<p>নানী-দাদীদের গল্পের নতুন বউরা একেবারেই অন্যরকম। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের আগের সেই সব গল্পের বেশিরভাগ বধূরা ছিলেন লজ্জায় রাঙা, বাধা ধরা নিয়ম মেনে চলতে হতো তাঁদের। শ্বশুর বাড়ির নিয়ম মেনেই তাঁকে পরতে হতো শাড়ি-গয়না। হর-হামেশাই নববধূকে দেখতে আসতেন আত্মীয়-স্বজনসহ এ বাড়ি-ও বাড়ির লোক। নতুন বউয়ের পরনের শাড়ি, গয়না ও সাজগোজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন তাঁরা। সময় বদলেছে। বদলেছে সে সব কড়া নিয়ম-কানুন। আত্মীয়-স্বজনরা এখনো আসেন নববধূকে দেখতে। এ সময় নববধূর সাজও হওয়া চাই নজরকাড়া। প্রথাগত সাজের বাইরেও এখন নববধূরা সাজছেন নিজস্ব স্টাইল ও ট্রেন্ডে। লিখেছেন <strong>অলকানন্দা রায়</strong>।</p> <p>তবে এখনকার বউরা আগের মতো জড়োসড়ো হয়ে থাকেন না। সাচ্ছন্দ্যে তাঁরা শ্বশুরবাড়ির এ ঘর ও ঘর ঘুরে বেড়ান। নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগার বিষয়গুলো সরাসরি জানাতে কার্পণ্য করেন না অনেক নববধূ। নিজের পছন্দের গয়না-শাড়ি পরতে তাঁদের এখন আর কেউ সেভাবে বাধা দেয় না। বিয়ের মূল অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর চলতে থাকে নতুন বউকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর রীতি। দাওয়াতে নববধূর সাজ হওয়া চাই নজরকাড়া। বাড়ির ঘরোয়া আয়োজন, আত্মীয়-প্রতিবেশীদের আসা যাওয়া ও দাওয়াতে যাওয়ার সাজ নিয়ে জানালেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের স্বত্বাধিকারী ও বিউটি কনসালট্যান্ট শারমিন কচি। তাঁর মতে, ঘরোয়া পরিবেশ এবং দাওয়াতে নববধূর সাজ হওয়া চাই ছিমছাম।</p> <figure class="image"><img alt="নববধূর মায়াকাড়া সাজ" height="362" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/06-01-2025/ATOZ05.jpg" width="600" /> <figcaption><sub><em>জামদানি শাড়ি, রূপালী গয়নার সাজে নববধু হয়ে উঠতে পারেন সম্পূর্ণা।<br /> সাজ : অরা বিউটি লাউঞ্জ, শাড়ি : টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, গয়না : শৈলী, ছবি : মেহেদী জামান শান্ত </em></sub></figcaption> </figure> <p>বিয়ের আগে থেকে শুরু করে বৌভাত পর্যন্ত ভারী সাজ নিতে হয়। পরতে হয় ভারী পোশাক ও গয়না। মেকআপের ধরনও হয় ভারী। তাই বিয়ের বড় অনুষ্ঠানগুলো শেষ হওয়ার পর ঘরোয়া পরিবেশের সাজ হওয়া উচিত কম মেকআপে। চোখের কোল ভরে কাজল, লিপস্টিক ও হালকা পাউডারেই শেষ হতে পারে সাজ। রাতের অনুষ্ঠানে কিংবা বাড়িতে বিশেষ কোনো অতিথি এলে পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে সাজটা একটু বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। মুখ পরিষ্কার করে বিবি ক্রিম লাগিয়ে তাতে হালকা করে বুলিয়ে নিন ফেস পাউডার। চোখের পাতায় বুলিয়ে নিন কপার কিংবা সোনালি আইশ্যাডো। চোখের কোণে ব্যবহার করতে পারেন গাঢ় বাদামি আইশ্যাডো। অথবা পুরনো দিনের মতো কাজল বা আইলাইনারে চোখ আঁকতে পারেন গাঢ় করে। তাতে ছুঁইয়ে নিতে পারেন একটু শিমার, পাপড়িতে মাসকারা। ঠোঁটে পরুন পোশাকের সঙ্গে মেলানো রঙের লিপিস্টিক। কপালে টিপ। ব্যস, হয়ে গেল একটা ক্লাসি লুক।</p> <figure class="image"><img alt="নববধূর মায়াকাড়া সাজ" height="362" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/06-01-2025/ATOZ004.jpg" width="600" /> <figcaption><sub><em>নতুন বউয়ের সাজে নজর থাকে সবার। তাই সাজতে পারেন চিরায়ত বাঙালীবধূর সাজ</em></sub></figcaption> </figure> <p>ঘোমটার আড়ালে নতুন বউয়ের চুলের খোঁপা ঢেকে রাখার চল আর নেই। তাই চুলের সাজেও নজর দেওয়া জরুরি। চুলে বাঁধতে পারেন হাতখোঁপা। তাতে গুঁজে দিতে পারেন ছোট ফুল। নান্দনিক নকশার কোনো খোঁপার কাটাও দারুণ মানাবে। মায়া কাড়বে পিঠময় ছড়ানো চুল। নানা রকম বেণির বুননও বেশ মানাবে। কেউ চাইলে কার্লার দিয়ে চুলটা একটু কোঁকড়া করে ছড়িয়ে রাখতে পারেন।</p> <figure class="image"><img alt="নববধূর মায়াকাড়া সাজ" height="362" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/06-01-2025/ATOZ002.jpg" width="600" /> <figcaption><sup><em>কাজল, লিপস্টিক, চোকার, সরু বালায় দিনভর স্নিগ্ধ নতুন বউ</em></sup></figcaption> </figure> <p>গয়না ছাড়া নতুন বউকে ভাবাই যায় না। আবার নতুন বউ বিয়ের পরেও ভার-ভারিক্কি গয়নায় সেজে থাকবে এমন ভাবনাতেও পরিবর্তন এসেছে। আরাম, স্বাচ্ছন্দ্য, পরিবেশ, ব্যক্তিত্ব ভাবনায় রেখে বেছে নেওয়া উচিত গয়নাগাটি। এমনটাই মনে করেন শৈলীর স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার তাহমিনা শৈলী। তাঁর মতে, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে হালকা গয়নাতেই ভালো লাগে। বিভিন্ন দাওয়াত বা অতিথিদের আগমনে হালকা সোনার গয়না পরতে পারেন। গলায় পরতে পারেন চিকন চোকার, দু’তিন লহরের মুক্তার মালা। চাইলে চেইনের সঙ্গে বিভিন্ন নকশার লকেটও পরতে পারেন। কানে ঝুমকা, হাতে দুটি চুড়ি বা সরু বালার সাজে হয়ে উঠতে পারেন সম্পূর্ণা। ফ্যাশনেবল নানা ধরনের পাথর, রূপা বা অন্যান্য ধাতব গয়নাও পরতে পারেন। মেহেদীর নকশা আঁকা হাতে কাচের চুড়ি বেশ মানাবে। সাজে ভিন্নতা আনতে নাকে নথ, পায়ে নূপুর পরতে পারেন।</p> <figure class="image"><img alt="নববধূর মায়াকাড়া সাজ" height="362" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/print/Magazine%202023/06-01-2025/ATOZ003.jpg" width="600" /> <figcaption><sup><em>পছন্দের গয়না, বেনারসি বা কাতান সিল্কে নববধূর জমকালো সাজ</em></sup></figcaption> </figure> <p>রাতের অনুষ্ঠান বা দাওয়াতে গেলে হাতে থাকতে পারে  মোটা বালা বা হাতভর্তি চুড়ি। নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী গলায় সরু হার, কানে ঝোলানো দুল পরতে পারেন। সোনার গয়নার পাশাপাশি গোল্ডপ্লেটেড গয়না গড়িয়ে নিতে পারেন পাথর, পুঁতি, কুন্দন ও মুক্তা দিয়ে। মেটালের অক্সিডাইজড বা অ্যান্টিক পলিশের গয়নাও দারুণ মানিয়ে যায় নতুন বউদের। এতে গড়ে ওঠে নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্টও। কেননা নতুন বউয়ের সাজসজ্জার সময় এখনই। যা পরবে তাতেই সে হয়ে উঠবে অনন্যা। নতুন বউয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো শাড়ি। নিজের কেনা কিংবা উপহারের শাড়ি তো থাকেই, সেসব থেকেই বেছে নিতে পারেন পাটভাঙা শাড়ি। কোন রং, কোন ধরন, কোন কাজের শাড়িতে নতুন বউদের ভালো লাগে এসব ভাবনায় না গিয়ে বরং আপনার কী ভালো লাগে সেদিকে প্রাধান্য দিন। এছাড়াও লাল, চাঁপাসাদা, কালো, অ্যাশ, বাসন্তী, লাল, বাদামি, অলিভ সবুজ, ফিরোজা বা নীল রঙের শাড়ি বেছে নিতে পারেন। শুধু গাঢ় রঙের শাড়ি নয় হালকা বা বেজ রঙের শাড়িতেও চমত্কার লাগবে। শাড়ির পাড় সরু বা চওড়া যাই হোক না কেন পেটানো নকশার ও কম কাজের জমিন হলে সুন্দর লাগবে। এই সময়ের জন্য বেনারসি কাতান, জামদানি বা কাতান সিল্ক বেশ উপযোগী। পরতে আরাম এবং সামলানোও সহজ। বিয়ের পর এই ধরনের শাড়ি নতুন বউয়ের নিজস্বতায় যোগ করে আভিজাত্য। এ ছাড়া জীবনের এই সুন্দর মুহূর্ত রাঙাতে মসলিন, মণিপুরী, সুতিসহ নানা ধরনের শাড়ি পরতে পারেন।  </p>