<p>নবীজি (সা.)-এর প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম মেধাবী নারী। গরিব-দুঃখীর প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। তিনি সর্বদা গরিব-দুঃখীকে সহযোগিতা করতে ভালোবাসতেন। বেশি পরিমাণে দান-সদকা করতে পছন্দ করতেন।</p> <p>হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আয়েশা (রা.)-এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক হিসেবে যা কিছু আসত তা জমা না রেখে সদকা করে দিতেন।’  (বুখারি, হাদিস : ৩৫০৫)</p> <p>দান-সদকার প্রতি তাঁর আগ্রহ এতটাই বেশি ছিল যে তাঁর বেশি দান-সদকা নিয়ে মন্তব্য করায় তিনি তাঁর প্রিয় বোনের ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর সঙ্গে অভিমান করে বহুদিন কথা বলেননি।</p> <p>একবার আয়েশা (রা.)-এর কাছে খবর এলো যে তাঁর কোনো একটি জিনিস দান করার ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! হয়তো আয়েশা (রা.) এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন, নয়তো আমি তাকে সম্পদ দানের অযোগ্য ঘোষণা করব। আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই কি সে এ ধরনের কথা বলেছে? লোকেরা বলল, হ্যাঁ।</p> <p>আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করছি যে আমি ইবনে জুুবায়েরের সঙ্গে কখনো কথা বলব না। এ বিচ্ছেদকাল দীর্ঘায়িত হলে ইবনে জুবায়ের (রা.) আয়েশা (রা.)-এর কাছে মধ্যস্থতাকারী পাঠান। কিন্তু আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি কখনো কারো সুপারিশ গ্রহণ করব না এবং আমি আমার শপথও ভঙ্গ করব না। ব্যাপারটি ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর জন্য দীর্ঘায়িত হলে তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ও আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুসের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা দুজন বনু যোহরার লোক ছিলেন।</p> <p>ইবনে জুবায়ের (রা.) তাদের বলেন, তোমাদের দুজনকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, আমাকে তোমরা আয়েশা (রা.)-এর সামনে পৌঁছিয়ে দাও। কেননা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মানত মানা তার জন্য জায়েজ হয়নি। অতএব, মিসওয়ার ও আবদুর রহমান (রা.) চাদর গায়ে জড়িয়ে ইবনে জুবায়ের (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে চললেন। শেষ পর্যন্ত দুজন আয়েশা (রা.)-এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তাঁরা সালাম দিয়ে বলেন, আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আসো। তারা বলেন, হে উম্মুল মুমিনিন, আমরা সবাই কি ভেতরে আসতে পারি? আয়েশা বলেন, হ্যাঁ, সবাই আসো।</p> <p>আয়েশা (রা.) জানতেন না যে তাদের সঙ্গে ইবনে জুবায়ের (রা.)-ও আছেন। তারা ভেতরে প্রবেশ করলে ইবনুজ জুবাইর (রা.) পর্দার ভেতর গিয়ে (তাঁর খালা) আয়েশা (রা.)-কে জড়িয়ে ধরে আল্লাহর দোহাই দিতে লাগলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। মিসওয়ার ও আবদুর রহমানও তাঁকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর সঙ্গে কথা বলতে এবং তার ওজর ও অনুশোচনা গ্রহণ করতে বলেন। তাঁরা দুজন বলেন, আপনি তো জানেন, নবী (সা.) সালাম-কালাম ও দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি দেখা-সাক্ষাৎ ও সালাম-কালাম বন্ধ রাখা জায়েজ নয়।’</p> <p>তারা দুজন যখন এভাবে আয়েশা (রা.)-কে বোঝালেন এবং বারবার এর ক্ষতিকর দিক স্মরণ করিয়ে দিলেন। তখন তিনিও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি (কথা না বলার) মানত ও শপথ করে ফেলেছি এবং অনেক কঠিন মানত। কিন্তু তারা দুজন বরাবর তাকে বোঝাতে থাকেন, যতক্ষণ না তিনি ইবনে জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলেন। অতঃপর আয়েশা (রা.) তাঁর শপথ ভঙ্গের কাফফারা হিসেবে ৪০ জন গোলাম আজাদ করেন। এরপর যখনই এ মানতের কথা তার স্মরণ হতো তখনই তিনি কাঁদতেন, এমনকি তার চোখের পানিতে তার ওড়না ভিজে যেত। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৯৮)</p>