<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক সবুজ বনে বিকেল শেষে সন্ধ্যা নামছে। বনের চারদিক থেকে নানা রকমের প্রাণীর উপস্থিতির সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্যাঁচারা শুরু করেছে ডাকাডাকি। সেই বনের ভেতরে অনেক উঁচু উঁচু গাছপালা। তার মধ্য দিয়ে সূর্যটা কখন যে ডুবে যায়, দেখা যায় না। এমনকি দিনের বেলায় বনটির কোথাও কোথাও সূর্যের আলো তেমন একটা পড়ে না। পাহাড়ের উঁচু-নিচু ঢালে অনেক প্রজাতির গাছপালা নিয়ে বেড়ে উঠেছে বনটি। নাম তার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লাউয়াছড়া চিরসবুজ বন। আয়তন মাত্র ১২৫০ হেক্টর। পৃথিবীর অতিবিপন্ন প্রাণী উল্লুক এই বনে বাস করে, যে কারণে এ অরণ্য পৃথিবীখ্যাত। বাংলাদেশ বাদে এ প্রাণীটি শুধু ভারত, মায়ানমার ও চীনে আছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লাউয়াছড়া বনে আছে মায়া হরিণ, লজ্জাবতী বানর, চশমাপরা হনুমান, মুখপোড়া হনুমান ও কয়েক শ প্রজাতির পাখি। বনের চাপালিশ ও ডুমুরগাছে উল্লুক ও বানর বিচরণ করে। কমলাপেট ও বাদামি কাঠবিড়ালিরাও ছোটাছুটি করে সারাক্ষণ। খুব সকালে সবুজ ঘুঘু খাবার খোঁজে বনের খোলা জায়গায়। চারদিকে চোখ রেখে চুপচাপ পথ চলতে আরো দেখা যাবে সিঁদুরে সাহেলী, সিপাহি বুলবুল, কালোমাথা বুলবুলির ছোটাছুটি। দেখা মিলবে ভিমরাজ, ব্রঞ্জ ফিঙে, পেঙ্গা, নীল বসন্ত, সুইচোরা, সোনাকপালি হরবোলা, গলাফোলা ছাতারে, ছোট মাকড়ভুকসহ অনেক পাখি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভিমরাজ, কালোমাথা বুলবুলি সহজেই এ বনে দেখা যাবে। কিন্তু কালো রঙের একটি শালিক পাখি এ বনের গহিনে বাস করে, নাম এশীয় তেলশালিক। এশীয় তেলশালিক বাংলাদেশের একটি দুর্লভ আবাসিক পাখি। উপকূলীয় বন ও চিরসবুজ বনে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে এ শালিক পাখিটি আমি কয়েকবার দেখেছি। বিশেষ করে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। একে কেউ কেউ কালো শালিক বা তেল ব্যাজালি বলেও ডাকে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাহাড়ি বনের গাছগাছালির ডালে এশীয় তেলশালিকদের আনন্দ করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে বনের পাহাড়তলীর গাঁ-গঞ্জেও এশীয় তেলশালিক উড়ে আসে। নারকেলবাগান, বনের ফলের গাছে উড়ে বেড়ায়। এরা দলবদ্ধ ও সামাজিকভাবে বসবাস করে। এক দলে ২০টি পাখিও থাকে। মাঝেমধ্যে ফল খাওয়া নিয়ে অন্য পাখিদের, বিশেষত পাহাড়ি ময়নাদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি বাধায়। এ শালিকরা কর্কশ সুরে গান গায়। একনাগাড়ে তীক্ষ বাঁশি বাজানো শব্দের মতো ডেকে যেতে পারে। পোকামাকড়, জাম, বটফল, ফুলের মধুই এশীয় তেলশালিকদের প্রধান খাদ্য। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্লিম দেহের এশীয় তেলশালিকের পালক উজ্জ্বল কালচে-সবুজ। ঠোঁটটিও কালো। দেহের দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্কগুলো সম্পূর্ণ চকচকে কালচে সবুজ রঙের। চোখের মণি উজ্জ্বল লাল। কিশোর বয়সীদের শরীরের ওপরের অংশ কালচে বাদামি, নিচের অংশ হালকা হলদে সাদায় ঘেরা এবং তাতে কালচে বাদামি রঙের ডোরা আছে। তবে চকচকে সবুজের বিভিন্ন  ডোরাও থাকে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্চ-এপ্রিল মাসে গাছের ফোঁকরে ঘাস ও লতা-পাতা দিয়ে বাসা করে এরা। সাধারণত গাছের উঁচুতে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে তিনটি। রং নীল, ওপরে কালচে-বাদামি দাগ। ছানাপালন সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। বাংলাদেশ বাদে ভারত, মায়ানমার, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও  থাইল্যান্ডে তেলশালিকদের দেখা যায়। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জেও আছে। বাংলাদেশে এ শালিকের প্রকৃত সংখ্যা কত তা নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : নিসর্গী ও পরিবেশবিদ, জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টার</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"> </p>