<p>বর্তমানে অনেকেই অবসরে ইউটিউবে দেশি-বিদেশি স্কলারদের দিকনির্দেশনামূলক ওয়াজ শোনেন। অনেক ইউটিউবার মানুষকে আকর্ষণ করার জন্য স্কলারদের খণ্ডিত ওয়াজকে নিজেদের চ্যানেলে বিষয়ভিত্তিক শিরোনাম দিয়ে আপলোড করে দেন। যেহেতু শর্ট ভিডিওতে মানুষের আগ্রহ বেশি, এতে করে পুরো ওয়াজ না শোনার কারণে অনেক বিষয়ে  ভুল-বোঝাবুঝিরও সৃষ্টি হয়। তেমনি একটি বিষয় হলো ‘হাত তুলে দোয়া করা’। বর্তমানে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান মনে করেন যে হাত তুলে দোয়া করা বিদআত। তাই এটি বর্জনীয়। অথচ রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময় হাত তুলে দোয়া করেছেন।</p> <p>হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জুমার দিন মিম্বরের সোজাসুজি দরজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করল। রাসুল (সা.) তখন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। সে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলোয় চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন তাঁর উভয় হাত তুলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ! বৃষ্টি দিন। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা, মেঘের চিহ্ন বা কিছুই দেখতে পাইনি। অথচ সালআ (মদিনার একটি পাহাড়) পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। আনাস (রা.) বলেন, হঠাত্ সালআ পর্বতের পেছন থেকে ঢালের মতো মেঘ বেরিয়ে এলো এবং তা মধ্য আকাশে পৌঁছে বিস্তৃত হয়ে পড়ল। অতঃপর বর্ষণ শুরু হলো। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয় দিন পর্যন্ত সূর্য দেখতে পাইনি। অতঃপর এক ব্যক্তি পরবর্তী জুমার দিন সেই দরজা দিয়ে (মসজিদে) প্রবেশ করল। আল্লাহর রাসুল (সা.) তখন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাটও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বন্ধের জন্য দোয়া করুন। আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর উভয় হাত তুলে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে, আমাদের ওপর নয়; টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনভূমিতে বর্ষণ করুন। আনাস (রা.) বলেন, এতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা (মসজিদ থেকে বেরিয়ে) রোদে চলতে লাগলাম। শরিক (রহ.) (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কি আগের সেই লোকটি? তিনি বললেন, আমি জানি না। (বুখারি, হাদিস : ১০১৩)</p> <p>উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে রাসুল (সা.)ও হাত তুলে দোয়া করেছেন। শুধু বৃষ্টিই নয়, এ ছাড়াও রাসুল (সা.) নিজেদের প্রয়োজনে আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দা দুই হাত তুলে তাঁর কাছে চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৮৮)</p> <p>উল্লেখ্য, মাসনুন দোয়া, যেমন—খাবারের দোয়া, ঘুমানোর দোয়া, এ জাতীয় দোয়া পড়ার সময় হাত তোলার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজেদের কোনো প্রয়োজনে যদি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হয়, তবে সেখানে হাত তুলতে হয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটি নফল বিষয়, এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই।</p>