খুব বেশি দিন আগে নয়, এ দেশে খেলাধুলার ব্র্যান্ড ছিল ফুটবল। আর সে বাজারে ফুটবলাররাই ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের পোস্টারবয়। রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হয়েও তাই আবুল হোসেন ছিলেন তাঁর ক্লাবের নয়নের মণি, প্রতিপক্ষের চরম শত্রু। সত্তরের দশকে চাঁদপুর থেকে ঘটনাচক্রে ঢাকায় এসে মোহামেডানের এই রাইট ব্যাক মাঠ মাতিয়েছেন জাতীয় দলের জার্সিতেও।
মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা কজনের ভাগ্যে জোটে!
অন্যান্য

প্রশ্ন : ফুটবল আড্ডায় আপনাকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় লম্বা থ্রোর কথা উঠে আসে সবার আগে। শুরুতেই যদি বলেন, ওই লম্বা থ্রো রপ্ত করেন কিভাবে?
আবুল হোসেন : কিভাবে যে তা করেছি, মনে হয় বাস্কেটবল খেলার মাধ্যমে।
প্রশ্ন : মোহামেডানের হয়ে ক্রিকেট মাঠে আপনাকে দেখার কথা শুনেছি পুরনো দিনের দর্শকদের মুখে। বাস্কেটবল যে খেলতেন, তা তো শুনিনি!
আবুল : আরে বলেন কী, ওই বাস্কেটবল খেলার মাধ্যমেই তো ঢাকায় আসি প্রথম।
প্রশ্ন : আলাদা কোনো অনুশীলন করতেন না? হাতের শক্তি বাড়ানোর অথবা থ্রোয়ের টেকনিক নিয়ে?
আবুল : একেবারেই না। দলের অন্যরা যে অনুশীলন করতেন, আমিও তা-ই। কোনো পার্থক্য নেই। ওই যে বললাম না, হয়তো আমার বাস্কেটবলের ব্যাকগ্রাউন্ডটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন : তবু ফুটবলে নিশ্চয়ই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই লম্বা থ্রো শুরু করেননি। প্রথম তা কিভাবে শুরু করেন? কাউকে দেখে অথবা কোনো কোচের পরামর্শ শুনে?
আবুল : বাদশা ভাইকে চেনেন তো? ক্রিকেটার হিসেবেই পরিচিত, ঢাকা আবাহনীর হয়ে ফুটবলও খেলেছেন দাপটে। ওই বাদশা ভাই লম্বা থ্রো করতেন। তা থেকে মাঝেমধ্যে গোলের সুযোগ তৈরি হতো। তবে ওনাকে দেখে যে আমি খুব অনুপ্রাণিত হয়েছি, সেটি বলা যাবে না। বরং বলতে পারি, ইরাকের ওই ফুটবলারের কথা। নাম ভুলে গেছি, তবে মনে আছে এশিয়ান ইয়ুথে খেলার জন্য ঢাকা এসেছিলেন দলের সঙ্গে। প্রতিপক্ষের অর্ধে টাচলাইনের ডান পাশ, বাঁ পাশ যেদিকেই থ্রো হয়—ওই ফুটবলার ছুটে যান। কী গতির সঙ্গে থ্রো করতেন প্রতিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে! সেটি কর্নার বা ফ্রি-কিকের সমতুল্য। তাঁর অমন থ্রো দেখে আমি সত্যিকার অর্থে অনুপ্রাণিত হই খুব।
প্রশ্ন : ঢাকায় এশিয়ান যুব ফুটবলের আসর বসে ১৯৭৮ সালে; আর আপনার ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু?
আবুল : ১৯৭৫।
প্রশ্ন : লম্বা থ্রোয়ের ব্যাপারটি তাহলে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আপনার ট্রেডমার্ক না?
আবুল : না। ১৯৭৯ সালে যখন মোহামেডানে যাই, তখনো লম্বা থ্রোয়ের জন্য আমি তত পরিচিত নই। এরপর আস্তে আস্তে নাম ফুটতে থাকে।
প্রশ্ন : থ্রোয়ের মতো আপনার কর্নারও ছিল বেশ কার্যকর। এ জন্য আলাদা অনুশীলন?
আবুল : তা করতাম। সত্যি বলতে কি, আমাদের সময়ের সব ফুটবলারই দলীয় অনুশীলন শেষ হওয়ার পর ব্যক্তিগত স্কিল বাড়ানোর অনুশীলন করতাম। আমিও কর্নার প্র্যাকটিস করতাম খুব। মোহামেডানের হয়ে আমার কর্নার থেকে হেডে অনেকে গোল করেছেন। একবার তো কর্নার থেকে আমার বল সরাসরি চলে যায় জালে। ওয়াপদার বিপক্ষে সেই গোল।
প্রশ্ন : নিশ্চয়ই গোলের জন্য মারেননি?
আবুল : কর্নার কি আর গোলের উদ্দেশ্যে মারা সম্ভব! হয়ে গেছে আর কি!
প্রশ্ন : বাস্কেটবল খেলোয়াড় থেকে ফুটবলার হওয়ার কথা বলছিলেন। বাস্কেটবলের গল্প একটু শুনতে চাই।
আবুল : আমার জন্ম চাঁদপুরে। বাবা আম্বর আলী মিয়া। মা কদর জান। আট ভাই, তিন বোনের মধ্যে আমি ৯ নম্বর। বাবার ছোটখাটো ব্যবসা ছিল, মুদি দোকানের। দোকানটি এখনো আছে, সেখানে খাবার হোটেল হয়েছে, ভাইয়েরা চালায়। আমার ছোটবেলার সময়টায় চাঁদপুরে বাস্কেটবল ছিল ভীষণ জনপ্রিয় খেলা। চট্টগ্রামের বিভাগীয় পর্যায়ে আন্ত স্কুল, আন্ত কলেজ প্রতিযোগিতায় আমাদের জেলার দল চ্যাম্পিয়ন হতো বেশির ভাগ সময়। আমি ছোটবেলা থেকে ফুটবল তো খেলতামই, বাস্কেটবলও খেলতাম সমানতালে। আমরা চাঁদপুরের কয়েকজন খেলোয়াড় ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে ঢাকায় এসে ভিক্টোরিয়ার হয়ে বাস্কেটবল লিগ খেলেছি। ওয়ান্ডারার্স, সেন্ট গ্রেগরিজ, সেন্ট যোসেফ, স্পার্স এমনসব দল ছিল লিগে।
প্রশ্ন : বাস্কেটবলে খেলতেন কোন পজিশনে?
আবুল : পাঁচজনের দলে আমি পেছনের দিকেই থাকতাম। রক্ষণে।
প্রশ্ন : কোনো টাকা-পয়সা পেয়েছিলেন?
আবুল : দূর! আমার বয়স তখন ১৭-১৮ বছর। ঢাকায় এসে খেলাটাই বিরাট ব্যাপার ছিল। সবাই মিলে চাঁদপুর থেকে আসতাম, হই-হুল্লোড় করতাম, খেলে আনন্দ পেতাম—ব্যস, এগুলোই যথেষ্ট। যাওয়া-আসার ভাড়া হিসেবে অফিশিয়ালরা মাঝেমধ্যে কিছু টাকা হাতে গুঁজে দিতেন। তা নিয়েই আমরা মহা খুশি।
প্রশ্ন : বাস্কেটবল থেকে ফুটবলে এলেন কিভাবে?
আবুল : ১৯৭৫ সালের বাস্কেটবল লিগের প্রথম পর্ব শেষে আমরা সবাই চাঁদপুর চলে যাই। দ্বিতীয় পর্বের আগের বন্ধের সময়ে। চাঁদপুরে তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে একটি ফুটবল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। ওখানে যথেষ্ট ফুটবলার পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা যে আট-দশজন বাস্কেটবল খেলতাম, সেই মহসিন, মনোয়ার, আমি, রফিক, মুকুলরা যোগ দিই ফুটবল ক্যাম্পে। আমি আগে থেকেই ফুটবল খেলতাম। চাঁদপুরে আমাদের বাস্কেটবল কোর্ট ও ফুটবল মাঠ পাশাপাশি। ফুটবলের খেলোয়াড় কম হলেই আমার ডাক পড়ত। অমল দত্ত নামে একজন ছিলেন, উনি ঢাকার ওয়ারীতে খেলতেন। তাঁর কাছ থেকে ফুটবলের অনেক কিছু শিখেছি।
প্রশ্ন : চাঁদপুরে ফুটবল ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা বলছিলেন...
আবুল : জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ফুটবল কোচ আনজাম ভাই ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন ক্যাম্পে। ওনার অধীনে অনুশীলন করতাম। ক্যাম্প শেষে বাস্কেটবল খেলতে ঢাকা চলে আসি আবার। এবার আনজাম ভাই ফুটবল খেলার জন্য ওই ক্যাম্পের আমাদের ভাগ করে নানা ক্লাবে পাঠান। আমাকে ও রফিককে বলেন আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবে ট্রায়াল দিতে। আজাদের কোচ তখন রণজিত্দা। উনি ট্রায়ালে খুশি হয়ে বলেন, ‘তুমি ক্লাবে চলে এসো, আমাদের ক্যাম্পে থাকো।’ উঠলাম আজাদ ক্লাবে। ওখানে থেকে বাস্কেটবল লিগ খেলি আর ফুটবল অনুশীলন করি। কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেল বাস্কেটবল লিগ। এরপর আজাদের হয়ে শুরু ফুটবল খেলা।
প্রশ্ন : ১৯৭৫ সালেই?
আবুল : হ্যাঁ, তখন তো ডাবল লিগ হতো। ১৯৭৫ সালের লিগের দ্বিতীয় পর্ব থেকে আমার ফুটবলার জীবন শুরু।
প্রশ্ন : এরপর?
আবুল : ফুটবলে শুরু থেকেই ভালো খেলার শুরু। তবু আজাদ স্পোর্টিং আমি ছাড়িনি। ১৯৭৯ সালে মোহামেডানে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলাম এই ক্লাবেই। মাঝে যে দলবদলের প্রস্তাব পাইনি, তা নয়। কিন্তু আমার সব সময় মনে হতো, শিকড় শক্ত করি আগে। নইলে বড় ক্লাবে গেলে খেলার সুযোগ পাব না, আমাকে আবার এমন মাঝারি সারির ক্লাবে ফিরতে হবে।
প্রশ্ন : আজাদ স্পোর্টিংয়ের মতো ক্লাবে থাকার সময়ই তো ১৯৭৮ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান?
আবুল : তারও আগে ১৯৭৭ সালে ইরানে এশিয়ান যুব ফুটবল খেলি। পরের বছর টুর্নামেন্টটি হয় ঢাকায়; তাতেও ছিলাম দলে। মূল জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যাই ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে। যা বলছিলাম, গোড়াটা বেশ শক্ত করেই ১৯৭৯ সালে মোহামেডানের মতো ক্লাবে নাম লেখাই আমি।
প্রশ্ন : এবং আপনি হয়ে গেলেন ‘মোহামেডানের আবুল’। সাদা-কালো জার্সি সেই যে গায়ে তুললেন, আর অন্য কোনো ক্লাবে গেলেন না। কেন?
আবুল : ভালোবাসার কারণে। প্রথমত সেই ভালোবাসা তৈরি হয় আশরাফ ভাইয়ের কারণে। ব্যাংকক থেকে ফিরে তো চলে যাই দেশের বাড়ি চাঁদপুর। মোহামেডানের কোচ আশরাফ ভাই ওখানে গিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন। সই করান মোহামেডানে। তাঁর মতো কিংবদন্তি আমাকে আনতে চাঁদপুর এসেছেন, এটি অনেক বড় ব্যাপার। পরে ক্লাবের পরিবেশ, সমর্থক সব মিলিয়ে ভালোবাসা আরো গাঢ় হয়। যে কারণে মোহামেডান ছাড়ার কথা কখনো ভাবিনি।
প্রশ্ন : প্রস্তাব নিশ্চয়ই পেতেন?
আবুল : তাতো অবশ্যই। মোহামেডানের চেয়ে বেশি টাকা সাধত আবাহনী-ব্রাদার্স। টাকার লোভ থাকলে চলে যেতাম। কিন্তু ওই লোভটা কখনো ছিল না। বরং মোহামেডানের ভালোবাসার গুরুত্ব আমার কাছে বেশি।
প্রশ্ন : টাকা-পয়সার কথা যখন উঠলই, তখন একটা ব্যাপার জানতে চাই। বাস্কেটবল খেলে কোনো টাকা পাননি জানিয়েছেন। ফুটবলে?
আবুল : নাহ্, ফুটবলে টাকা পেয়েছি প্রথম থেকেই। আজাদের হয়ে ১৯৭৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগ লিগ যে খেললাম, সেবার মনে হয় পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিয়েছিল। পরের তিন মৌসুমেও ভালো টাকা পাই।
প্রশ্ন : আর মোহামেডানে?
আবুল : ৩৫ হাজার টাকার চুক্তিতে প্রথম নাম লেখাই মোহামেডানে। এরপর ১৯৯৩ সালে অবসর নেওয়া পর্যন্ত এই ক্লাবেই। কখনো টাকার জন্য দেনদরবার করিনি। কখনো ক্লাব অফিশিয়ালদের বলিনি, আবাহনী কিংবা ব্রাদার্স আমাকে এত টাকা দিতে চায়, এর চেয়ে বেশি দিতে হবে। আমি ব্যাপারটা রেখে দিই মোহামেডানের অফিশিয়ালদের ইনসাফের ওপর।
প্রশ্ন : সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেয়েছেন কত?
আবুল : মৌসুমে তিন লাখ টাকা।
প্রশ্ন : সামসুল আলম মনজুর মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড় মোহামেডান ছাড়ার পর সে জায়গায় ক্লাব আপনাকে নেয়। তা কতটা চাপের ছিল?
আবুল : এটি ঠিক যে আমাকে মনজু ভাইয়ের ২ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। কিন্তু সরাসরি ওনার জায়গায় নেওয়া হয়েছে—তা হয়তো না। কারণ আমি আজাদে খেলতাম মূলত লেফট ব্যাকে। মোহামেডানের শুরুও লেফট ব্যাকে। রাইট ব্যাকে তখন মজিদ খেলত। লিগ শুরুর আগের টুর্নামেন্টে ফায়ার সার্ভিসের বিপক্ষে খেলায় বাঁ হাঁটুতে ব্যথা পাই। কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারিনি। পরে অনুশীলনে ফিরে বুঝি ইনজুরির কারণে বাঁ পায়ে জোর কিছুটা কমে গেছে। ওদিকে রাইট ব্যাকে মজিদ খুব একটা ভালো খেলছিল না। মোহামেডানের কোচরা তাই বলেন, আমাকে রাইট ব্যাকে চলে আসতে। এভাবেই শুরু।
প্রশ্ন : ফুটবলপ্রেমীদের ফ্যান্টাসিতে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একাদশ তৈরির সময় লেফট ব্যাকে খুব বেশি ফুটবলার পাওয়া যায় না। কিন্তু রাইট ব্যাকে মনজু-টুটুল-আবুলের মতো তিনজন রয়েছেন। এ তিনের মধ্যে আপনি কাকে এগিয়ে রাখবেন?
আবুল : নিজের কথা নিজে বলি কী করে! যাঁরা আমার খেলা দেখেছেন, তাঁরা বলবেন...
প্রশ্ন : মোহামেডানের কিংবদন্তি ফুটবলার ও দীর্ঘদিনের ম্যানেজার মেজর হাফিজ উদ্দিন নাকি সব সময় বলতেন, ‘মনজু দারুণ ফুটবলার হলেও আমি আবুলকে একাদশে রাখব। কারণ ওর ওপর সব সময় নির্ভর করা যায়।’
আবুল : বললে তো বলেছেনই। আমি নিজের কথা বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ঠিক আছে, তাহলে অন্য দুজন মনজু-টুটুলের একটা তুলনা করেন। তাঁদের মধ্যে কাকে এগিয়ে রাখবেন?
আবুল : দুজনই ওভারল্যাপিংয়ের মাস্টার। দেখার জন্য খুব সুন্দর। টুটুল ভাইয়েরটা একটু বেশিই সুন্দর। কী অবিশ্বাস্য সাবলীলতায় আক্রমণভাগে উঠে আসতেন! মনজু ভাইয়েরও ভালো, তবে একটু কম ভালো। তবে রক্ষণ সামলানোয় তিনি আবার টুটুল ভাইয়ের চেয়ে দক্ষ। দুজনের মধ্যে দর্শক হিসেবে আমি টুটুল ভাইয়ের খেলা দেখতে চাইব; তবে কোচ হিসেবে দলে নিতে চাইব মনজু ভাইকে।
প্রশ্ন : পুরনো দিনের ফুটবল-দর্শকদের কথা, আপনি ‘চোরা মাইর’-এর ওস্তাদ। এমনভাবে প্রতিপক্ষকে মারতেন, যেটি রেফারির চোখ এড়িয়ে যেত, কিন্তু ওই খেলোয়াড়ের ‘খবর’ হয়ে যেত। সত্যি?
আবুল : (হাসি) সবাই বলে আর কি! আমার কথা হলো, রেফারি আছেন একজন, লাইন্সম্যান আরো দুজন। তাঁরা তিনজন মিলে আমার একজনের ‘চোরা মাইর’ ধরতে পারবে না কেন! আর না যদি পারে, তাহলে আমি তা মারব না কেন!
প্রশ্ন : মোহামেডানের ফুটবল ইতিহাসের সফলতম মৌসুম ১৯৮২ সালে আপনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। পেছন ফিরে তাকালে কতটা গর্ব হয়?
আবুল : অবশ্যই গর্ব হয়। সেবার লিগ, ফেডারেশন কাপ, ভারতে আশীষ-জব্বার স্মৃতি টুর্নামেন্টসহ অনেকগুলো শিরোপা জিতি আমরা। সবগুলোতে আমি অধিনায়ক ছিলাম না। আশীষ-জব্বারে সম্ভবত বাদলদা অধিনায়ক। তবে লিগে মোহামেডানের নেতৃত্ব ছিল আমার হাতে। ওখানে দল চ্যাম্পিয়ন হয় আর ২৭ গোল করে সালাম মুর্শেদী হয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। ওর সঙ্গে আজাদ স্পোর্টিংয়ে একসঙ্গে খেলেছি। পরে বিজেএমসি হয়ে মোহামেডানে এসেছে। হ্যাঁ, গোলাম সারোয়ার টিপু ভাইয়ের অধীনে আমাদের ওই ১৯৮২ সালের দলটি ছিল দুর্দান্ত।
প্রশ্ন : সে বছর মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে গ্যালারিতে দর্শকদের মারামারির জের ধরে আবাহনীর চার ফুটবলারকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সে খেলায় আপনি তো ছিলেন মোহামেডানের অধিনায়ক। ওই ঘটনা কি মনে আছে?
আবুল : তখন মোহামেডান-আবাহনী খেলা মানেই মারামারি। মাঠে লড়াই, গ্যালারিতে লড়াই—সব জায়গায়। সেদিনও তা-ই হয়েছিল। তবে এমন বাড়তি কিছু হয়নি যে, সে কারণে আবাহনীর চার খেলোয়াড়কে ধরে জেলে নিয়ে যেতে হবে। কেন তা হয়েছিল, আমি জানি না। জানি না, ওদের ওপর সরকারের কোনো আক্রোশ ছিল কি না! রাতেই আমরা খবরটি পাই। অবশ্যই খারাপ লাগে। কারণ আবাহনীর হলেও ওরা তো আমাদের মতোই ফুটবলার।
প্রশ্ন : জাতীয় দলের কথা একটু যদি বলেন?
আবুল : ’৭৮ সালের ব্যাংকক এশিয়ান গেমসের কথা তো বলেছি আগেই। এরপর প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ খেলেছি। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়ান গেমসে আমি ছিলাম দলের সহ-অধিনায়ক। মূল অধিনায়ক মোতালেব শেষ ম্যাচে খেলেনি। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে সে ম্যাচে আমি বাংলাদেশের অধিনায়ক। ওদের হারিয়ে দিই আমরা। এই জয়ের গুরুত্ব অনেক। কারণ এরপরই বাংলাদেশকে আবার মারদেকা টুর্নামেন্ট খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানায় মালয়েশিয়া। মাঝের কয়েকটি টুর্নামেন্টে আমাদের ওরা ডাকেনি। যাই হোক, ১৯৮৩ সালের সেই মারদেকাতেও আমি দলের অধিনায়ক হিসেবে যাই।
প্রশ্ন : ১৯৮৪ সালের প্রথম সাফে?
আবুল : না, সে দলে আমাকে ডাকেনি।
প্রশ্ন : ১৯৮৫ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় সাফে?
আবুল : সেবারও ডাক পাইনি।
প্রশ্ন : কেন!
আবুল : কেন, তা ওই সময়ের জাতীয় দলের কোচ-কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। আমার কাজ খেলা, আমি মোহামেডানের জার্সিতে সারা বছর মনপ্রাণ উজাড় করে খেলেছি। তবু ডাকা হয়নি জাতীয় দলে। বাংলাদেশের জার্সিতে এশিয়ান গেমস খেলেছি, মারদেকা টুর্নামেন্ট খেলেছি—একটু আগে বললাম না, ওগুলোতে দলের অধিনায়কও ছিলাম। প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপেও একবার বোধহয় সবুজ দলের অধিনায়ক ছিলাম। কিন্তু সাফে কখনো আমাকে ডাকেনি।
প্রশ্ন : ’৮৪, ’৮৫, ’৮৭, ’৮৯—কোনো সাফেই দলে ডাক পাননি, এটি বেশ বিস্ময়কর। মনে হলে কষ্ট লাগে না?
আবুল : কষ্ট আর কী! ওনাদের ইচ্ছা হয়নি, নেননি। এ নিয়ে আমি এত ভাবি না। তখনো ভাবতাম না, আর এখন অত ভাবনার কিছু নেই।
প্রশ্ন : ১৯৮৩ সালের মারদেকাতেই কি জাতীয় দলের হয়ে শেষবার খেলেছেন?
আবুল : না। ’৮৫ না ’৮৬ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ হলো যে, ওই দলে ডেকেছিল। ওটাই শেষ।
প্রশ্ন : ক্যারিয়ারের স্মরণীয় কিছু ম্যাচের কথা জানতে চাই।
আবুল : আমার কাছে সবচেয়ে স্মরণীয় ১৯৮৬ সালে আবাহনীর বিপক্ষে লিগের ম্যাচটি। মনু ও ইলিয়াসের গোলে আমরা জিতি ২-০ গোলে। জেতার কথা ছিল না। কারণ ওই খেলার আগে চিমা, মনোরঞ্জন, ভাস্কর গাঙ্গুলিকে আবাহনী নিয়ে আসে। আগে থেকেই ছিল প্রেমলাল, পাকির আলী। সবাই ভেবেছিল, মোহামেডান হেরে যাবে। বিশেষত চিমাকে নাকি কেউ আটকাতে পারবে না। ক্লাব থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওকে আটকানোর। সেদিন কায়সার হামিদের সঙ্গে আমি খেলি স্টপার হিসেবে। রাইট ব্যাকে মন্টু, লেফট ব্যাকে জনি। কেমন খেলেছি, জানি না। তবে মোহামেডানের দর্শকদের মুখে শুনেছি, ‘চিমাকে কিমা বানিয়ে দিয়েছে আমাদের আবুল’। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে, বলুন! এ ছাড়া ইলিয়াস যে গোল দেয়, সেটি আমার থ্রো থেকে। সব মিলিয়েই এটি সবচেয়ে স্মরণীয়।
প্রশ্ন : দর্শকদের মুখে ‘চিমাকে কিমা বানানোর’ কথা বললেন। ঢাকার মাঠের সেই দর্শকদের মুখে মুখে আপনার এক আদুরে নামও তো ছিল—‘রিকশাওয়ালা’। রিকশার প্যাডেল মারার মতো দৌড়াতেন বলে...
আবুল : হ্যাঁ, রিকশাওয়ালা নামে দর্শকরা আমাকে ডাকত। মোহামেডানের সমর্থকরা ভালোবেসে, আবাহনীর সমর্থকরা ডাকত হয়তো ভয় পেয়ে। মনজু ভাইয়ের নাম যেমন ছিল ‘নূরা পাগলা’। দর্শকদের দেওয়া ‘রিকশাওয়ালা’ নাম এমনিতে হয়তো ভালো না। কিন্তু বললাম না, মোহামেডান-আবাহনীর সমর্থকরা কেন আমাকে তা ডাকত। সেটি ভাবলে এই নামও খারাপ লাগার কারণ নেই।
প্রশ্ন : ডিফেন্ডার হিসেবে কাকে সামলানো সবচেয়ে কঠিন ছিল?
আবুল : মোহামেডানে আমি রাইট ব্যাকে খেলতাম তো। আবাহনীর লেফট উইঙ্গার চুন্নু ছিল ভয়ংকর। খুব দ্রুতগতির আর যে প্যাঁচ মারত! চুন্নুর বিপক্ষে খেলাই ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং।
প্রশ্ন : রক্ষণভাগে কার সঙ্গে খেলে মজা পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি?
আবুল : ওই আমলে অনেক ভালো ভালো ডিফেন্ডার ছিল। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগত কায়সার হামিদের খেলা। এত ঠাণ্ডা মাথায় খেলত! মোহামেডানের রক্ষণভাগে যখনই পাশে কায়সারকে দেখতাম, একটা ভরসা পাওয়া যেত। মনে হতো, আমি কোনো ভুল করলেও দলকে বাঁচানোর জন্য কায়সার তো রয়েছে।
প্রশ্ন : গোলরক্ষক হিসেবে সেরা?
আবুল : আমি শান্টু ভাইকে এক বছর পেয়েছি। তাকে মূল্যায়ন তাই করতে পারব না। কিন্তু শান্টু ভাইয়ের পর থেকে ধরলে বাংলাদেশের সেরা গোলরক্ষক মহসিন। ’৮২-র এশিয়ান গেমসে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের কথা বললাম না! সেই ম্যাচ তো আমাদের জিতিয়েছে মহসিন। অনেকগুলো অবিশ্বাস্য সেভ করেছে। সেদিন ও কেমন খেলেছে, যাঁরা দেখেনি তাঁরা তা বিশ্বাস করবে না। গোলরক্ষক হিসেবে আমার সেরা তাই মহসিন।
প্রশ্ন : তখন তো অনেক উন্নতমানের বিদেশি ফুটবলার এসে খেলেছেন ঢাকা লিগে। ওই বিদেশিদের মধ্যে আপনার কাছে সবচেয়ে সেরা কে?
আবুল : আমি বলব নালজেগারের কথা। মিডফিল্ড থেকে মোহামেডানের পুরো দলের খেলা চালাত।
প্রশ্ন : শুরুতে বাস্কেটবলের কথা বলছিলেন। শেষের দিকে এসে ক্রিকেটের কথা যদি একটু বলেন...
আবুল : (হাসি) ক্রিকেট তো খেলতাম না, খালি ফিল্ডিং দিতাম। আসলে মোহামেডানের তখনকার ক্রিকেট দলে অনেকেই ছিলেন চাকরিজীবী। দৌলত ভাই, সাজু ভাই, ফারুক ভাই—আরো অনেকে। ক্রিকেটের জন্য তাঁদের ছুটি কিন্তু সকালে অফিসে গিয়ে সই তো অন্তত করে আসতে হবে। ৯টায় ক্রিকেট খেলার শুরুর সময় তাই তাঁদের পাওয়া যেত না। আমরা ফুটবলাররা ততক্ষণে ভোরের অনুশীলন সেরে ক্লাবে ফিরছি। কোনোমতে গোসল সেরে দ্রুত সাদা শার্ট-প্যান্ট পরে তাই চলে যেতাম ক্রিকেট মাঠে। আমি, প্রতাপদা, কায়কোবাদ ভাই এমন কয়েকজন ‘প্রক্সি’ দিতাম মোহামেডানের চাকরিজীবী ক্রিকেটারদের। ওনাদের জায়গায় ফিল্ডিং করতাম। ওনারা অফিসে সই করে মাঠে এলে আমরা মাঠ থেকে চলে যেতাম আবার ক্লাবে।
প্রশ্ন : ফুটবল থেকে অবসর নেন কবে?
আবুল : ১৯৯৩ সালে। আসলে ফুটবল থেকে না, ফুটবল খেলা থেকে অবসর নিই। মাঠের মায়া ছাড়তে পারিনি। কর্মকর্তা আকমল ভাই এক কোচিং কোর্সে শ্রীলঙ্কায় পাঠান ১৯৯৫ সালে। ওখান থেকে ফিরে যোগ দিই মোহামেডানের সহকারী কোচ হিসেবে।
প্রশ্ন : পরে তো মূল কোচও হন। মোহামেডানের সর্বশেষ লিগ শিরোপা আসে আপনার কোচিংয়ে।
আবুল : সেবার আমরা মৌসুমে তিনটি শিরোপা জিতি। এটি আমার জন্য ভীষণ গর্বের। আবার যখন মনে হয়, ওই লিগ শিরোপার পর ১৫-১৬ বছর পেরিয়ে গেছে, মোহামেডান আর কোনো লিগ জেতেনি—কী যে খারাপ লাগে! কত নামিদামি কোচ এসেছেন, শুনতে পাই ভালো খেলোয়াড়দের দিয়ে দল গঠন করে। কিন্তু লিগ আর মোহামেডান জিততে পারে না। এটি অবশ্যই দুঃখজনক।
প্রশ্ন : একটু ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাই। বিয়ে করেন কবে?
আবুল : বিয়ে একটু দেরিতেই; ১৯৯১ সালে। স্ত্রীর নাম নূর নাহার। আমাদের দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়ে সাদিয়া হোসেন এখন জার্মানিতে থাকে। ছেলে আবিদ হোসেন ফুটবল ট্রায়াল দিচ্ছে মোহামেডানে। আর ছোট মেয়ে ফাইজা হোসেন আমাদের সঙ্গে থাকে আমেরিকায়।
প্রশ্ন : দেশের বাইরে রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। দেশ ছাড়লেন কেন?
আবুল : আমার স্ত্রী আমেরিকায় ইমিগ্রান্ট ভিসা পায়। সে জন্যই ২০০৪ সালে চলে যাই। তবে আমেরিকায় থাকলেও মনটা সব সময় বাংলাদেশে পড়ে থাকে। আমি তো সুযোগ পেলেই দেশে আসার চেষ্টা করি। গত বছর এসেছিলাম। এবারও এসেছি প্রায় চার মাস হয়ে গেল। ছেলে আবিদের ফুটবলের ঝোঁক; মোহামেডানের ট্রায়ালে আছে। ওকে সঙ্গ দেবার জন্যও আসি এখানে।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন। জীবন নিয়ে, ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার তৃপ্তি কতটা? কোনো আক্ষেপ রয়েছে কি না?
আবুল : যখন খেলেছি, আনন্দ নিয়ে খেলেছি। আক্ষেপের কিছু নেই। টাকা-পয়সার কথা তুলতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে সেটি বড় ব্যাপার না। মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা কজনের ভাগ্যে জোটে! কিছুদিন আগে সাফ ফুটবল হলো। বাংলাদেশের খেলাগুলো দেখেছি মোহামেডানের গ্যালারিতে বসে। আমাকে দেখে কত সমর্থক দৌড়ে এসেছে! সালাম দিয়েছে, ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করেছে। অথচ খেলা ছেড়েছি সেই কত আগে! দেশই তো ছেড়েছি আজ ১৪ বছর হয়ে গেল। তবু মানুষ আমাকে এখনো এত ভালোবাসে। বিশেষত মোহামেডানের সমর্থকরা। সে ভালোবাসা পেয়ে কী যে আনন্দ হয়! টাকা-পয়সা দিয়ে সে আনন্দ মাপা যাবে না।
সম্পর্কিত খবর

টিভিতে

৩০.৩.২৫ (রবিবার)
ফুটবল
লা লিগা, বার্সেলোনা-জিরোনা
সরাসরি, রাত ৮-১৫ মিনিট, জিও সিনেমা
অ্যাথলেতিক বিলবাও-ওসাসুনা
সরাসরি, রাত ১০-৩০ মিনিট, জিও সিনেমা
রিয়াল বেতিস-সেভিয়া
সরাসরি, রাত ১টা, জিও সিনেমা
বুন্দেসলিগা, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড-মেইঞ্জ
সরাসরি, রাত ৯-৩০ মিনিট, টেন ১
এফএ কাপ, বোর্নমাউথ-ম্যানচেস্টার সিটি
সরাসরি, রাত ৯-৩০ মিনিট, টেন ২
৩১.৩.২৫ (সোমবার)
ফুটবল
লা লিগা, সেল্তা ভিগো-লাস পালমাস
সরাসরি, রাত ১টা, জিও সিনেমা
১.৪.২৫ (মঙ্গলবার)
ফুটবল
ইপিএল, আর্সেনাল-ফুলহাম
সরাসরি, রাত ১২-৪৫ মিনিট
স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
নটিংহাম ফরেস্ট-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
সরাসরি, রাত ১টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
২.৪.২৫ (বুধবার)
ফুটবল
ইপিএল, ম্যানচেস্টার সিটি-লিস্টার সিটি
সরাসরি, রাত ১২-৪৫ মিনিট
স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
লিভারপুল-এভারটন
সরাসরি, রাত ১টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
ক্রিকেট
নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান, দ্বিতীয় ওয়ানডে
সরাসরি, ভোর ৪টা, টেন ১
।
টি স্পোর্টস

৩০.৩.২৫ (রবিবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, দিল্লি-হায়দরাবাদ
সরাসরি, বিকেল ৪টা
রাজস্থান-চেন্নাই
সরাসরি, রাত ৮টা
৩১.৩.২৫ (সোমবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, মুম্বাই-কলকাতা
সরাসরি, রাত ৮টা
১.৪.২৫ (মঙ্গলবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, লখনউ-পাঞ্জাব
সরাসরি, রাত ৮টা
২.৪.২৫ (বুধবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, বেঙ্গালুরু-গুজরাট
সরাসরি, রাত ৮টা
।
বিশেষ
অবিশ্বাসের ক্রীড়াঙ্গন
সাইদুজ্জামান

কেউ কাউকে কনফিডেন্সে নিচ্ছেন না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংস্কারের হুংকার দিয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সার্চ কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রত্যেক সদস্য দেশের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের আস্থাভাজন। তেমনটাই হওয়ার কথা।
পেশাগত কারণে সার্চ কমিটির সবার সঙ্গে কমবেশি পরিচয় আছে। কমিটি গঠনের পর তাঁদের মধ্যে যথারীতি ক্রীড়া কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারার রোমাঞ্চ। কিন্তু মাস না গড়াতেই সেই কমিটির একাধিক সদস্য দেখি ফুঁসছেন! কী ব্যাপার? ব্যাপার কিছু না, পুরনো রোগ।
বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আর গোপন নেই।
এটা নজিরবিহীন। অবশ্য অনুমেয়ই ছিল। একটি ফেডারেশনে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন নিয়ে প্রথম মনোমালিন্যের শুরু মন্ত্রণালয় ও সার্চ কমিটির। এরপর কমিটি জমা পড়ে, কিন্তু ঘোষণা হয় না। আবার ঘোষিত কমিটিতে কিছু কাটাছেঁড়া থাকে। সব মিলিয়ে অনেক দিন ধরেই ফুঁসছিল সার্চ কমিটি, যার বিস্ফোরণ ঘটেছে আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে ওলটপালট ঘটিয়ে। এই প্রথম একটা ‘রাউন্ড’ জিতল সার্চ কমিটি। কমিটির তালিকায় রাজীব উদ্দীন আহমেদ ছিলেন না। কিন্তু সরকারিভাবে ঘোষিত অন্তর্বর্তী কমিটিতে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক পদে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সার্চ কমিটির দাবি মেনে রাজীবকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন একজনকে আর্চারির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
এতে কী সমস্যার সমাধান হয়ে গেল? মনে হয় না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে সার্চ কমিটির বিরোধ এখন প্রকাশ্য। মতবিরোধ আর বিরোধ দুটো ভিন্ন জিনিস। মতবিরোধ আলোচনায় চুকিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু ক্রীড়া পরিষদ ও সার্চ কমিটির মধ্যে অবিশ্বাসের যে মেঘ জমেছে, তা সরবার নয়। থেমে থেমে কখনো বৃষ্টি কিংবা ঝড়ও হতে পারে।
তো নতুন ক্রীড়া ব্যবস্থায় আমরা কী পেলাম? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যৎ বলবে। তবে অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন নিয়ে অযথা কালক্ষেপণ এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বকে ‘শুভ সূচনা’ বলা যাবে না। এর মধ্যে আবার শ্যুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের কমিটি ঝুলে আছে। এই ফেডারেশনের অন্তর্বর্তী কমিটি নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বাজারে। আর্চারির পর শ্যুটিংয়ের কমিটি নিয়েও হুলুস্থুল হবে না তো ক্রীড়াঙ্গনে?
তবে আশা করব, যেন সে রকম কিছু না হয়। তবে হতে পারে। কারণ দীর্ঘদিনের চর্চায় সব কিছুর আগে নিজেকে জুড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছে। দেশের সমৃদ্ধি স্রেফ একজনের কারণে—রাজনীতির এমন সস্তা প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। ফেডারেশন কিংবা জেলা ও বিভাগীয় সংস্থার নির্বাহী কমিটিতে নাম থাকলেই পরিচিতি, সেই সুবাদে ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়তি সুবিধা মেলে। আবার কিছু পেলে দিতেও তো হবে। প্রত্যাশীরা সোৎসাহে দেন। কী দেন, কাকে দেন—সেসব উহ্য থাক।
ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কার প্রক্রিয়ায় দারুণ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। যেমন—বটবৃক্ষ হয়ে গেঁড়ে বসা যাবে না ফেডারেশনে। একইভাবে নিয়মিত খেলা আয়োজন না করলে বাদ পড়তে হবে। ঠিক আছে। যদিও অদ্ভুত এক যুক্তিতে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া কমিটিতে সাংবাদিক কোটা রাখা হয়েছে। কমিটিতে ক্রীড়া সাংবাদিক থাকলে নজরদারি ভালো হবে। যদিও একজন ক্রীড়া সাংবাদিকের কাজই ক্রীড়াঙ্গনের সত্যিকারের ছবি তুলে ধরা। বরং সেই তিনি যদি কোনো ক্রীড়া কমিটিতে যুক্ত থাকেন, তা স্পষ্টতই ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’। আর নীতিনির্ধারকরা কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে কমিটির ‘ওয়াচডগ’ হতে পারেন শুধুই একজন ক্রীড়া সাংবাদিক?
যাই হোক, আর্চারি ফেডারেশন দিয়েই শেষ করি। এই ফেডারেশনের যাত্রার ঘোষণা শুনে ক্রীড়াঙ্গনে বলাবলি হচ্ছিল, অনুদান মেরে খাওয়ার জন্য আরেক ‘দোকান’ খোলা হয়েছে! পরে রাজীব উদ্দীন আহমেদ সিটি গ্রুপকে যুক্ত করেন এর পৃষ্ঠপোষকতায়। বাকিটুকু ইতিহাস—রোমান সানা সরাসরি অলিম্পিকে। এসব বিবেচনায় হয়তো টিকে গিয়েছিলেন তিনি। আবার সার্চ কমিটির ক্ষোভের পর রাজীবকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তো কে জিতল? অবিশ্বাস, তাই না?

শেফিল্ড শিল্ড

২৯ বছর পর শেফিল্ড শিল্ডের শিরোপা জিতেছে সাউথ অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় রেকর্ড গড়ে তারা হারিয়েছে কুইন্সল্যান্ডকে। অ্যাডিলেডের ক্যারেন বোল্টন ওভালের ফাইনালে ২৭০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ২৮ রানে তিন উইকেট হারানোর পর অ্যালেক্স কেরির ১০৫ এবং জেসন সাঙ্গার ১২৬* রানের সেঞ্চুরি ৪ উইকেটের জয় এনে দেয় সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে। এপি
।