<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দক্ষিণ আফগানিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ও বৃহত্তম প্রদেশ হেলমান্দ, যা বৃহত্তর কান্দাহার অঞ্চলের অংশ এবং কেন্দ্রের সুউচ্চ ভূমি থেকে দক্ষিণের ডুরান্ড লাইন পর্যন্ত বিস্তৃতি। এই অঞ্চলের প্রধান নদী হেলমান্দের নামানুসারে প্রদেশের নাম রাখা হয়েছে। হেলমান্দ আফগানিস্তানের প্রধান কৃষি অঞ্চল। দখলদারির আমলে এটা ছিল আফিম উৎপাদনের বৈশ্বিক কেন্দ্র। আবার এখান থেকেই তালেবান আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত আফগানিস্তানের নাম উচ্চারণ করলে অনুর্বর পাহাড়ি ভূমির কথা মনে আসে। কিন্তু হেলমান্দ একটি নিম্নভূমি এবং এখানে সুস্বাদু পানির প্রবাহ আছে। ১৯৫০ সালে আফগান সরকার এই অঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে মনোযোগ দেয়। ১৯৬০ সালে আফগান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলমান্দ ভ্যালি অথরিটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রতিষ্ঠা করে। অভিযোগ আছে, মার্কিনদের সহযোগিতায় হেলমান্দে আফিম চাষের বিস্তার ঘটেছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলমান্দ আফগানিস্তানের একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল, যা ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী এবং তার বুকে আছে ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন। হেলমান্দের কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হলো সুলতান মাহমুদ গজনভির প্রাসাদ, সারাওয়ান, জামিন দাওয়ার, বোলান পির সাবজি ও মুখতার। এর ভেতর কোনো কোনোটি হাজার বছর আগের প্রাচীন স্থাপনা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলমান্দের ওপর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল ব্রিটিশ বাহিনী; যদিও তারা উনিশ শতকে তা দখল করতে পারেনি। পশ্চিমা দখলদারির সময় হেলমান্দ প্রদেশ মারাত্মক ধ্বংসলীলার সাক্ষী হয়। প্রদেশের সাংগিন জেলা সেই ধ্বংসের ক্ষত বহন করে চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনী যে অঞ্চলকে সাংগিনগ্রাদ নাম দিয়েছিল, তার বেশির ভাগই পশ্চিমা বাহিনীগুলোর হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। যুগে যুগে হেলমান্দ বহু আগ্রাসন সহ্য করেছে। খ্রিস্টপূর্ব যুগে মেসিডোনিয়ার শাসক আলেকজান্ডারের বাহিনী থেকে আধুনিক যুগের ব্রিটিশ, সোভিয়েত ও পশ্চিমা বাহিনী হেলমান্দকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলমান্দ পৃথিবীর প্রাচীন জনপদগুলোর একটি। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে এখানে হেলমান্দ সভ্যতার বিকাশ ঘটে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন শহর-ই-সোখতা, মুন্দিগাক ও বামপুর তার সাক্ষ্য বহন করে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ অব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট হেলমান্দ জয় করেন। পরে এটি অশোকা সাম্রাজ্যের অধীন হয় এবং এখানে অশোকস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। তাতে গ্রিক ও অ্যারামিক ভাষায় শিলালিপি স্থাপন করা হয়। একসময় তা সূর্যপূজারি জাবুলিস্তানের অংশ হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে আবদুর রহমান বিন সামুরা (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম আরবরা হেলমান্দ জয় করে। মুসলিমরা আফগানিস্তান জয় করার পরও হেলমান্দে একাধিকবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। উমাইয়া খিলাফতের পতনের পর এখানে যথাক্রমে সাফারিদ, গজনভিদ, তৈমুরিদ, মোগল, হুতাকি ও দুররানি রাজবংশের লোকেরা হেলমান্দ শাসন করেন। গজনভিদ আমলে হেলমান্দে প্রভূত উন্নয়ন ঘটে। এখানে প্রাসাদ, মসজিদ, মাদরাসা ও সামরিক স্থাপনা গড়ে উঠেছিল। এ ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন আলাউদ্দিন ঘুরি। কেলা-ই-বোস্ত ঘুরি আমলের অন্যতম নিদর্শন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হেলমান্দের রাজধানী লস্করগাহ, বাংলায় অর্থ হয় সেনা ব্যারাক। এই নাম যদিও প্রদেশের ইতিহাসকে সামরিক বৈশিষ্ট্যের দিকে নিয়ে যায়, তবু শুধু সামরিক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে এই প্রদেশের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করলে তা অবিচারই হবে। কেননা রাজনীতি ও জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবেও হেলমান্দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। লস্করগাহের প্রাচীন নাম বোস্ত। শহরের উপকণ্ঠে শুয়ে আছেন প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ ইবনে হিব্বান বোস্তি। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও এখনো অস্তিত্ব টিকে আছে ঘুরি আমলের দুর্গ কেলা-ই-বোস্তের।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক ও ইতিহাসপ্রেমীদের দাবি, হেলমান্দের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্যঋণ : বই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হিস্ট্রি অব আফগানিস্তান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, টোলো নিউজ ও সিস্তান আর্কিওলজি.অর্গ</span></span></span></span></p>