<p style="text-align:justify">শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা নেওয়া উচিত। অন্যদিকে বিদেশি সরকারগুলোর উচিত সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তী প্রশাসনকে স্পষ্ট করে দেওয়া যে তারা আশা করে, একটি নির্বাচিত বেসামরিক সরকার যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে দায়িত্ব নেবে। বিশ্বব্যাপী সংকট বিশ্লেষণকারী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ নিয়ে বাংলায় এক বিবৃতিতে এই প্রত্যাশা জানিয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="বাংলাদেশে প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ঠেকানো উচিত" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/10/1723233565-95bebf4932238603ead32cd35ba5e77a.jpg" style="float:left" width="400" />‘বাংলাদেশ : সামনে দীর্ঘ পথ’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে আইসিজি বলেছে, এক মাসের বিক্ষোভের মুখে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এই বিক্ষোভে ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনীর উচিত প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ঠেকানো। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত, নিপীড়নের তদন্ত এবং গণতন্ত্র ফেরানোর কাজ শুরু করা।</p> <p style="text-align:justify">আইসিজি বলেছে, রক্তাক্ত একটি মাসের পর তাত্ক্ষণিক অগ্রাধিকার হচ্ছে নতুন যেকোনো হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করা। আর সেই হত্যাকাণ্ড বিক্ষোভকারীদের হাতে কিংবা আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত গোষ্ঠীগুলোর হাতেই হোক না কেন, তা ঠেকানো উচিত। কিন্তু বাংলাদেশকে গণতন্ত্র পুনর্গঠনের কঠিন কাজটিও শুরু করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">আইসিজি মনে করে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র গত এক দশকে মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ দেশটি যেকোনো সময়ের তুলনায় একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। বিক্ষোভ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলোই তাঁর পতনের কারণ বলে উল্লেখ করেছে আইসিজি। </p> <p style="text-align:justify">বিবৃতিতে আইসিজি বলেছে, শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারী নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসার পরিবর্তে দমন-পীড়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের পরিণতি ডেকে আনেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এরই মধ্যে সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এবং সেনাপ্রধান ও ছাত্র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ৮ আগস্ট রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">আইসিজি বলেছে, নতুন জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত শৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংবিধানে বলা হয়েছে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন হতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করেননি। দৃশ্যত ২০০৭ সালের পুনরাবৃত্তি এড়ানোর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। ওই সময় হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিক্ষোভের মধ্যে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার জন্য চাপ দিয়েছিল। তারপর সেনাবাহিনী একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করে, যা সংবিধান অনুমোদিত ১২০ দিনের বাইরে গিয়ে প্রায় দুই বছর বাংলাদেশ শাসন করে। ওই সময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেশ-বিদেশে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে।</p> <p style="text-align:justify">আইসিজি বলেছে, অন্তর্বর্তী প্রশাসন সত্যিকারার্থে প্রতিনিধিত্বশীল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আওয়ামী লীগ জায়গা পাবে কি না স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগকে রাখা হলে এর মধ্যে একটি ইতিবাচক দিক থাকবে। আওয়ামী লীগ দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার দায় নেই মনে করেন এমন একজন জ্যেষ্ঠ দলীয় নেতাকে রাখা হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অন্তত কিছু আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকের সমর্থন পেতে সাহায্য করতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">আইসিজি বলেছে, সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে ২০০৭-০৮ সালে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রচেষ্টা দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনের অভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল।</p>