য। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) তাকে যে রেশন দিয়েছে, তা দিয়ে রেহানা ও তাঁর পরিবারকে এক মাস চলতে হবে। ৪৭ বছর বয়সী রেহানা বলেন, এত অল্প জিনিস নিয়ে আমরা কেমন করে বাঁচব? এখনই (বর্তমান রেশনেই) সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। স্বামী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে রেহানাকে এক ঘরে থাকতে হয়।

ডব্লিউএফপি বলছে, তহবিল সংকটের কারণে জরুরি সাড়াদান কার্যক্রমে ব্যাপক কাটছাঁট করতে তারা বাধ্য হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ