মসজিদভিত্তিক ইসলামী শিক্ষা, মক্তব ও ফুরকানিয়া মাদরাসা নিয়ে বিশেষ আয়োজন

ইসলামের মৌলিক শিক্ষার প্রসারে ফুরকানিয়া মাদরাসার অবদান

প্রফেসর ড. রফিক আহমদ
প্রফেসর ড. রফিক আহমদ
শেয়ার
ইসলামের মৌলিক শিক্ষার প্রসারে ফুরকানিয়া মাদরাসার অবদান

মুসলমানের ঈমান-আমল, ইবাদত-বন্দেগি ও জীবনধারার সব নির্দেশনার গোড়ায় পবিত্র আল কোরআনুল কারিম। কোরআন মাজিদ মুমিনের প্রথম পাঠ্যগ্রন্থ। সালাত থেকে জীবনপ্রণালী সবখানেই সর্বাগ্রে কোরআন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকে বাদশাহি আমল পর্যন্ত, উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক শাসনকাল থেকে বিশ শতকের সূচনা পর্যন্ত মসজিদভিত্তিক মক্তবে ছিল মুসলমান সন্তানদের বুনিয়াদি শিক্ষার কেন্দ্র।

মুসলমানদের সন্তানরা মসজিদের সাবাহি (সকালবেলার) মক্তবে ঈমান, আমল, আদব, সুরা, কেরাত, মাসআলা-মাসায়েল ও কোরআন তিলাওয়াতের শিক্ষা পেয়ে আসছে। আগেকার তুলনায় এর সংখ্যা কমে এলেও এখনো ধারাটি অব্যাহত আছে।

এই মক্তবের আরেক নাম ফুরকানিয়া মাদরাসা। শুধু বাংলাদেশই নয়, বরং পাক-ভারত উপমহাদেশের সিংহভাগ লোক যে প্রতিষ্ঠান থেকে কোরআন শিক্ষা করে আসে তা হলো ‘মক্তব’ বা ফুরকানিয়া মাদরাসা।

দুই-আড়াই দশক আগেও কোরআন শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ছিল এটি। বয়স্ক যেকোনো শ্রেণির লোক যিনি কোরআন পড়তে পারেন, তাঁদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি কোথায় কোরআন পড়া শিখেছেন? সালাত আদায়ের জন্য ছোট ছোট সুরা কোথায় মুখস্থ করেছেন? সালাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত দোয়া ও জিকিরগুলো কিভাবে শিখেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ৯৫ শতাংশ লোক বলবেন, তাঁরা তাঁদের নিজস্ব এলাকার ফুরকানিয়া মাদরাসা থেকেই এসব শিখেছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ফুরকানিয়া মাদরাসাগুলোর এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।

ফুরকানিয়া মাদরাসায় কোরআনের পাঠ

এসব মাদরাসার সৃষ্টিই হয়েছে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য।

এ পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনার আগে একটি বিষয়ের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার। তা হলো আমাদের মনে রাখা দরকার যে আরব দেশের শিশুদের কোরআন শিক্ষার পদ্ধতি ও অনারব শিশুদের পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রে একই রকম নয়। কারণ আরব শিশুটি মাতৃভাষা আরবি হওয়ার ফলে সে মায়ের কোল থেকেই আধো আধো, ভাঙা ভাঙা আরবি ভাষায়ই কথা বলতে শুরু করে। আস্তে আস্তে সে যখন বড় হতে থাকে এবং লেখাপড়ার জন্য তার হাতেখড়ি দেওয়া হয়, তখন তাকে আরবি বর্ণ, শব্দ ও বাক্য শেখানোর জন্য যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় অনারব শিশুটির জন্য এর ব্যতিক্রম কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করাই স্বাভাবিক। অনারব শিশুদের আরবি বর্ণমালা শিক্ষার আগে কিছু আরবি দোয়া ও জিকির শিক্ষা দেওয়া হয়।
যেমন—কালিমায়ে তায়্যিবাহ, শাহাদত, তাআওউজ, তাসমিয়া প্রভৃতি।

ফুরকানিয়া মাদরাসাগুলোতে কায়েদায়ে বাগদাদিয়াকে অনুসরণ করা হয়ে থাকে; তবে গত দুই-আড়াই দশক থেকে নুরানি কায়েদার প্রচলন বেড়েছে। ছেলে-মেয়েদের বয়স যখন প্রায় পাঁচ-ছয় বছর হয় তখন তাদের ফুরকানিয়ায় পাঠানো হয়। এ সময় তাদের একত্রে পড়ানো হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছাত্রীদের আলাদাভাবে পড়ানোর ব্যবস্থা থাকে। এখানে তাদের আরবি বর্ণমালাগুলো শেখানো হয়। এ জন্য বিশেষ কিছু পদ্ধতি অনুসৃত হয়ে থাকে। পদ্ধতির ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো গবেষকরা পর্যালোচনা করবেন। একটি ইতিবাচক দিক হলো—একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে কয়েকটি শব্দ ভালোভাবে শিখে নিলে বাকি বর্ণ দ্বারা গঠিত শব্দগুলো একই নিয়মে শিক্ষকের সহযোগিতা ছাড়াই নিজে নিজে পড়তে পারে।

অন্যতম নেতিবাচক হলো, কোরআন শেখাতে গিয়ে ছেলে-মেয়েদের এমন কিছু শব্দ শেখানো হচ্ছে, যা কোরআন-হাদিস তো দূরের কথা অনেক শব্দ আরবি ভাষায় খুঁজে পাওয়া যায় না। এতগুলো অনর্থক শব্দের পরিবর্তে অর্থবোধক শব্দ শেখানো হলে পরবর্তী সময় পড়ালেখার ক্ষেত্রে সে উপকৃত হতো।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২৩
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে তারা আত্মীয়-স্বজন অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা হিজরত করেছে তাদেরকে কিছুই দেবে না; তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা : নুর, আয়াত : ২২)

আয়াতে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা ক্ষমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা  বিধান

. সুরার ২২ নম্বর আয়াত দ্বারা আবু বকর (রহ.)-এর মর্যাদা প্রমাণিত হয়।

কেননা তাঁকে মর্যাদা প্রাচুর্যের অধিকারী বলা হয়েছে। মর্যাদায় তাঁর অবস্থান নবীদের পর।

. আয়াত দ্বারা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা এবং অসহায় স্বজনের পাশে থাকার গুরুত্ব প্রমাণিত হয়।

. মানুষ অন্যের সঙ্গে তেমন আচরণ করবে ঠিক যেমন আচরণ নিজের ব্যাপারে পছন্দ করে।

. তাওবা শরয়ি শাস্তি ভোগ করার পর কাউকে দোষারোপ করা, ভর্ত্সনা করা অথবা অন্য কোনো শাস্তির মুখোমুখি করা অনুচিত। তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই ইসলামের শিক্ষা।

. মুমিন কোনো ভালো কাজ ত্যাগ করার শপথ করে ফেললে শপথ পূরণ করবে না। সে শপথ ভেঙে ভালো কাজ করবে এবং কসম ভঙ্গের কাফফারা দেবে।

(তাফসিরে মুনির : /৫১৮)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

আল্লাহর ভয়ে সংযম অবলম্বনের প্রতিদান

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
আল্লাহর ভয়ে সংযম অবলম্বনের প্রতিদান

দুনিয়া মানুষের জন্য পরীক্ষাগার, তাই এখানে মানুষের সামনে রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ, যা তাকে সত্যের পথে দৃঢ় থাকতে বাধা দেয়। মিথ্যার পথে আকর্ষণ করে। লোভ-লালসা তাদের অন্তর্চোখকে অন্ধ করে দিতে চায়। তাই এ পথে চলতে হলে দৃঢ় ঈমান থাকা জরুরি।

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যেকোনো ত্যাগ করার মানসিকতা থাকা জরুরি।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, তুমি যদি আল্লাহর জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করো, তবে তিনি তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন।

(মুসনদে আহমদ, হাদিস : ২১৯৯৬)

সাখাভী (রহ.) বলেন, এই হাদিসের প্রত্যেক বর্ণনাকারী সহিহ। আলবানি (রহ.) বলেন, মুসলিমের শর্তের মানদণ্ডে এই হাদিস সহিহ।

এ বাক্যের মূল বার্তা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিছু ত্যাগ করলে, তিনি তার উত্তম প্রতিদান দেন।

একজন মুসলমান যখন তার প্রবৃত্তির চাহিদা ও কু-প্রবৃত্তির ধোঁকাকে অতিক্রম করে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করে, তখন সে আসলে নিজেকে নফসের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে। এমনকি কোনো বৈধ কাজও যদি কোনো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ত্যাগ করা হয়, যেমন রমজানের রোজার সময় বৈধ পানাহার থেকে বিরত থাকা (অর্থাত্ যা রমজানের বাইরে জায়েজ ছিল), তবে তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় হয়ে যায়।

যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান মেনে চলার জন্য কোনো কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ কখনোই তাকে ব্যর্থ করেন না; বরং তিনি তাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, পক্ষান্তরে যে স্বীয় রবের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং কু-প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার বাসস্থান।

(সুরা : নাজিয়াত, আয়াত : ৪০-৪১)

সুবহানাল্লাহ, এর চেয়ে বড় পুরস্কার ও প্রতিদান একজন মুমিনের জন্য আর কী হতে পারে?

ইসলামে আল্লাহর জন্য আত্মত্যাগের প্রতিদানের বহু উদাহরণ পাওয়া, নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো :

১. দান ও ব্যয়ের মাধ্যমে বরকত লাভ : অর্থ মানুষের খুব প্রিয় জিনিস। যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য অর্থ ব্যয় করে, আল্লাহ তার সম্পদে বরকত দান করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা।

(সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)

২. প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করা : প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর জন্য কাউকে ক্ষমা করতে পারাও অনেক বড় ত্যাগের বিষয়। যার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ মানুষের সম্মান বাড়িয়ে দেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন...। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার রাগ প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংযত থাকে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সৃষ্টিকূলের মধ্য থেকে ডেকে নেবেন এবং তাকে হুরদের মধ্য থেকে তার পছন্দমতো যেকোনো একজনকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৭)

৩. অহংকার ত্যাগ ও বিনয়ী হওয়া : যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অহংকার ত্যাগ করে এবং বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেন। রাসুল (সা.) একই হাদিসে আরো বলেন, ...আর যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হয়, তিনি তার মর্যাদা সমুন্নত করে দেন।

(মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৬)

৪. লোভনীয় বস্তু ত্যাগের প্রতিদান : আল্লাহকে খুশি করার জন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ বিলাসিতা ত্যাগ করতে পারে, তাদের মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বিশেষ সম্মাননা দেবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাআলার প্রতি নম্রতাবশত দুনিয়ার আরাম-আয়েশের পোশাক বা বিলাসিতা ত্যাগ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং ঈমানের পোশাকে ভূষিত করবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮১)

সুবহানাল্লাহ, এক কথায় আল্লাহর জন্য যেকোনো ত্যাগের প্রতিদান আল্লাহ বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন।

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধৈর্য তিন ধরনের হতে পারে :

১. ইবাদতে ধৈর্য : ইবাদতে আন্তরিকতা, ধারাবাহিকতা ও একাগ্রতা বজায় রাখা।

২. পাপ থেকে দূরে থাকার ধৈর্য : বিভিন্ন লোভনীয় পাপের হাতছানি উপেক্ষা করা।

৩. পরীক্ষা-নির্যাতন সহ্য করার ধৈর্য : দুনিয়ার বিভিন্ন কষ্ট ও বিপদের মুখে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করে দিন। আমিন।

মন্তব্য
পর্ব : ১৬

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা আম্বিয়া

এই সুরায়ও তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু শুরুতেই আখিরাতের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর কয়েকজন নবীর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। পরে মক্কার মুশরিকদের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে।

এই সুরায় কিয়ামতের সময় ঘনিয়ে আসার প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এ কিয়ামতের আগে ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। এই সুরার শেষের দিকে মহানবী (সা.)-কে রহমাতুল লিল আলামিন (বিশ্ববাসীর জন্য রহমত) উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১.  কোরআন, কোরআনের আয়াত ও বিধান নিয়ে উপহাস করা হারাম।

এতে মানুষের ঈমান নষ্ট হয়। (আয়াত : ২)

২. কোরআনের ব্যাপারে অমনোযোগী থাকা নিষিদ্ধ। কেননা তা মানুষকে পুরো দ্বিন থেকে উদাসীন করে দেয়। (আয়াত : ৩)

৩.  মহানবী (সা.) মাটির তৈরি রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন।

  (আয়াত : ৭)

৪.  আল্লাহ মুসলমানের সম্মান কোরআনে নিহিত রেখেছেন। (আয়াত : ১০)

৫.  আল্লাহর কোনো সৃষ্টি উপকারহীন নয়। তাই প্রকৃতির বৈচিত্র্য রক্ষা করা আবশ্যক। (আয়াত : ১৬)

৬.  সত্য প্রকাশ করাই মিথ্যা অপসারণের কার্যকর মাধ্যম, তা গোপন করা বা এড়িয়ে যাওয়া নয়। (আয়াত : ১৮)

৭.  ফেরেশতারা নির্দোষ সৃষ্টি।

তাদের পাপ করার যোগ্যতাই নেই। (আয়াত : ২৬)

৮.  মজলিসে বড়দের উপস্থিতিতে আগ বেড়ে কথা বলা অনুচিত এবং মজলিসপ্রধানের বক্তব্যের অপেক্ষা করা উত্তম। (আয়াত : ২৭)

৯.  পানির উৎসগুলো রক্ষা করা অপরিহার্য। কেননা প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় পানি অপরিহার্য। (আয়াত : ৩০)

১০. ত্বরাপ্রবণতা মন্দ স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। (আয়াত : ৩৭)

১১. নবী-রাসুলদের নিয়ে বিদ্রুপ করা সব যুগের অবিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য। তাদের শাস্তি দেওয়াও আল্লাহর চিরায়ত নিয়ম। (আয়াত : ৪১)

১২. মুমিন তার কাজকর্মে কৌশলী হবে। (আয়াত : ৫৭)

১৩. যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক কখনো কখনো মানুষের বিবেকের দ্বার খুলে দেয়। (আয়াত : ৬৪)

১৪. শাম অঞ্চলের তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো : ক. আল্লাহর বরকতপ্রাপ্ত, খ. কিয়ামতের আগে এখানে ঈসা (আ.)
আগমন করবেন, গ. পরকালে এটা হাশরের ময়দান হবে। (আয়াত : ৭১)

১৫. সুসন্তান আল্লাহর অনুগ্রহ ও দান। তাই আল্লাহর কাছে সুসন্তান কামনা করা আবশ্যক। (আয়াত : ৭২)

১৬. কোনো জনপদে পাপ ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে সম্ভব হলে মুমিনের জন্য তা ত্যাগ করা আবশ্যক। (আয়াত : ৭৪)

১৭. বিচারক যথাযথ অনুসন্ধানের পর রায় প্রদানে ভুল করলে তা ক্ষমার যোগ্য। (আয়াত : ৭৮)

১৮. জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় পুত্র পিতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পিতা পুত্রের সিদ্ধান্তকে মূল্যায়ন করবে। (আয়াত : ৭৯)

১৯. আত্মরক্ষার উপকরণ আল্লাহর অনুগ্রহ। মুমিন সাধ্যানুসারে আত্মরক্ষার উপকরণ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৮০)

২০. সন্তান যোগ্য হলে দ্বিনি কাজে পিতার উত্তরাধিকারী হতে পারে। (আয়াত : ৮১)

২১. দোয়ার শিষ্টাচার হলো ভাগ্য ও ভাগ্য নির্ধারক আল্লাহর প্রতি অভিযোগ না করা। (আয়াত : ৮৩)

২২. বিপদ থেকে রক্ষা পেতে দোয়ায়ে ইউনুস পাঠ করা যায়। এটি একটি বহুল পরীক্ষিত আমল। (আয়াত : ৮৭)

২৩. নবী-রাসুল (আ.)-এর তিনটি বৈশিষ্ট্য হলো : ক. সত্ কাজে অগ্রগামী হওয়া, খ. আশা ও ভয় নিয়ে দোয়া করা, গ. আল্লাহর ভয় অন্তরে লালন করা। (আয়াত : ৯০)

২৪. সতীত্ব রক্ষাকারীকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতের বিপুল সম্মান ও পুরস্কার দান করেন। (আয়াত : ৯১)

২৫. স্বজাতির ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞতা নিন্দনীয়। (আয়াত : ১০১)

 

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

মন্তব্য
রমজান ঐতিহ্য

রমজানজুড়ে নাইজেরিয়ায় কোরআনচর্চা

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
শেয়ার
রমজানজুড়ে নাইজেরিয়ায় কোরআনচর্চা

একজন সম্মানিত অতিথির মতোই উষ্ণ আন্তরিকতায় রমজানকে বরণ করা হয় নাইজেরিয়ায়। রমজানের চাঁদ ওঠার পর আনন্দ মাহফিল হয় সেখানে এবং পুণ্য ও বরকতের মাস রমজানকে স্বাগত জানিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বের হয় আনন্দ মিছিল। মাহফিল ও মিছিলে বিশেষ ধর্মীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।

নাইজেরিয়ান মুসলিম সমাজ রমজানের জন্য মানসিক ও বস্তুগত উভয়ভাবে প্রস্তুত হয়ে থাকে।

রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয় নাইজেরিয়ায়। রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে রাখে। সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত হয় আমলের জন্যও। রমজানের পূর্বেই তারা দিনে রোজা ও রাতে তাহাজ্জুদের আমল শুরু করে।
সর্বত্র অপার্থিব প্রশান্তি বিরাজ করে। রমজান নাইজেরিয়ানদের কাছে পুণ্য ও আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় করার মাস। রমজানে প্রত্যেকে আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনের সঙ্গে দেখা করে এবং তাদের উৎসাহিত করে রমজানের ধর্মীয় পবিত্রতা, গাম্ভীর্য ও শিক্ষা মান্য করে চলতে। নাইজেরিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তারাবি আদায় করা হয়।
বেশির ভাগ মসজিদে আসরের পর নসিহত, কোরআন তিলাওয়াত ও কোরআনের তাফসির হয়; কোথাও কোথাও হয় এশার নামাজের পর।

ইফতারের সামান্য আগে নাইজেরিয়ান পরিবারগুলো পরস্পরে মধ্যে ইফতার বিনিময় করে। ইফতার আয়োজনে তারা হুমকোকো নামক পানীয় পছন্দ করে, যা গম ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। ইফতার আয়োজনে স্থানীয় ফলগুলো বেশ জনপ্রিয়। সামান্য ইফতার গ্রহণ করে তারা মাগরিবের নামাজ আদায় করতে যায়।

নামাজ শেষে রাতের খাবার গ্রহণ করে। এ সময়ের আয়োজনে থাকে গোশত, ভাত ও আলু। খাবার শেষে তারা চা পান করে। এ ছাড়া ভুট্টার আটায় তৈরি রুটি, ডিম ভাজা, কলা ইত্যাদিও ইফতারে সময় খেয়ে থাকে সে দেশের মুসলিমরা। নাইজেরিয়ান মুসলিমদের আরেকটি ইফতার সংস্কৃতি হলো, প্রতিবেশী কয়েক ঘরের লোক কোনো বাড়ির আঙ্গিনায় একত্র হয়ে ইফতার করা। এ ছাড়া তাদের কাছে রমজানে আসিদাহ, দাউয়্যাহ, উনজুঝিলুবিয়া নামের খাবারগুলো বেশ জনপ্রিয়।

তারাবির নামাজ আদায় করতে পুরুষরা মসজিদে যায় এবং শিশুরা ঘরে আলাদা জামাত করে। তারাবির নামাজ শেষ করে তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। এটি নাইজেরিয়ান সমাজের সৌন্দর্য। মহিলারা রমজানে হরেক রকম খাবার তৈরি করে। আর যারা ধর্মীয় জ্ঞান রাখে তারা মেয়েদের ইসলামী আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। আবার কোনো কোনো পুরুষ স্ত্রীদের তাদের সঙ্গে মসজিদে নিয়ে যায়। রমজানের শেষাংশে জাকাত ও ফিতরা আদায় করে। নাইজেরিয়ার মুসলিমরা খোলা প্রাঙ্গণে ঈদের নামাজ পড়তে পছন্দ করে।

নাইজেরিয়া একটি মিশ্র ধর্মবিশ্বাসের দেশ। এখানে বিপুলসংখ্যক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বসবাস করে। নাইজেরিয়ার মুসলিমরা তাদেরকেও রমজান আয়োজনে সংযুক্ত করে, বিশেষ করে রমজান মাসে যেসব জনসেবামূলক কাজ করা হয়, তাতে ধর্মের ভিন্নতা বিবেচনা করা হয় না। ইফতার আয়োজনেও ডাকা হয় অমুসলিম প্রতিবেশীদের। মূলত নাইজেরিয়ার মুসলিমরা রমজানকে ধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনেরও একটি মাধ্যম মনে করে।

সূত্র : আফ্রিকা নিউজ ডটকম, হাওজা নিউজ ডটকম

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ