<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল পর্বতসম। কিন্তু জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকারের কার্যক্রমে অগ্রগতি প্রত্যাশিত নয় বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল। এতে যার যার অবস্থান থেকে সবাই প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্য সব কিছু ছাপিয়ে হাসিনা সরকারের পতনের পাঁচ মাস শেষে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো এই দাবিতে সোচ্চার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দিনক্ষণ দেওয়া হয়নি। নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে এক ধরনের চাপে রয়েছে সরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গণ-অভ্যুত্থানের পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় এসেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন এ সরকারের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বহুমাত্রিক। তবে বিগত মাসগুলোতে তাদের যেমন ভালো উদ্যোগ আছে, তেমনি নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকার বলে আসছে, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের কার্যক্রম চলছে। রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, তা বাস্তবে রূপ দিতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। দেশে রিজার্ভ, রেমিট্যান্স বেড়েছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার জনগণকে হতাশ করেছে। সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। জরুরি সংস্কার কার্যক্রমেও অগ্রগতি নেই। নিয়ন্ত্রণে নেই বাজার। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে আসেনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব সরকারকে তেমন বেকায়দায় না ফেলতে পারলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন ঘোলাটে হতে শুরু করেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ৩১ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ ঘোষণার মাধ্যমে সংবিধান বাতিল করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, বিএনপির বিরোধিতার কারণে তা ভেস্তে যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সরকারকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধীরা। এ নিয়ে দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখা না দিলে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। ফলে আগামী কয়েক দিনে ঘোষণাপত্র দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি উদ্যোগ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার ৩৬ দিনের অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালান কর্তৃত্ববাদী শাসক শেখ হাসিনা। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে যেমন প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণে সরকার অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছে বলে মনে করে বিভিন্ন মহল। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে এগিয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার, স্থিতিশীল পরিবেশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করার ক্ষেত্র আরো জোরদার করার কথা বলেছে তারা। এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি বেশি দেওয়া উচিত বলেও মনে করে তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করে দেশকে নির্বাচমুখী করার দাবিও আসছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের জন্য আগামী দুই মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধীদের এক ধরনের বিপরীতমুখী অবস্থান রয়েছে। ফলে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে সরকার যেমন চাপে থাকবে, আবার ঘোষণা করা হলেও সরকারকে বিরোধিতার মুখে পড়তে হতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম এবং জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে সরকারের কার্যক্রম যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে বড় হোতাদের বিচার সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্লেষকরা মনে করেন, গণহত্যাকারী এবং তাদের সমর্থকদের নতুন বাংলাদেশে কী অবস্থান হবে, তা রাজনৈতিক অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, একটি দেশের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাষ্ট্রীয় অনেক কাঠামোয় তার প্রভাব পড়ে। বহু বছর ধরে চলা প্রক্রিয়াগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সরকারেও তাই। সরকার তো কেবল কিছু চেয়ার আর চেহারার পরিবর্তন নয়, সরকার পরিচালনার প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারেই আছে। সে কারণেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। তবে সংস্কার কমিশনগুলোর পরামর্শ দেওয়া এক ব্যাপার, আর তা ফিল্ড লেভেলে বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারা অন্য ব্যাপার। সময়ই বলে দেবে দ্বিতীয়টির ব্যাপারে সরকার আসলে কতটা আন্তরিক ও সৎ। এত বছরের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন পাঁচ মাসের মধ্যে সম্ভব নয়। অযথা পরিবর্তনের দোহাই দিয়ে কেবল পরিবর্তন করা নয়, কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে করা নয়, বরং যথার্থ ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থে যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে সংস্কার আনতে পারলে সেটা সরকারের সফলতা হিসেবে বিবেচিত হবে। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুটিকেই সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে, সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারলেই সফলতা আসত, যা এই মুহূর্তে সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক, সময় সবচেয়ে বড় বিচারক।</span></span></span></span></p>