<p>‘আমার পোলায় মইরা গেলে ওর ফোন বাজে ক্যামনে? পোলায় আমার বাইচ্চা আছে। পুলিশরা হুদাই আমাগো ঘুরাইতাছে।’ ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেন আড়াইহাজার থেকে আসা নিখোঁজ আমানউল্লার মা রাহিমা বেগম। এমন অভিযোগ শুধু রাহিমা বেগমের নয়, নিখোঁজ স্বজনদের সবাই একই ধরনের অভিযোগ করেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানের দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রূপগঞ্জ থানায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন স্বজনরা।</p> <p>ঘটনার প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো তাঁদের খোঁজ না পাওয়ায় থানায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। এদিকে পুলিশ বলছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১৮২ জন নিখোঁজের একটি তালিকা তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হবে। পরে পুলিশের আশ্বাসে দুপুর ১টার দিকে স্বজনরা ফিরে যান।</p> <p>জানা যায়, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতে সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ারস কারখানার একটি ছয়তলা ভবনে একদল দুর্বৃত্ত লুটপাট করে আগুন দেয়। টানা পাঁচ দিন পর আগুন পুরোপুরি  নিয়ন্ত্রণে এলেও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনদের দাবি।</p> <p>এদিকে কারখানার ভেতরে আটকে পড়া ১৮২ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে তালিকা পেশ করে। পরবর্তী সময়ে নিখোঁজদের পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রূপগঞ্জ থানা পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে ঘটনার প্রায় সাড়ে চার মাস অতিবাহিত হলেও এখনো নিখোঁজদের কোনো হদিস মেলেনি। এমনকি থানাও জিডি নেয়নি।</p> <p>গতকাল বুধবার দুপুর ১টার দিকে পুলিশ নিখোঁজদের স্বজনদের ডেকে নতুন করে সঠিক নাম, পরিচয় ও ঠিকানা দেওয়ার জন্য বলে। পরে স্বজনরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ান।</p> <p>এর আগে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করেন।</p> <p>প্রশাসনের অবহেলার অভিযোগ করে স্বজনরা বলেন, আগুনের ঘটনার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি সরকারি কোনো সংস্থা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না প্রশাসনের লোকজন। কারখানার ভেতরে দেহাবশেষ কিছু আছে কি না, সে ব্যাপারেও অনুসন্ধান চালানো হয়নি।</p> <p>নিখোঁজ পারভেজের মা সমলা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে একটু একটু মেঘ আছিল। ওই সময় ছয়জন হলুদ জ্যাকেট পইরা ওপরে ওঠে। পরে ক্রেন দিয়া অনেক লোক নামাইয়া গাড়ি দিয়া নিয়া গেছে। ওরা পানি চাইছে—মাগো, পানি দেন, বাবাগো, পানি দেন। হেই লোকগুলা কই?’</p> <p>এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) সালাউদ্দিন কাদের বলেন, ‘তালিকায় অনেকের তথ্য পুরোপুরি দেওয়া নেই। আমরা তদন্ত করছি। আশা রাখি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত শেষ করে জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করব।’</p> <p> </p>