<p>সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্মসূচি থেকে ব্যাকফুটে চলে গেছেন আন্দোলনকারী আমলারা। উপসচিব পদে পদোন্নতিতে পরীক্ষা ও কোটা বণ্টনসহ সংস্কার কমিশনের খসড়া প্রস্তাব ঘিরে দুই দিন আগেও টালমাটাল ছিল জনপ্রশাসন। সংস্কার প্রস্তাব মনঃপূত না হওয়ায় খোদ কমিশনপ্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) পক্ষে দেওয়া হয় ছয় দফা।</p> <p>অন্যদিকে উপসচিব পদে কোটা বাতিল, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে আলাদা না করার দাবিতে কলমবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে প্রশাসন ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’। তবে গত বুধবার রাতে সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তাদের ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে আর তেমন উচ্চবাচ্য করছেন না আন্দোলনকারী আমলারা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অনেকটা নীরব।</p> <p>জানতে চাইলে ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’র সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সচিবালয়ের আগুনের ঘটনায় আমরাও উদ্বিগ্ন। এ ধরনের ঘটনা সবার জন্যই অনাকাঙ্ক্ষিত। তার পরও আমাদের আগের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ৩ জানুয়ারি রাজধানীর কেআইবিতে ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’</p> <p>গত ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে যৌথ প্রতিবাদ সভা করেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। ‘জনপ্রশাসনের সংস্কারকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে যৌথভাবে এই প্রতিবাদসভার আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সভায় বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুয়ীদ ভাইয়ের অপসারণ চাই। সরকার যদি অপসারণ না করে, কিভাবে অপসারণ করতে হবে সেই কৌশল আমাদের জানা আছে।’ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একটা আগাম প্রস্তাব দিয়ে রাখি। আগামী ৪ জানুয়ারি আপনারা যদি সম্মতি দেন আমরা একটা মহাসমাবেশ করতে পারি। যেখানে ৫০০ পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে।’</p> <p>সভায় ছয় দফা পেশ করেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা এক আছি, থাকব। দ্বিতীয়ত, প্রশাসন ক্যাডারের ওপর কোটা আরোপ করতে দেব না। তৃতীয়ত, কমিশন কোনো অযাচিত সুপারিশ করলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। চতুর্থত, প্রশাসনে কোনো পর্যায়ে অন্ধভাবে বহিরাগত কাউকে বসানোর চেষ্টা করা হলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। পঞ্চমত, পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে বঞ্চিত কর্মকর্তাসহ সব ধরনের কর্মকর্তাকে সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবিলম্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ষষ্ঠত, দেশকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রশাসন সারা দেশে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবে।’</p> <p>এরপর ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও সংস্কার কমিশনের প্রধান মুয়ীদ চৌধুরী পদত্যাগ করেননি। এ নিয়ে কমিশনের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তাঁরা কমিশনের প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করছেন। গত বৃহস্পতিবারও প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বিএএসএর লিখিত প্রস্তাব নিয়েছে কমিশন। এরপর দু-তিন দিন পার হলেও আর কোনো কর্মসূচির খবর পাওয়া যায়নি।</p> <p>বরং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও পোস্টে আগামী ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সমাবেশ আয়োজনের খবর প্রচারিত ও শেয়ার করা হচ্ছে মর্মে পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ওই দিন কোনো সভা বা সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়নি। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আইন-কানুন ও সরকারি বিধি-বিধান প্রতিপালন করে নিজেদের ন্যায্য এবং যৌক্তিক দাবি তুলে ধরার বিষয়ে সচেতন রয়েছে।</p> <p>জানতে চাইলে আলটিমেটাম প্রদান ও ৪ জানুয়ারি সমাবেশ করার প্রস্তাবকারী বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’।</p> <p>অন্যদিকে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আলটিমেটাম আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। আমরা ছয় দফা দিয়েছি, সেটার ওপরই  অটল আছি।’</p> <p>কমিশন সূত্র জানায়, খসড়া প্রস্তাব গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ সরকারের শীর্ষমহল। প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আগেই কেন প্রকাশ করা হলো তা নিয়ে বিরক্ত ও বিব্রত উপদেষ্টা পরিষদ। এরই মধ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে সতর্ক করা হয়েছে। তাদের স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে প্রতিবেদন দ্রুত চূড়ান্ত করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে ব্যস্ত কমিশনের সদস্যরা।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের একাধিক সদস্য বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ  প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। আরো অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ মুহূর্তে আমরা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত।’</p> <p> </p>