<p style="text-align:justify">কোরআন মুখস্থ করা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি ইবাদত ও পরম সৌভাগ্যের বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআন মুখস্থ করার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। কোরআনের হাফেজদের পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">হাফস ইবনে সুলাইমান (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা মুখস্থ করেছে, অতঃপর কোরআন যা হালাল করেছে, সে নিজের জন্য তা হালাল করেছে এবং কোরআন যা হারাম করেছে, সে নিজের জন্য তা হারাম করেছে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন ১০ জনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করা হবে, তাদের পরিণাম জাহান্নাম অবধারিত ছিল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯০৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২১৫)</p> <p style="text-align:justify">রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কোরআন মুখস্থ  </p> <p style="text-align:justify">রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওহি অবতীর্ণ হতো। ওহি অবতীর্ণ হওয়ার প্রথম দিকে তিনি মুখস্থ করে রাখার চেষ্টা করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হারিস ইবনে হিশাম (রা.) নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার কাছে ওহি কিভাবে আসে? তিনি বলেন, সব ধরনের ওহি নিয়ে ফেরেশতা আসেন। কোনো কোনো সময় ঘণ্টার আওয়াজের মতো শব্দ করে আসে। যখন ওহি আমার কাছে আসা শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি যা বলেছেন আমি তা মুখস্থ করে ফেলি। আর এরূপ শব্দ করে ওহি আসা আমার কাছে কঠিন মনে হয়। কখনো কখনো ফেরেশতা আমার কাছে মানুষের আকৃতিতে আসেন এবং আমার সঙ্গে কথা বলেন।তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই। (বুখারি, হাদিস : ২৯৮৮)</p> <p style="text-align:justify">কোরআন মুখস্থ করার আমল</p> <p style="text-align:justify">প্রতিদিন পাঁচ আয়াত বা পাঁচ লাইন করে মুখস্থ করলেও কয়েক বছরে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করা যায়। মাদরাসার হাফেজ ছাত্রদের নিয়ম-কানুন মেনে কোরআন ইয়াদ (মুখস্থ) করে রাখা সহজ। অত্যধিক গুনাহ, স্বল্প মেধা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে কোরআন মুখস্থ করা কঠিন হয়ে গেলে নিম্নোক্ত আমল করা যায়। এতে সহজেই কোরআনের হাফেজ হওয়া যায়।</p> <p style="text-align:justify">আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় আলী (রা.) তাঁর কাছে এসে বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক, আমার অন্তরে কোরআন স্থির থাকে না। আমি তো এই বিষয়ে নিজেকে সক্ষম পাচ্ছি না। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, হে হাসানের পিতা! এমন কিছু কালিমার কথা তোমাকে শিখিয়ে দেব কি, যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাকে উপকৃত করবেন এবং যাদের তুমি তা শেখাবে তাদেরও উপকৃত করবেন আর তুমি যা শিখবে তা তোমার অন্তরে স্থিত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে আপনি তা শিখিয়ে দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার রাতে তুমি সম্ভব হলে রাতের শেষ তৃতীয় ভাগে নামাজে দাঁড়াবে। কেননা এই ক্ষণটি হলো রহমত সমুপস্থিতির সময়। এ সময়ে দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়ে থাকে। আমার ভাই ইয়াকুব (আ.) তার পুত্রদের বলেছিলেন, আমার পরওয়ারদিগারের কাছে তোমাদের জন্য অচিরেই আমি মাগফিরাত ভিক্ষা করব (অর্থাৎ জুমার রাত এলে তোমাদের জন্য)। আর এই সময়ে যদি তোমার পক্ষে সম্ভব না হয় তবে মাঝ রাতে আর তা-ও সম্ভব না হলে রাতের প্রথম ভাগে দাঁড়াবে এবং চার রাকাত নামাজ আদায় করবে। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহা ও সুরা ইয়াসিন, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা ও হামিম আদ-দুখান, তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা আলিফ-লাম-মীম তানজিল আস-সাজদা এবং চতুর্থ রাকাতে সুরা ফাতিহা ও সুরা তাবারাকা (সুরা মুলক) পাঠ করবে। তাশাহুদ পাঠ শেষে আল্লাহর হামদ করবে এবং উত্তমরূপে আল্লাহর প্রশংসা করবে। আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে এবং উত্তমরূপে তা করবে। এর সঙ্গে আম্বিয়ায়ে কিরাম সবার ওপর দরুদ পাঠ করবে। মুমিন পুরুষ, মুমিন নারী এবং যেসব ভাই ঈমানের ক্ষেত্রে তোমার অগ্রবর্তী, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।</p> <p style="text-align:justify">এরপর বলবে, হে আল্লাহ! তুমি যত দিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখো সব সময়ের জন্য তত দিন গুনাহ পরিত্যাগ করার শক্তি দিয়ো। আমার ওপর রহম করো। যে কাজে কোনো উপকার নেই সে কাজে আমার লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রেখে আমার ওপর রহম করো। যেসব কাজ আমার ওপর তোমাকে করে সন্তুষ্ট, সেসব কাজে সুদৃষ্টির তাওফিক দান করো আমাকে। হে আল্লাহ! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর উদ্ভাবক, পরাক্রমসম্পন্ন ও প্রতিপত্তির মালিক, যার কল্পনাও করতে পারে না কেউ। তোমার কাছেই যাচ্ঞা করি হে আল্লাহ! হে দয়াময়! তোমারই পরাক্রমশীলতার অসিলায়, তোমার চেহারার জ্যোতির অসিলায় তোমার কিতাবের হিফজ আমার অন্তরে সুস্থিত করে দাও, যেমন তা তুমি শিখিয়েছ আমাকে। তাওফিক দান করো এমন পদ্ধতিতে যেন তিলাওয়াত করতে পারি তা, যা আমার ওপর সন্তুষ্ট করবে তোমাকে। হে আল্লাহ! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর নব সৃষ্টিকারী, পরাক্রম, সম্মান এবং এমন প্রতিপত্তির অধিকারী, যার ইচ্ছা পোষণও করা যায় না। তোমার কাছেই যাচ্ঞা করি—হে আল্লাহ! হে দয়াময়! তোমার পরাক্রমশীলতার অসিলায়, তোমার চেহারার নুরের অসিলায় তোমার এই কিতাবের মাধ্যমে আলোময় করে দাও আমার দৃষ্টিশক্তি। প্রাঞ্জল করে দাও আমার জবান, বিকশিত করে দাও আমার অন্তর। প্রশস্ত করে দাও আমার বক্ষ, ধুয়ে দাও আমার শরীর। কেননা সত্য বিষয়ে তুমি ছাড়া আমাকে সাহায্য করার আর নেই তো কেউ, তুমি ছাড়া তা দেওয়ার মতো আর নেই তো কেউ। কোনো উপায় নেই, কোনো শক্তি নেই সুউচ্চ সুমহান আল্লাহ ছাড়া। হে হাসানের পিতা (আলী)! তিন বা পাঁচ বা সাত জুমা তুমি তা করবে। আল্লাহর ইচ্ছায় তোমার বাসনা পূরণ হবে। যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন সেই সত্তার কসম! মুমিন এই ক্ষেত্রে লক্ষচ্যুত হবে না কখনো।</p> <p style="text-align:justify">ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! পাঁচ বা সাত জুমা বিরতির পর আলী (রা.) অনুরূপ এক মজলিসে আবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এলেন। বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! অতীতে আমি চার বা অনুরূপ পরিমাণ আয়াতের বেশি মুখস্থ করতে পারতাম না। পরে যখন মনে মনে পড়তাম তখন দেখতাম সবই ছুটে গেছে। আর আজ ৪০ বা তৎপরিমাণ আয়াত শিখতে পারি। পরে যখন নিজে নিজে মুখস্থ পড়ি তখন দেখি আল্লাহর এই কিতাব যেন আমার সম্মুখে বিদ্যামান। আমি হাদিস শুনতাম কিন্তু যখন আওড়াতাম, তখন দেখতাম সব ছুটে গেছে। কিন্তু আজ বহু হাদিস আমি শুনি এবং পরে যখন তা বর্ণনা করি, একটি হরফের ক্ষেত্রেও আমার কোনো ত্রুটি হয় না। এই সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, হে হাসানের পিতা! কাবার রবের কসম! তুমি তো মুমিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭০)</p> <p> </p>