<p>গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের টঙ্গী এলাকার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে তিন মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়সার আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ১৮ নভেম্বর পালিয়ে ভারত যাওয়ার সময় যশোরের শিকারপুর সীমান্তে কিরণকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরপর অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের মামলায় যশোরে তাকে হাজির করা হয়। আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে গাজীপুরে আনা হয়। সেই থেকে তার রিমান্ড চলছে। টঙ্গীর দুই থানাসহ গাজীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা আছে। এখন পর্যন্ত তাকে ১৮টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে রয়েছেন কিরণ।</p> <p><strong>কে এই কিরণ!</strong></p> <p>বাবা নূর মোহাম্মদ ছিলেন স্কুলের দপ্তরি। ছেলে কিরণ প্রথমে টঙ্গীর একটি কারখানার শ্রমিক। শ্রমিক থেকে টঙ্গী পৌরসভার কমিশনার। এর পর খুলে যায় ভাগ্য। হয়ে যান গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের টঙ্গী এলাকার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিকবার কাউন্সিলর। টাকা ও ক্ষমতার জোরে কাউন্সিলর হয়েও গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে প্রায় পুরো এক মেয়াদ মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ এমনকি নিউইয়র্ক শহরে তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি করেন। সেখানে নাগরিকত্বও পেয়েছেন বলে চাওড় আছে।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে কিরণের রাজনীতির হাতে খড়ি। ২০০০ সালে বর্তমান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান দ্বিতীয় মেয়াদে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কিরণ রাতারাতি আজমত উল্লাহ খানের ঘনিষ্ঠজন হয়ে যান। এরপর পর্যায়ক্রমে টঙ্গী পৌরসভার কমিশনার এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। কমিশনার নির্বাচিত হয়েই কিরণ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ সালের প্রথম নির্বাচনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মান্নান সাময়িক বরখাস্ত হলে টাকার বিনিময়ে প্যানেল মেয়র হয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন কিরণ। ভারপ্রাপ্ত মেয়র নির্বাচিত হয়ে ২০১৫-২০১৮ মাত্র ২৭ মাসেই কিরণ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন। </p> <p>গাজীপুরের টঙ্গীতে তিনটি এবং ভালুকায় ২০০ বিঘা জমিতে একটি শিল্প কারখানা গড়ে তোলেন কিরণ। টঙ্গী ও উত্তরাতে একটি বহুতল বাড়ি, অসংখ্য জমি এবং ফ্লাটে বিনিয়োগ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন পালনের নামে কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তাদের পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন।</p> <p><strong>৪০ বিঘার বিলাসবহুল বাগান বাড়ি</strong></p> <p>বালু নদীর ফোরশোর ও হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে গড়ে তোলা বাগান বাড়িতে এখন কেউ নেই। কিরণ আটকের পর বাড়ির গেটে তালা মেরে পালিয়ে গেছে নিরাপত্তা দল। স্থানীয়ভাবে এই জমির মূল্য ১৬০ কোটি টাকা। </p> <p>স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দুই দিন আগেও লোকজন ছিল। এখন নেই, তালা মেরে চলে গেছে তারা। এই বাড়ির মালিক কিরণ। হিন্দুদের জমি নাম মাত্র মূল্যে ক্রয় করেন কিরণ। একই সঙ্গে বালু নদীর ফোরশোরও দখল করে মাটি ও বালু ভরাট করেন তিনি। এখন এই বাগান বাড়ির আওতায় প্রায় ৪০ বিঘা জমি আছে বলে জানায় স্থানীয়রা।</p> <p>গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পূবাইল ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আরিফউল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র কিরণ নিজ নামে ও তার প্রতিষ্ঠান গ্রিনডট বিল্ডার্সের নামে ২০২১-২০২২ সালে ছয়টি খারিজের মাধ্যমে ৩ দশমিক ২৬ একর জমির মালিক হন। বাকী জমির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান তিনি।</p>