<p>রংপুর নগরীতে অটোরিকশা ও তিন চাকার ইজিবাইকের দাপটে নাকাল নগরবাসী। নগরীতে যানজটের ফলে জাহাজ কম্পানির মোড় থেকে মর্ডান মোড় পর্যন্ত ১৫-২০ মিনিটের পথ যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ রংপুর মেট্রোপলিটন ও সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে পুলিশের সংখ্যা কম নয়, তাদের সংখ্যা ১৫শ থেকে ১৬শ। তারপরও যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগকে।</p> <p>সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে যানজটের চিত্র। ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল ও অফিসগামী মানুষদের। সঠিক সময়ে স্কুল ও অফিসে যেতে পারছেন না যানজটের কারণে। <br />  <br /> <strong>সবখানেই যানজট</strong><br /> রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সামনে, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, পায়রা চত্বর, জাহাজ কম্পানি মোড়, ব্যাগপট্টি, সেনপাড়া মোড়, টাউন হলের সামনে, শাপলা চত্বর, লারবাগ মোড়, স্টেশনে এলাকা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, কাচারী বাজার, কোর্ট এলাকা, বাসটার্মিনাল এলাকা, কামারপাড়া, মডার্ন মোড়, মেডিক্যাল মোড়, সাতমাথা, ইন্ডিয়া মোড়, ফায়ার সার্ভিস মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় লেগেই থাকে অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশার যানজট। </p> <p>মেডিক্যাল মোড় থেকে আসা দীর্ঘক্ষণ অটোতে বসে থাকা যাত্রী রেজাউল ইসলাম জানান, সকাল ৯টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে সুপার মার্কেটের দিকে যাবো। কিন্তু অটোরিকশা যানজটে পড়তে হয়েছে। যানজটের কারণে অটোর ভেতরেই বসে আছি এক ঘণ্টা ধরে। এমনিতেই তো অনেক গরম তার ভেতর আবার অটোরিকশার যানজট। আবার পুলিশ  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। এ অবস্থা দূর করার কারো কোনো চেষ্টাও নেই।</p> <p>রংপুর সিটি কর্পোরেশনে আসা কলেজছাত্রী সিফাত জাহান জানান, টিকা দিতে এসেছি সিটি কর্পোরেশনে। শাপলার বাসা থেকে বের হয়ে যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ যেতে এক ঘণ্টা লেগেছে। ছোট্ট একটি শহরে অটোরিকশার দাপটে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ছে, জানান তিনি।</p> <p>মুদির দোকানদার বাবলু মিয়া বলেন, যানজটের কারণে মানুষ শহরে আসতে চায় না। দীর্ঘক্ষণ যানজটে বসে থাকতে হয় অটোরিকশাতেই। অনেক দুর্ভোগ আর ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী ও নগরবাসীকে। অনেকে আবার মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেটকার নিয়ে ঢুকলেই মামলা খেতে হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার। এর ভয়ে অনেকেই আসেন না নগরীতে।</p> <p>রংপুর মহানগর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, সকাল থেকে দুপুর ও বিকেলের দিকে প্রচণ্ড যানজট লেগে থাকে। মানুষের চলাচলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যেতে সময় লাগে কয়েকগুণ বেশি। এ অবস্থা নিরসনের দায়িত্ব মেট্রোপলিটন পুলিশের।</p> <p>রংপুর সিটি কর্পোরেশনে আসা রফিকুল ইসলাম জানান, মেট্রোপলিটন পুলিশ রাস্তায় রাস্তায় মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেটকারে মামলা দেওয়ার জন্য বসে থাকে। কিন্তু যানজটে মানুষের ভোগান্তি দেখে না। পুলিশ ইচ্ছা করলে যানজট নিরসন করতে পারেন। কিন্তু তা না করে মোটরসাইকেল ধরে মামলা দেয়। এতে বাড়তি ভোগান্তি ও দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।</p> <p>রংপুর সিটি কর্পোরেশনের একজন দ্বায়িতপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, চলাচল করছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এর মধ্যে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ও লাইসেন্স দেওয়া আছে সাড়ে পাঁচ হাজার অটোরিকশার। সিটি কর্পোরেশন বলছে, প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তারপরও বিভিন্ন রোড দিয়ে তারা নগরীতে প্রবেশ করে। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছেন।</p> <p>রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা জানান, রংপুর নগরীতে অটোরিকশায় চলছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার। এগুলো বন্ধ করার বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে। অবৈধ অটোরিকশা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে সিটি করপোরেশনে যানজট নিরসন করার দায়িত্ব মেট্রোপলিটন পুলিশের। তারা এটি দেখবে। তাদের সহযোগিতা করার প্রয়োজন। সেটি কর্পোরেশন করবে।</p> <p>রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি ট্রাফিক মো. মোনহাজুল আলম জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির সময় দুপুর কিংবা বিকেলের দিকে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হয়। সেটি নিরসন করছে ট্রাফিক পুলিশ। কোনো ধরনের সমস্যা কিংবা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে না সাধারণ মানুষকে। পুলিশ সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। যদি কোথাও যানজট লেগে থাকে সেখানেই পুলিশ দ্রুত যানজট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।</p>