<p>এবার নানা চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে রাজশাহীতে আলু চাষ করছেন চাষিরা। আলু লাগানোর মৌসুমের শুরুতেই বীজসংকটে হোঁচট খেয়েছেন তাঁরা। একদিকে ছিল ভালো বীজের সংকট, অন্যদিকে প্রায় দ্বিগুণ দাম। সময়মতো বীজ সরবরাহ ছিল না বলেও অভিযোগ আলু চাষিদের। জমি ভাড়া থেকে শুরু করে আলুর স্টোরেজ বুকিংয়েও গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা। আলু লাগানোর উপযুক্ত সময়ে শীতের প্রকোপ কম থাকা এবং দেরিতে শীত শুরু হওয়ায় ফলন কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এসবের সঙ্গে খাওয়ার আলু ‘আলুবীজ’ বলে চাষিদের কাছে বিক্রি করেছে প্রতারকচক্র। বীজের সংকট থাকায় প্রতারকচক্র সুযোগ নিয়েছে চাষিদের সঙ্গে প্রতারণার। খাওয়ার আলু দিনাজপুরের বীজ আলু বলে বিক্রি করেছে চাষিদের কাছে। আর এতেই ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন চাষিরা।</p> <p>রাজশাহীর তানোরের আলু চাষি আব্দুর রশিদ। সাড়ে সাত বিঘা জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। তিনি জানান, বীজ আলু কিনে প্রতারিত হয়েছেন। কারণ খাওয়ার আলু তাঁর কাছে প্রতারকচক্র দিনাজপুরের ভালো মানের বীজ আলু বলে বিক্রি করেছে। এতে করে তিনি চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। গাছ দিন দিন বড় হলেও আলু নেই গাছে; একটি গাছে একটি আলু। কোনো কোনো গাছে আবার কোনো আলুই নেই। তিনি মিঠু নামের এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে দিনাজপুরের বীজ আলু কেনেন। তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই কৃষক।</p> <p>এদিকে কৃষক রশিদের অভিযোগের বিষয়ে মিঠু বলেন, ‘আমি নিজেই দিনাজপুরের বীজ কিনে ঠকেছি। আমি ৩৮ বিঘার মধ্যে ১০ বিঘা দিনাজপুরের বীজ লাগিয়েছি, কিন্তু পাতা কোঁকড়ানো গাছে আলু হবে না। আমি বীজের ব্যবসা করি না। আমার জন্য বীজ কিনেছি, তাদের অনুরোধে সেখান থেকে কিছুটা দিয়েছি। আমি এখন কী করব? ভালো বীজের জন্য অগ্রিম টাকা দিয়েও বীজ পাইনি। বাধ্য হয়ে দিনাজপুর গেছি, আমি সেখানে কাউকে চিনিও না। আমি বেশির ভাগ বীজ নিজেই উৎপাদন করি।’</p> <p>তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়ার এক আলুর মাঠে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় আলু চাষি আজগর আলী মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার আলু চাষ করছি লসের বোঝা মাথায় নিয়ে, কারণ এবার আলু লাগাতে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। গতবারের তুলনায় বীজের দাম দ্বিগুণ, জমির ভাড়াও অনেক বেশি, কোল্ড স্টোরের ভাড়াও দ্বিগুণ। মাঠে আলুর ক্রেতা পাব না বলে মনে হয়। স্টোর মালিকরা সিন্ডিকেট করে এবার মাঠে আলু কিনতে দেবে না। স্টোরেও বুকিং শেষ। আমাদের আলু মাঠে বিক্রি না হলে স্টোরে নিয়ে যেতে বাধ্য হই। এই সুযোগে তারা বস্তার ভাড়া বাড়িয়ে নেয়। গতবার প্রতি কেজি আলুর স্টোর ভাড়া ছিল চার টাকা, এবার সেটা হয়েছে আট টাকা।’</p> <p>তিনি বীজ নিয়েও হতাশা ব্যক্ত করেন। বলেন, ‘এবার বীজের মানও খুব ভালো না, হাতে গোনা কম্পানি ছাড়া।’</p> <p>কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৪৫ হাজার টন। আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টরে। গত বছর আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার ৫৩২ টন।</p> <p>রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, ‘গতবারের তুলনায় আমরা তেমন ভাড়া বাড়াইনি। আগে বস্তা হিসাবে বুকিং হতো, এখন কেজি করা হয়েছে। কারণ ৫০ কেজির জায়গায় ৮০ কেজির বস্তা করে তারা, এতে শ্রমিকের বহনে কষ্ট হয়। শ্রম আদালতেরও নির্দেশ ৫০ কেজি। সব কিছুর দাম বেড়েছে, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তাই কিছু ভাড়া বাড়াটাও স্বাভাবিক। ভাড়ার বিষয়টি ঢাকা থেকে নির্ধারণ করা হয় জাতীয়ভাবে। আমরা কোনো সিন্ডিকেট করি না। এসব ভিত্তিহীন কথা।’</p> <p> </p>