<p>ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের পটিয়ার বিতর্কিত সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে। তাদের সবার ব্যাংক হিসাব এবং তাদের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)।</p> <p>গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>বিতর্কিত সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ছাড়াও পরিবারের বাকি সদস্যরা হলেন- সামশুল হকের স্ত্রী কামরুন নাহার চৌধুরী, ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, মেয়ে তাকলিমা নাছরিন চৌধুরী, তাহমিনা নাসরিন চৌধুরী, ছোট ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত ও মজিবুল হক চৌধুরী নবাব।</p> <p>সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক এমপি-মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি।</p> <p>দুদকের মহাপরিচালকের (তদন্ত-২) সিদ্ধান্ত মতে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সামশুল হক চৌধুরী ও তার পরিবারের ৬ সদস্যের নামে দেশের সব ব্যাংকের যেকোনো শাখায় কোনো সঞ্চয়ী/চলতি/এফডিআর/ডিপিএস/ঋণ/লকার/সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো হিসাব থাকলে সেগুলোর হিসাব বিবরণী এবং তৎসংক্রান্ত রেকর্ডপত্র/তথ্যাদির সত্যায়িত কপি অতি জরুরি বিবেচনা করে সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়।</p> <p>দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম বলেন, ‘অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে এবং ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। তথ্য পাওয়ার পর এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে।’</p> <p>এর আগে, গত ২ অক্টোবর ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাবেক এই এমপির বিরুদ্ধে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্যও আমলে নেওয়া হয়েছে।</p> <p>২০২৩ সালের ৮ মে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রামের পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। সেসময় দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।</p> <p>দুদক সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহতিপত্রটি ওইদিনই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জাতীয় সংসদ এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে পাঠানো হয়েছিল।</p> <p>২০১৯ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে এবং দুদকে বিভিন্ন ব্যক্তির করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন সাবেক হুইপ সামশুলসহ আরো বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেন। প্রায় চার বছর নামে মাত্র অনুসন্ধান করে সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর নামে হওয়া সংবাদ এবং অভিযোগের সত্যতার কোনো প্রমাণ এবং তার নামে-বেনামে কোনো অবৈধ সম্পদ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। অবশ্য অভিযুক্ত অন্য এমপিদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সেসময় সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে দুদক কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।</p> <p>এর আগে সামশুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ আয়ের অভিযোগ তোলা পুলিশ পরিদর্শক সাইফ আমিনকে আদালত সাজা দেন। তার বিরুদ্ধে সামশুল হক ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে মামলা করেন আদালতে।</p> <p>অবৈধ সম্পদ ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধানে সামশুল হক চৌধুরীকে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছিল দুদক। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। এর পরপরই দুদক তফসিলভুক্ত অবৈধ সম্পদের অপরাধ খতিয়ে দেখতে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে।</p>