<p>আমেরিকায় বসে ছেলের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মাকে। সরকার পতনের পর আদালতে পাল্টা মামলা করা হয় ১৬ জন পুলিশের নাম উল্লেখ করে। আর ওই মামলার তদন্তভারও পড়েছে একজন পুলিশ পরিদর্শকের ওপর।</p> <p>মামলার আসামিরা যেমন এখনো বহাল রয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে, তেমনি তদন্তেও নেই অগ্রগতি। অনেকেই কর্মস্থল বদল করে চাকরি করছেন। স্থানীয় আওয়ামী ঘরানার তিনজন ব্যক্তিও ওই মামলার আসামি। এ ছাড়া রয়েছে অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১৫ জন।</p> <p>তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট সকালে নগরীর খালিশপুর থানাধীন একটি বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আনিসা সিদ্দিকা নামের এক নারীকে।</p> <p>তার বয়স ৬০ বছর হলেও পুলিশের মামলায় দেখানো হয় ৪৫ বছর। ওই সময় দুই ছাত্রকেও গ্রেপ্তারের পর জামায়াত-শিবিরের কিছু বইপত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল, নগদ টাকা, এমনকি পাসপোর্ট উদ্ধার করে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আট দিন পর জামিনে মুক্তি পান আনিসা সিদ্দিকা। গ্রেপ্তারের তিন দিন আগে আনিসা সিদ্দিকার আমেরিকাপ্রবাসী ও মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষণারত ছেলে তানজিলুর রহমান ফেসবুকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্পর্কে একটি স্ট্যাটাস দেন।</p> <p>সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে নিয়েই ছিল ওই স্ট্যাটাস, যাতে সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সুখরঞ্জন বালির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। এরপর ছেলেকে না পেয়ে মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।</p> <p>দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে জামিনে মুক্ত হন আনিসা সিদ্দিকা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর মামলা করেন আনিসা।</p> <p>গত ১৪ নভেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের খালিশপুর আদালতে মামলাটি করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই গোলাম মোস্তফাকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া আসামি করা হয় তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, কেএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক, খালিশপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার গোপীনাথ কাঞ্জিলাল, খালিশপুর থানার ওসি শেখ মুনীর-উল-গিয়াসসহ কয়েকজন এসআই এবং নারী ও পুরুষ কনস্টেবলকে।</p> <p>সম্প্রতি খালিশপুর থানায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলার আসামিরা এরই মধ্যে বিভিন্ন থানায় বদলি হয়েছেন। জোনের এসিকে নেওয়া হয়েছে মেট্রো পুলিশ লাইনে। এসআই গোলাম মোস্তফা ও শেখ নূরুজ্জামান বদলি হয়েছেন কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানায়। এসআই রফিকুল বর্তমানে আছেন কেএমপির হরিণটানা থানায়। এসআই রেজোয়ান, শরীফুল ইসলাম ও রাকিবুল খুলনা থানায় বদলি হয়েছেন। সেখানে আছেন ওসি মুনীর-উল-গিয়াসও।</p> <p>যদিও এসআই রাকিবুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি ওই অভিযানে ছিলেন না, তবে ২০ আগস্টের মামলাটির প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। পরে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।</p> <p>খালিশপুর থানার বর্তমান ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আনিসা সিদ্দিকার করা মামলাটি গত ১৫ নভেম্বর আদালতের নির্দেশে রেকর্ড হয়, যাতে আসামিরা অনধিকার প্রবেশ করে চুরি করেছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু পুলিশ তো তখন পোশাক পরে অভিযানে গিয়েছিল। সবই তো জানেন, বোঝেন।’</p> <p>এ প্রসঙ্গে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘৫ আগস্টের আগের পুলিশ আর এখনকার পুলিশ এক হবে না। তদন্তকারী কর্মকর্তা নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করবেন। কে পুলিশ আর কে অন্য কেউ, সেটি তিনি দেখবেন না। আসামিকে আসামি হিসেবেই তিনি তদন্ত করবেন, এটি বলে দেওয়া আছে।’</p>