মামা আসছে

  • আহমেদ সাব্বির
শেয়ার
মামা আসছে
অলংকরণ : তানভীর মালেক

কী আনন্দ! মামা আসছে। এইমাত্র ফোন করে জানাল বুকড়িকে। বলল, ‘আমি আসছি, তোরা তৈরি থাক।’

মামা আসার খবরে হুটোপুটি শুরু হয়ে গেল।

বাবলু মামা ঢাকায় থাকে। চাকরি করে একটি ব্যাংকে। বছরে একবার বেড়াতে আসে। যখন আসে খুশির ঢেউ খেলে যায়।

দুটি দিন হৈচৈ করে কাটায়। পিকনিক করে। ক্যারম খেলে। বাইক নিয়ে গোটা শহরে চক্কর খায়।
ছুটি ফুরিয়ে গেলে ফুড়ুত করে ফিরে যায়।

এবারও মামা আসছে। খেজুরের রস খেতে। ঝোলা গুড় দিয়ে চিতই পিঠা খেতে। চীনা হাঁসের ঝোল খেতে।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরে ওরা থাকে। দোতলা বাড়ি। তিন কামরার ফ্ল্যাট। সামনে একটি ছোট লোহার গেট। এতে লেখা—‘বাচ্চাকাচ্চারবাড়ি’। দূর থেকে সারাক্ষণ ছোটদের হৈচৈ আর বড়দের চেঁচামেচি শোনা যায়। গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি গমগম করে।

বাড়িটিতে বড় মানুষ বলতে মা আর বাবা। আর ছোট্ট দুজন ফড়িং আর বুকড়ি। ফড়িং অর্থাৎ রোদসী আর বুকড়ি মানে রাইসা। রোদসীর বয়স আট বছর। পড়ে ক্লাস থ্রিতে। সারাক্ষণ ফড়িঙের মতো তিড়িংবিড়িং করে। আর রাইসার বয়স চার বছর। সামনে দুটি দাঁত নেই। ফরফর করে পাকা পাকা কথা বলে। এ জন্য ওর নাম বুকড়ি।

প্রতিবার মামা আসার খবর পেলে রোদসী-রাইসা একটি মজার কাণ্ড করে। ওরা গেটের সামনে চেয়ার পেতে বসে যায়। না আসা পর্যন্ত পা দুলিয়ে গান গায় আর অপেক্ষা করে। মামা এলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চকোলেট না পাওয়া পর্যন্ত বাদুড়ের মতো গলায় ঝুলে থাকে। মামা যখনই আসে, ওদের জন্য খেলনা নিয়ে আসে। তবে এবার রাইসা বলেছিল, ‘মামা, তুমি সব সময় পুতুল আনো কেন? পুতুল মেয়েদের খেলনা। এবার আমার জন্য ছেলেদের খেলনা আনবে। গাড়ি, ফুটবল এই সব।’  

বাবলু মামা রাতে গাবতলী থেকে বাসে রওনা হলো। ফড়িংকে ফোনে বলল, ‘বাসে উঠেছি। সকাল ৮টার মধ্যে চলে আসব।’ মামার ফোন পেয়ে বারবার ঘড়ি দেখতে লাগল ফড়িং। আর বুকড়ি হাফপ্যান্ট ছেড়ে হলুদ রঙের শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াতে লাগল।

জানুয়ারি মাস। মাঘের কনকনে শীত। ঝকঝকে রোদ উঠেছে। মেহগনিগাছের পাতায় মিষ্টি রোদের লুটোপুটি। ভোরবেলা কম্বলের ভেতর থেকে মুখ বাড়াল দুই বোন। মামা আসবে বলে শীতকে তাড়িয়ে উঠে পড়ল।

রোদসী-রাইসা গেটের সামনে চেয়ার পেতে বসে থাকল। এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল, দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেল, কিন্তু মামার কোনো খবর নেই। ফোন বন্ধ। কত দূর এসেছে জানা গেল না। অপেক্ষা করতে করতে রাইসার হাই উঠে গেল। বাবা এসে বলল, ‘চলো নাশতা খাবে। তোমাদের মামার আসতে দেরি হতে পারে।’

বাবার কথায় দুই বোনের মন খারাপ হলো।

সকাল গড়িয়ে দুপুর। বাবলু মামার কোনো খবর নেই। বাড়ির সবাই টেনশন করতে লাগল। পথে কোনো বিপদ হলো না তো! বাবা বাস কাউন্টারে ফোন দিল। জানতে পারল, কুয়াশার কারণে বাস আসতে দেরি হচ্ছে। রোদসী-রাইসা দুপুরের খাবার খেয়ে কম্বলের ভেতর ঢুকে গেল। রাইসা বলল, ‘মামা না আসা পর্যন্ত আমরা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকব। বাইরে আসব না।’

বিকেল ৩টা। ড্রয়িংরুমের ঘড়িটি ঢং! ঢং! করে তিনবার বেজে উঠল। ঠিক তখনই গেটের সামনে একটি রিকশা এসে থামল। রিকশায় বসে আছে এক ভদ্রলোক। পোঁ পোঁ করে বাঁশি বাজাচ্ছে। বাঁশির শব্দ পেয়ে দুই বোন লাফিয়ে উঠল। খাট থেকে লাফ দিয়ে জানালায় উঁকি দিয়ে দেখল, বাবলু মামা। বাঁশি বাজিয়ে বলছে, ‘বান্দা হাজির।’ বাড়িতে খুশির ঢেউ খেলে গেল।

মামার গলার আওয়াজে ছুটে এলো মা-বাবা। চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। মা বলল, ‘কী ব্যাপার, ভাইজান! আপনার আসতে এত দেরি হলো যে? ফেরিঘাটে আটকে গিয়েছিলেন বুঝি?’

রিকশা থকে স্যুটকেসটি নামিয়ে মামা বলল, ‘বাসে ডাকাত পড়েছিল।’

‘কী সর্বনাশ!’ ভয়ে মায়ের মুখ শুকিয়ে গেল।

মামা হাসল, ‘না রে। ডাকতরা কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। যাত্রী সেজেই তিনজন ডাকাত বাসে উঠেছিল। বাসটি যশোরের কাছে আসতেই পিস্তল বের করে হুংকার দিল। ড্রাইভারকে বলল গাড়ি থামাতে। ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিতেই আমাদের সব যাত্রীকে নজরবন্দি করে ফেলল। বলল যার যা আছে দিয়ে দিতে। আমি আমার হাতব্যাগ থেকে একসঙ্গে দুটি পিস্তল বের করতেই ডাকাতগুলো ঘাবড়ে গেল। কারণ ওদের হাতের পিস্তলগুলো ছিল নকল। পিস্তল দেখে ডাকাতগুলো হাত জোড় করে বসে পড়ল। বলল, ভুল হয়ে গেছে, মামা। ক্ষমা করে দেন। তারপর ওদের আটক করা হলো। পুলিশের হাতে তুলে দিতে গিয়ে এত দেরি হলো।’

মামার কথা শুনে রোদসী হাঁ হয়ে গেল। বলল, ‘মামা তোমার কাছে পিস্তল থাকে?’

‘না রে। এগুলোও খেলনা পিস্তল। আমি তোদের জন্যই দুটি খেলনা পিস্তল কিনেছিলাম। ডাকাতরা ভেবেছিল এগুলো আসল। বিপদে খুব কাজে লেগে গেল। পিস্তল না থাকলে ডাকাতের হতে মার খেতে হতো।’

রাইসা এতক্ষণ মামার কথাগুলো হাঁ করে শুনছিল। সব শুনে ফিক করে হেসে উঠল। বলল, ‘এ জন্যই তো আমি ছেলেদের খেলনা আনতে বলেছিলাম। আমার জন্যই তুমি ডাকাত ধরতে পারলে। দাও, চকোলেট দাও।’

রাইসার কথায় সবাই হো হো করে হেসে উঠল।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

[ দেখো তো পারো কিনা ]

শেয়ার
[ দেখো তো পারো কিনা ]

নিচে মোট ছয়টি বাংলাদেশি কয়েন আছে। এখন সেখান থেকে একটি মাত্র কয়েন সরিয়ে দুটি লাইন তৈরি করতে পারবে যেখানে প্রতিটি লাইনেই চারটি করে কয়েন থাকবে?

 

♦ গ্রাফিকস : শেখ মানিক

 

মন্তব্য
[ যে বই তুমি পড়বে ]

মন্ত্রে কাজ হয়েছিল?

শেয়ার
মন্ত্রে কাজ হয়েছিল?

বার্ষিক পরীক্ষা ঘনিয়ে আসতেই টনক নড়ে ধ্রুবর। সারা বছর বলতে গেলে কোনো পড়াশোনাই হয়নি। এখন চোখে সরষে ফুল ঝিলিক দিচ্ছে। এই মুহূর্তে কোনো জাদুমন্ত্র ছাড়া আর রক্ষা নেই।

এই যখন অবস্থা, কপালগুণে পেয়েও যায় পাড়ার ফটকাবাজ বাকী ভাইকে।

মন্ত্রে কাজ হয়েছিল?পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ধ্রুবর পকেট খসায়। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওস্তাদ ম্যাজিশিয়ানের কাছ থেকে একটি মন্ত্র নিয়ে হাজির বাকী ভাই। তা এমনই এক মন্ত্র—উচ্চারণ করতে গেলে দাঁত পড়ার জোগাড়।

গুঁড়া দুধের এক খালি কৌটা দিয়ে বলে, এই কৌটা কোথাও রেখে মন্ত্রটি বারবার আওড়ে পরীক্ষা করতে হবে। ঢাকনা খোলা যাবে না। কৌটার ভেতর থেকে শব্দ ভেসে এলে বুঝতে হবে, মন্ত্র কাজে লেগেছে। আর তখন কৌটা খুললে মন্ত্রপূত জাদু সোজা তোর মাথায় ঢুকে যাবে।
তারপর যা পড়বি মুখস্থ হয়ে যাবে। তবে মন্ত্র ভুল পড়লে কোনো কাজ
হবে না।

ব্যস, পরামর্শমতো কাজ শুরু। কৌটা সামনে নিয়ে মন্ত্র আওড়াতে থাকে ধ্রুব। তখনই ঘটল আরেক ঘটনা।

কী? জানতে হলে পড়তে হবে শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়ার ‘পরীক্ষার মন্ত্র’ বইটি। কৃপণের ধন, কবরেজি তেল, রাজহাঁসের ডিম, ডাকাত, গুড়খাদকের পুত, অমির কাণ্ড, গোয়েন্দা, সফর চাচার ঝাড়ফুঁক, চোর আসে শেষ রাতেসহ মোট ১০টি মজার গল্প নিয়ে লেখা এই বই।

 

♦ কামাল হোসাইন

 

মন্তব্য

তোমাদের আঁকা

শেয়ার
তোমাদের আঁকা
অক পোদ্দার, সপ্তম শ্রেণি, বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়াল হাই স্কুল, ঢাকা

তোমাদের আঁকা

শারমীনা ফাহমদাি বর্ণা, তৃতীয় শ্রেণি, প্রতিভা মডেল স্কুল, ময়মনসিংহ

 

তোমাদের আঁকা

মাহিমা আক্তার মারিয়ম, চতুর্থ শ্রেণি, মর্নিং বার্ড চাইল্ড কেয়ার, মুন্সীগঞ্জ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
[ সেই কবিতা এই ছবি ]

পাছে লোকে কিছু বলে

    কবিতা : কামিনী রায়, আঁকা : মাসুম
শেয়ার

সর্বশেষ সংবাদ