দিল্লি সরকারের নেতৃত্বে ফের নারী মুখ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
দিল্লি সরকারের নেতৃত্বে ফের নারী মুখ্যমন্ত্রী
ভারতে দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শালিমার বাগের বিধায়ক রেখা গুপ্তাকে বেছে নিয়েছেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ছবি : এক্স থেকে সংগৃহীত

ভারতে দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শালিমার বাগের বিধায়ক রেখা গুপ্তাকে (৫০) বেছে নিলেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় নবনির্বাচিত বিধায়কদের সামনে পরিষদীয় দলের প্রধান হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রামলীলা ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী রেখাসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নেবেন।

এই ঘোষণা দিল্লি বিজেপির এক্স হ্যান্ডল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে।

দলের হিন্দি পোস্টের অনুবাদে বলা হয়েছে, ‘দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ায় রেখা গুপ্তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আমরা পূর্ণ বিশ্বাস রাখি, আপনার নেতৃত্বে রাজ্য উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।’

বিধায়করা এখন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের বাসভবনের পথে রয়েছেন, যেখানে রেখা গুপ্তা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠনের দাবি পেশ করবেন। তার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বণিক সমাজের প্রতিনিধি রেখা একসময় সংঘের ছাত্রসংগঠন এবিভিপির নেত্রী ছিলেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনের সভাপতি পদের নির্বাচনেও জিতেছিলেন তিনি। তবে এই প্রথমবার বিধায়ক হলেন তিনি। নয়াদিল্লি আসনে আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে হারানো প্রবেশ বর্মা বুধবার পরিষদীয় দলের বৈঠকে রেখার নাম প্রস্তাব করেন।

ঘটনাচক্রে ১৯৯৮ সালে দিল্লির ক্ষমতা হারানোর সময়ও বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন এক নারী নেত্রী—সুষমা স্বরাজ।

আরো পড়ুন
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণার আগেই শপথের আমন্ত্রণপত্র বিলি

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণার আগেই শপথের আমন্ত্রণপত্র বিলি

 

বিজেপির বড় ঘোষণা আসার কিছুক্ষণ পরই রেখা গুপ্তা এক্সে হিন্দিতে পোস্ট করে লেখেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর পদে আমার ওপর আস্থা রাখা এবং এই দায়িত্ব অর্পণ করার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আমি হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের এই বিশ্বাস ও সমর্থন আমাকে নতুন উদ্যম ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমি অঙ্গীকার করছি, দিল্লির প্রতিটি নাগরিকের কল্যাণ, ক্ষমতায়ন ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমি সম্পূর্ণ সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব। দিল্লিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ সুযোগের প্রতি আমি সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করতে বুধবার সকালে বিজেপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মঞ্চ ‘সংসদীয় বোর্ডের’ বৈঠক হয়। তবে ওই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের দল কিছুই জানায়নি। সেখানে ‘কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক’ হিসেবে রবিশঙ্কর প্রসাদ ঈ ওমপ্রকাশ ধনখড়ের নাম ঘোষিত হয়। সন্ধ্যায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে নবনির্বাচিত বিধায়কদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম ঘোষণা করেন দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক।

প্রসঙ্গত, ২৭ বছর পর ফের দিল্লির ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছে ৪৮টি আসনে। অন্যদিকে টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর হেরে গিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)। তারা পেয়েছে মাত্র ২২টি আসন। কেজরিওয়াল নিজের নয়াদিল্লি কেন্দ্রেই বিজেপি প্রার্থী প্রবেশ বর্মার কাছে হেরে গিয়েছেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারির গণনাপর্বের ১১ দিন পর অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রেখার নাম ঘোষণা করল পদ্মশিবির। সুষমা, শীলা দীক্ষিত, অতিশী মারলেনার পর দিল্লি পেল চতুর্থ নারী মুখ্যমন্ত্রী।

নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রথম অভিনন্দন জানান অতিশী, যিনি প্রয়োজনে সহযোগিতার প্রস্তাবও দিয়েছেন। এ ছাড়া বিজেপির নারী নেত্রী আলকা লাম্বা ও কিরণ বেদিও তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি

আরো পড়ুন
দিল্লিতে বিজেপির ঐতিহাসিক জয়, উন্নয়ন ও সুশাসনের বিজয় বললেন মোদি

দিল্লিতে বিজেপির ঐতিহাসিক জয়, উন্নয়ন ও সুশাসনের বিজয় বললেন মোদি

 
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

২০২৬ সালের শেষে মঙ্গলে যাবে স্পেসএক্সের স্টারশিপ : ইলন মাস্ক

    ২০২৯ সালে মানব অবতরণের সম্ভাবনা
অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
২০২৬ সালের শেষে মঙ্গলে যাবে স্পেসএক্সের স্টারশিপ : ইলন মাস্ক
গত ১৯ নভেম্বর টেক্সাসের বোকা চিকায় স্টারবেস থেকে স্পেসএক্স স্টারশিপের উৎক্ষেপণ। ছবি : এএফপি

স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক শনিবার জানিয়েছেন, তাদের বৃহৎ রকেট স্টারশিপ ২০২৬ সালের শেষের দিকে মঙ্গলের উদ্দেশে রওনা হবে এবং এর সঙ্গে থাকবে টেসলার মানবাকৃতির রোবট অপটিমাস। তিনি আরো বলেন, সফল অবতরণ হলে ২০২৯ সালেই মানব মিশন শুরু হতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মাস্ক বলেন, ‘স্টারশিপ আগামী বছরের শেষের দিকে মঙ্গলে যাত্রা করবে, সঙ্গে থাকবে অপটিমাস। যদি এসব অবতরণ সফল হয়, তবে ২০২৯ সালেই মানব মিশন শুরু হতে পারে, যদিও ২০৩১ সালকে বেশি সম্ভাব্য সময় বলে মনে হচ্ছে।

টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক গত বছর এক অনুষ্ঠানে অপটিমাস রোবট প্রদর্শন করেন। তিনি বলেন, একসময় এই রোবটগুলো সাধারণ কাজের পাশাপাশি বন্ধুত্বও দিতে পারবে এবং এগুলোর দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার মার্কিন ডলারের মধ্যে হতে পারে।

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী রকেট স্টারশিপই মঙ্গলগ্রহে উপনিবেশ স্থাপনের মাস্কের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রধান চাবিকাঠি। স্ট্যাচু অব লিবার্টির চেয়ে প্রায় ১০০ ফুট বেশি উঁচু ৪০৩ ফুট দীর্ঘ স্টারশিপ সম্পূর্ণ পুনঃব্যবহারযোগ্য করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসাও তাদের আর্টেমিস কর্মসূচির জন্য স্টারশিপের পরিবর্তিত সংস্করণ চায়, যা এই দশকেই চন্দ্রাভিযানে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।  

তবে এসব অভিযানের আগে স্পেসএক্সকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে, স্টারশিপ নির্ভরযোগ্য, মানুষের জন্য নিরাপদ ও মহাকাশে জটিল কক্ষপথে জ্বালানি ভরার সক্ষমতা রাখে, যা গভীর মহাকাশ অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  

ব্যর্থতা ও চ্যালেঞ্জ  
এদিকে চলতি মাসের শুরুর দিকে স্পেসএক্সের স্টারশিপ প্রোটোটাইপের সর্বশেষ পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেষ হয়, যদিও বুস্টার সফলভাবে কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। এটি ছিল আগের প্রচেষ্টার প্রায় পুনরাবৃত্তি।

উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর এবং বুস্টার বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, স্টারশিপের ওপরের অংশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘুরতে থাকে, এরপর সংকেত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া দৃশ্যমান ফুটেজে দেখা যায়, বাহামা দ্বীপপুঞ্জের আকাশে লালচে আগুনের গোলা বৃষ্টি হচ্ছে।

এটি ছিল স্টারশিপের অষ্টম মানববিহীন কক্ষপথ পরীক্ষামূলক ফ্লাইট। মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, স্পেসএক্সকে নতুন করে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেতে হলে ব্যর্থতার তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। তবে এই ব্যর্থতার পরও স্পেসএক্সের ‘দ্রুত ব্যর্থ হও, দ্রুত শিখো’ নীতিই প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মহাকাশ উৎক্ষেপণ সেবাদাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা  
অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে মাস্কের ভূমিকা ও তার ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রকদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় মাস্ক বারবার এফএএর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন এবং স্পেসএক্সের ওপর অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও পরিবেশগত বিধি-নিষেধ আরোপের অভিযোগ তুলেছেন। তবে জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ‘আমরা মঙ্গলে মার্কিন পতাকা ওড়াব।’

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

থাইল্যান্ডে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ের বিম ধসে হতাহত ৩২

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
থাইল্যান্ডে নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ের বিম ধসে হতাহত ৩২
ছবি: খুয়ান খান নিউজ সেন্টার

ব্যাংককের চম থং জেলার রামা ২ রোডের কাছে একটি নির্মাণাধীন এক্সপ্রেসওয়ে ব্রিজের একটি কংক্রিটের বিম ভেঙে পড়ে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত এবং প্রায় ২৭ জন আহত হয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার ভোরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। 

ব্যাং মোড পুলিশ রাত ১টা ৪৮ মিনিটে এই ঘটনার খবর পায়। প্রতিবেদন অনুসারে, এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশপথ থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত একটি নির্মাণাধীন কংক্রিটের বিম একটি বিদ্যমান এক্সপ্রেসওয়ের কাঠামোর ওপর ধসে পড়ে।

ফলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। ধসের সময় ঘটনাস্থলে ২০ জনেরও বেশি শ্রমিক ছিলেন।

আরো পড়ুন
ট্রাম্পকে ঘৃণার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার

ট্রাম্পকে ঘৃণার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার

 

ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজন নিহতকে উদ্ধার করা হলেও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। আরো একজনের মৃতদেহ এখনও নিখোঁজ রয়েছে।

পাঁচজনের মধ্যে তিনজন থাই নাগরিক (একজন প্রকৌশলী এবং দুইজন শ্রমিক) এবং দুইজন বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন।
আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন
হামলার শিকার হয়ে থাই সীমান্তে পালাল মায়ানমারের একদল জান্তা

হামলার শিকার হয়ে থাই সীমান্তে পালাল মায়ানমারের একদল জান্তা

 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন শ্রমিক জানিয়েছেন, কলামগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য কংক্রিট ঢালার সময় কাঠামোটি বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে। উদ্ধার অভিযানের কারণে নিকটবর্তী চম থং রোডটি সব দিক থেকে বন্ধ ছিল।

ইঞ্জিনিয়ার এবং পুলিশ ধসের কারণ অনুসন্ধান করছে।

সূত্র: ব্যাংকক পোস্ট
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

বিএলএ কারা, কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে

বিবিসি
বিবিসি
শেয়ার
বিএলএ কারা, কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে
পাকিস্তানের কোয়েটার উপকণ্ঠে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর হামলার পর আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা চেকপয়েন্টে গাড়ি তল্লাশি করছেন। ফাইল ছবি : এএফপি

বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলায় নিহতের সংখ্যা সরকারিভাবে এখনো প্রকাশ না করা হলেও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযানের সময় ৩৩ জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। কোয়েটা যাওয়ার পথে বোলান উপত্যকার কাছে চার শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেনটিতে হামলা চালানো হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) এটিই সব চাইতে বড় হামলা বলে মনে করা হচ্ছে।

বিএলএর গোষ্ঠীর দাবি, তাদের পক্ষ থেকে ওই ট্রেনের যাত্রী বেসামরিক নাগরিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

জিম্মি ছিলেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। কর্মকর্তাদের পরিবর্তে বেলুচিস্তানের যেসব রাজনৈতিক বন্দি রয়েছে, তাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছিল বিএলএ। ট্রেনে যাত্রীদের জিম্মির ঘটনার দুই দিন পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে এর আগেও হামলা চালিয়েছে বিএলএ।

জাফর এক্সপ্রেসের ওপর তাদের এই হামলা দুই দিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরের শিরোনামে ছিল। এখন প্রশ্ন হলো বিএলএ কারা এবং কেনই বা তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সক্রিয়?

বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের গোড়ার দিক থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে ধারণা করা হয়। সেই সময় পাকিস্তানে জুলফিকার আলি ভুট্টোর সরকার ক্ষমতায় ছিল। এরপর যখন সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-উল-হক ওই দেশে ক্ষমতায় আসেন, তখন বেলুচিস্তানের জাতীয়তাবাদী নেতাদের সঙ্গে তার আলোচনা শুরু হয় এবং সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসানের পর বিএলএর সদস্যরা মূলত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

কিন্তু ২০০০ সালে তারা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই সময় পারভেজ মুশারফ পাকিস্তানে ক্ষমতায় ছিলেন। সেই বছর বেলুচিস্তান হাইকোর্টের বিচারক নওয়াজ মাররিকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় খায়ের বকশ মাররি নামের এক রাজনীতিবিদ ও তার ছেলেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। সেই সময় থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও সরকারি সংস্থার উপর আক্রমণের ঘটনা বাড়তে থাকে।

এই জাতীয় অনেকগুলো ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল বিএলএ।

বিএলএর নেতা
পাকিস্তানে ২০০৬ সালে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়। সেই সময় খায়ের বখশ মাররির ছেলে বালাচ মাররিকে এই গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এরপর হঠাৎ ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বালাচ মাররির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। পরে বিএলএর পক্ষ থেকে খবরটি নিশ্চিত করে জানানো হয়, ডুরান্ড লাইনের কাছে সংঘর্ষের সময় তাদের এই নেতার মৃত্যু হয়েছে।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সেই সময় থেকে দাবি জানিয়ে আসছে, বালাচ মাররির ভাই হারবিয়ার মাররিই এখন তার উত্তরসূরি। ব্রিটেনে বসবাস করেন হারবিয়ার মাররি। তবে তিনি পাকিস্তানের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি জোরালোভাবে দাবি করেছেন, পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী তিনি কোনোরকম ‘সন্ত্রাসমূলক’ কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নন।

এদিকে আসলাম বালোচের নামও বিএলএর প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি আহত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য ভারতে চলে যান। সেই সময় বিএলএর অন্যান্য সদস্যর সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। আবার কয়েকটি প্রতিবেদন বলছে, তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার সক্রিয় হন। ডুরান্ড লাইনের আশপাশের অঞ্চলে তিনি সক্রিয় ছিলেন বলেও খবর পাওয়া গিয়েছে।

বিভিন্ন সময় বিএলএর আক্রমণ
মাজিদ ব্রিগেডের নাম সেই বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার স্মরণে রাখা হয়, যিনি বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলেন। বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে বেলুচ রাজি অজয় সাঙ্গার (বিআরএএস) নামের বিচ্ছিন্নতাবাদী জোটে যোগ দিয়েছিল।

এই জোটে বেলুচ লিবারেশন ফ্রন্ট ও বেলুচিস্তান রিপাবলিকান গার্ডও সামিল রয়েছে, যারা সশস্ত্র অভিযান চালায়। এই জোট পাকিস্তানে বহু হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকেও বহুবার নিশানা করেছে বিআরএএস। এই জোট প্রথমবার আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে ২০১৮ সালে। ওই বছর অগস্ট মাসে পাকিস্তানের চাঘি জেলায় সংগঠিত আত্মঘাতী হামলা চালায় তারা। এই হামলাকে বাস্তবায়িত করেছিলেন আসলাম বালোচের ছেলে। সেই ঘটনায় একটি যাত্রীবাহী বাসকে নিশানা করা হয়েছিল। ওই বাসের যাত্রী ছিলেন চীনের কর্মী ও প্রকৌশলীরা।

ওই বছরই আরো একটি অভিযান চালানো হয় এই জোটের পক্ষ থেকে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেটে চালানো হামলার দায় স্বীকার করে বিআরএএস। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালে বেলুচিস্তানের গোয়াদরের পার্ল কন্টিনেন্টাল হোটেলে হামলার দায়ও স্বীকার করেছিল এই জোট।

এরপর ২০২২ সালে শারি বেলুচ নামের এই গোষ্ঠীর এক নারী সদস্য করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চীনা অধ্যাপকের ওপর হামলা চালান। পরের বছর (২০২৩ সালে) সামিয়া কালান্দারানি নামের ওই গোষ্ঠীর আরেক নারী সদস্য তুরবত এলাকায় পাকিস্তান ফ্রন্টিয়ার কর্পসের (এফসি) একটি গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালান। ২০২৪ সালে বেলার একটি এফসি সেন্টারে আত্মঘাতী হামলা চালান মাহুল বালোচ নামের আরেকজন নারী।

এইবার চলতি বছরে বেলুচিস্তানের বোলান প্রদেশে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা এবং ওই ট্রেনটিকে হাইজ্যাক করার দায়ও স্বীকার করেছে বিএলএ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে বিএলএ যে কয়টি হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে এটিকে অন্যতম বড় হামলা বলে মনে করা হয়।

মন্তব্য

ট্রাম্পকে ঘৃণার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ট্রাম্পকে ঘৃণার অভিযোগে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও (বাঁয়ে) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুল ডোনে)। ছবিসূত্র: এভলিন হকস্টাইন / পুল / এএফপি।

যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পকে ‘ঘৃণা’ করার অভিযোগ এনে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুলকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে। রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অত্যন্ত বিরল পদক্ষেপ।

 সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে আমাদের মহান দেশে আর স্বাগত জানানো হবে না।

হোয়াইট হাউস এক্স অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডেল থেকে ট্রাম্পের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ইব্রাহিম রাসুল একজন বর্ণবাদী রাজনীতিবিদ, যিনি আমেরিকাকে ঘৃণা করেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ঘৃণা করেন।' 

তিনি আরো বলেন, ‘তার সঙ্গে আমাদের আলোচনা করার কিছু নেই, তাই তাকে পারসোনা নন গ্রাটা (অবাঞ্চিত বা অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি) হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’ 

আরো পড়ুন
অবশেষে আটকে পড়া মহাকাশচারীদের ফেরাতে রওনা দিল মহাকাশযান

অবশেষে আটকে পড়া মহাকাশচারীদের ফেরাতে রওনা দিল মহাকাশযান

 

ওয়াশিংটন ও প্রিটোরিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় সর্বশেষ সংযোজন এই পদক্ষেপ। গত ফেব্রুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেন।

দেশটির একটি আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, সেখানে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের কাছ থেকে জমি দখল করার অনুমতি রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার শ্বেতাঙ্গদের জমি ‘বাজেয়াপ্ত’ করছে বলে অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে গত সপ্তাহে ট্রাম্প উত্তেজনাকে আরো উস্কে দেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকদের যুক্তরাষ্ট্রে বসতি স্থাপনের জন্য স্বাগত জানান।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যেকোন কৃষক (পরিবারসহ) নিরাপত্তার কারণে সেই দেশ থেকে পালাতে চাইলে, দ্রুত নাগরিকত্বের প্রদানের সুযোগ তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন হলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী ধনকুবের ইলন মাস্ক, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সরকারকে ‘প্রকাশ্যে বর্ণবাদী মালিকানা আইন’ প্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় জমির মালিকানা একটি বিতর্কিত বিষয়। বর্ণবাদের অবসানের তিন দশক পরেও বেশিরভাগ কৃষিজমি এখনো শ্বেতাঙ্গদের মালিকানাধীন এবং দেশটির সরকার সংস্কার বাস্তবায়নে চাপের মধ্যে রয়েছে।

গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায়  জি-২০ এর একটি অনুষ্ঠানে রামাফোসা বলেছিলেন, জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তার সঙ্গে ‘চমৎকার’ কথা হয়েছে। কিন্তু পরে সম্পর্ক ‘কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে বলে মনে হয়েছে’ তার।

আরো পড়ুন
পাকিস্তানের অভিযোগের জবাব দিল আফগানিস্তান ও ভারত

পাকিস্তানের অভিযোগের জবাব দিল আফগানিস্তান ও ভারত

 

মার্কো রুবিও তার এক্স পোস্টে রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ব্রেইটবার্টের একটি প্রতিবেদন লিংক করেছেন। এতে শুক্রবার অনুষ্ঠিত বৈদেশিক নীতি সম্পর্কিত একটি সেমিনারে রাসুলের মন্তব্য সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

ব্রেইটবার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাসুল সেমিনারে বলেছেন, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ বিশ্বের ‘বর্তমান আধিপত্য ব্যবস্থার’ জন্য ট্রাম্পের ‘অসম্মান’কে অনুপ্রাণিত করছে। ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ আন্দোলন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাগত বৈচিত্র্যের প্রতি একটি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী প্রতিক্রিয়া।’

যৌবনে বর্ণবাদ বিরোধী প্রচারক রাসুল গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলি সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে নিউজসাইট জেটিওর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘বর্ণবাদী শাসনামলে দক্ষিণ আফ্রিকানরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তা ফিলিস্তিনের ক্ষেত্রে স্টেরয়েড হিসেবে কাজ করেছে।’

সূত্র: এএফপি
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ