<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিরপুর পল্লবীতে ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আফিফা রহমান। দুই শয়নকক্ষসহ একটি ড্রয়িংরুম/বৈঠকখানার ফ্ল্যাটটিতে ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে গুনতে হয় মাসে ১৪ হাজার টাকা। খরচ কমাতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) আরো দুই সহপাঠীর সঙ্গে কক্ষগুলো শেয়ার করেছেন তিনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আফিফা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টেল পাইনি। বাবা আমাকে নিয়ে রাজধানীর অনেক হোস্টেলে গিয়েছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সেখানে অস্বাস্থ্যকর ও অনিরাপদ পরিবেশ, অধিক ভাড়া, গাদাগাদি করে থাকা, পড়ার পরিবেশ না থাকাসহ নানা সংকটের চিত্র দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরে বাবা তাঁর পরিচিত এক বাড়িওয়ালার ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেন। এখানে বাড়িওয়ালারা পরিচিত না হলে ছাত্রীদের সিট আকারে ভাড়া দিতে চান না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আফিফার পাশের বাড়ির ফ্ল্যাটগুলোর ভাড়া ১৪ হাজার টাকা। এসব ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অনেকেই গড়ে তুলেছেন হোস্টেল বাণিজ্য, যেখানে দুই কক্ষে চারজন করে আটজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভাড়া বাবদ আদায় করা হয় ৩২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ড্রয়িংরুমে আরো দুটি সিট ভাড়া দিয়ে আদায় করা হয় ছয় হাজার টাকা। অর্থাৎ ১৪ হাজার টাকা ভাড়ার ফ্ল্যাটে ১০ জন ছাত্রী রেখে আদায় করা হয় ৪০ হাজার টাকা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীতে গড়ে ওঠা আরো কয়েকটি হোস্টেলে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ফ্ল্যাটগুলোর প্রতিটি কক্ষে তিন-চারটি চৌকি বা খাট রাখা। শুধু বিছানার কারণেই হাঁটার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এসব কক্ষ পড়ার টেবিল ও আসবাবের কারণে অনেকটা গুদামঘরে পরিণত হয়। কক্ষগুলোতে স্যাঁতসেঁতে ভাব। পড়ার পরিবেশ নেই। কিছু হোস্টেল ঘুপচি গলিতে অবস্থিত। দিনের বেলায়ও কক্ষে ঘুটঘুটে অন্ধকার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিন সিটের কথা বলে অনেক সময় চার থেকে পাঁচজন পর্যন্ত এক রুমে রাখা হয়। গাদাগাদি করে থাকার পাশাপাশি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট নিত্যদিনের ঘটনা। কখনো ফ্যান নষ্ট, আবার কখনো পানির কল নষ্ট থাকে। অভিযোগ জানালে সারাতে দুই-তিন দিন পার হয়ে যায়। খাবারের জন্য আলাদা অর্থ নিলেও তা মানসম্মত নয়। নানা সমস্যা থাকার পরও সিট হারানোর ভয়ে ছাত্রীরা এসব নিয়ে কথা বলতে চান না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিরপুর ১২ নম্বরে ফ্ল্যাট বাসায় গড়ে ওঠা সিটি লেডিস হোস্টেল, মিরপুর ১০ নম্বরে রেনু মহিলা ছাত্রী হোস্টেল, মিরপুর ১ নম্বরে মোনালিসা মহিলা হোস্টেল, মিরপুর ৬ নম্বরে ব্যতিক্রমী মহিলা হোস্টেল, মিরপুর ২ নম্বরে ডুইপ নগরীতে ক্ষণিকা মহিলা হোস্টেল, ফার্মগেটে মা ছাত্রী হোস্টেল ও নিবেদিকা ছাত্রী হোস্টেল ঘুরে এবং ভুক্তভোগী ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে উন্নত স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় পড়তে প্রতিবছর রাজধানীতে আসেন আফিফার মতো কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষা ও চাকরির পরীক্ষার জন্য আসেন আরো লাখো শিক্ষার্থী। রাজধানীতে আসা এসব শিক্ষার্থীর তুলনায় সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক আবাসন ব্যবস্থা খুবই নগণ্য। এই সংকটকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে যত্রতত্র গড়ে উঠছে বেসরকারি হোস্টেল বাণিজ্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর ফার্মগেট, গ্রিন রোড, আজিমপুর, পশ্চিম রাজাবাজার, মনিপুরিপাড়া, ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাত্রী ও কর্মজীবী মহিলাদের বেসরকারি হোস্টেলে সয়লাব। হোস্টেল মালিকদের সংগঠন হোস্টেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, রাজধানীতে চাকরির খোঁজে এবং পড়াশোনা করতে আসা প্রায় চার-পাঁচ লাখ নারী শিক্ষার্থীর আবাসন চাহিদা মেটায় বেসরকারি এসব হোস্টেল। সংখ্যায় দেড় হাজারের কাছাকাছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহিলা ও শিশু অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানটির আওতায় সারা দেশে ৯টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল পরিচালিত হয়। মোট সিটসংখ্যা মাত্র দুই হাজার ৭৩৮। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৯তম প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ২.৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান থেকে আবাসন সুবিধা পেয়েছেন। সে বছর মোট ১৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ২১ লাখ ১৩ হাজার ৮২৬ ছাত্রীর মধ্যে আবাসন সুবিধা পেয়েছেন মাত্র ৪৯ হাজার ৪২৭ জন। অন্যদিকে ১০০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ ৫৮৫ ছাত্রীর বিপরীতে আবাসন সুবিধা পেয়েছেন মাত্র চার হাজার ৬৭৪ জন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জাকিয়া আফরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, আবাসনসংকটের কারণেই বেসরকারি পর্যায়ে এসব হোস্টেল ব্যবসা গড়ে উঠেছে। তবে এ ক্ষেত্রে হোস্টেল নিবন্ধন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক। দায়বদ্ধতা না থাকলে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, এই অধিদপ্তরের জনবলসংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক হোস্টেল গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তবে নতুন করে কয়েকটি জায়গায় সরকারি হোস্টেল বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এখন শুধু প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে হোস্টেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, ২০১৭ সালে এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনপ্রাপ্ত। বর্তমানে ৪২ জন হোস্টেল মালিক এই সংগঠনের সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, সংগঠন থাকলেও সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মান তদারকির কোনো কার্যক্রম নেই। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় সংগঠনটির সভাপতি আসাদুজ্জামান টিটুর সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি। বরং তিনি বিভিন্ন সাংবাদিক নেতার পরিচয় ব্যবহার করেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ শাখার অতিরিক্ত পরিচালক হেলাল উদ্দিন ভূঞা মুঠোফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হোস্টেল ব্যবসার জন্য এখান থেকে নিবন্ধন বা তদারকির কোনো সুযোগ নেই। আমরা শুধু ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনগুলোর নিবন্ধন দিয়ে থাকি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, বাড়ি ভাড়ার নীতিমালা আছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। হোটেল ভাড়ার বিষয়েও নীতিমালা আছে। তবে এসব নীতিমালায় হোস্টেল বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে সরকারি নীতিমালাও নেই, সামাজিক দায়বদ্ধতাও দেখা যায় না। ফলে তদারকিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট জায়গায় খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তিনি জানান, নীতিমালা ও জবাবদিহির অভাবে ছাত্রী হোস্টেলের নামে অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ থাকে। এতে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে হোস্টেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হোয়াব) নামে রাজধানীতে হোস্টেল মালিকদের আরো একটি সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যদিও গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। নিবন্ধনহীন এই গ্রুপে অনেকেই চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে হোস্টেল ভাড়ার ঘোষণা দেয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি এই প্ল্যাটফরমে ছাত্রী হোস্টেলে সিট ভাড়া হবে জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেন সাদিয়া জাহান। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ রোডে ইউল্যাব ইউনিভার্সির পাশে সিট ভাড়া হবে বলে পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তিনি এই হোস্টেল বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। অপরিসর কক্ষগুলো তিন-চারজন করে ছাত্রীর কাছে ভাড়া দিচ্ছেন তিনি।</span></span></span></span></p>