<p>ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সরাসরি মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েছে। কোনো কিছুতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পুলিশের এ সকল সদস্যরা নানা কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ থানা ফাঁড়িতে যোগদান করছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি না থাকায় পরিস্থিতি এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।</p> <p>জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারি দুপুরে ঝিনাইদহ ভেটেরিনারি কলেজের সামনে থেকে ৩৬ বোতল ফেনসিডিলসহ পুলিশ কনস্টেবল সাকিল আহম্মেদ ও নিশান আলীকে আটক করা হয়।</p> <p>এর আগে ২০২৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সদর থানার এসআই সাজ্জাদুর রহমানসহ তিন মাদক কারবারিকে ১২০১ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক করে র‌্যাব। মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়। </p> <p>এ ঘটনায় ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পের ডিএডি নায়েব সুবেদার মে. হুমায়ুন কবির বাদি হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় এসআই সাজ্জাদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এসআই ইদ্রিস আলীকে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে লোক দেখানো পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয় সাজ্জাদকে।</p> <p>তিনি পুলিশি পোশাকের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে মাদকের কারবার করে আসছে। পুলিশ কনস্টেবল থেকে পর্যায়ক্রমে এসআই পদে তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। তার বাড়ি পাশের জেলা মাগুরাতে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি ঝিনাইদহ জেলায় চাকরি করে আসছেন। কিছুদিন অন্যত্র বদলি হলেও ২০১৮ সালে তিনি শৈলকুপার হাটফাজিলপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পদে যোগ দেন। ২০২৪ সালের জুনে তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় যোগদান করেন।</p> <p>জানা যায়, গেল বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর টানা তিন দিন ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনসে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ওই সময় তৎকালীন পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসানকে জিম্মি করে নানা ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয়। কনস্টেবল কায়েসসহ মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত দীর্ঘদিন এ জেলায় কর্মরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে।</p> <p>সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ জেলায় কর্মরত বেশ কয়েকজন কনস্টেবল, এসআই এবং পরিদর্শকের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক অভিযোগ রয়েছে। বছরের পর বছর ঘুরে ফিরে তারা নানা পদ-পদবি ধারণ করে এ জেলায় পোস্টিং পেয়ে থাকে। এদের একটি অংশ সোনা চোরাচালান, মাদক কারবার ও মামলা বাণিজ্য করে বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন।</p> <p>জেলা সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, যাদের দায়িত্ব মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার তারাই কিনা এ কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। এটা সমাজের জন্য ভালো বার্তা বহন করে না।</p> <p>এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, এসআই সাজ্জাদুর রহমানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও মাদক কারবারে সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।</p>